কলকাতা: তৃণমূলের রাজ্য কমিটির সহ সভাপতি হচ্ছেন শতাব্দী রায়। সহ সভাপতি হচ্ছেন মোয়াজ্জেম হোসেন ও শঙ্কর চক্রবর্তী। বিদ্রোহে ইতি টানতেই পুরস্কৃত করা হল বীরভূমের সাংসদকে, ধারণ রাজনৈতিক মহলের।


এদিন শতাব্দী রায় তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, "দায়িত্ব পাওয়ায় আমি খুব খুশি। আমি মনে করি, আমার দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল। আমি বরাবরই কাজ করে এসেছি। আগামীদিনে আরও ভালভাবে কাজ করতে চাই। আমাকে এই দায়িত্ব দেওয়ায়  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়  ও অভিষেকের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। দলে কী কী সুবিধা-অসুবিধা হচ্ছে, তা জানালে দল তা শোনে, এটাই তার প্রমাণ। হয়ত আগে সঠিক জায়গায় যেতে পারিনি বলেই সমস্যার সমাধান হয়নি।"


দিল্লি যাওয়ার কথা বলেও 'শতাব্দী এক্সপ্রেস' ইউ-টার্ন করেছিল শুক্রবারই। শনিবার সুর আরও নরম করেন বীরভূমের তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়।


আগেই ফেসবুকে নিজের অবস্থান জানানোর কথা বলেছিলেন। সেইমতো এদিন ‘শতাব্দী রায় ফ্যান ক্লাবের’ ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন, তৃণমূল পরিবারের প্রিয় নেতা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার সবিস্তারে আলোচনা হয়েছে। আমি সমস্যার জায়গাগুলো জানিয়েছি। তিনিও শুনেছেন। সমস্যার সামাধান হবে বলে আমি আশাবাদী।


এই সমস্যাগুলি নিয়েই ফেসবুকে প্রথমে সরব হয়েছিলেন অভিনেত্রী-সাংসদ। লিখেছিলেন, বহু কর্মসূচির খবর আমাকে দেওয়া হয় না। না জানালে আমি যাব কী করে? এ নিয়ে আমারও মানসিক কষ্ট হয়। আপনাদের সঙ্গে থাকতে আমার ভাল লাগে। কিন্তু মনে হয় কেউ কেউ চায় না আমি আপনাদের কাছে যাই।


এমনকী, দিল্লি গিয়ে অমিত শাহ-র সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনাও শুক্রবার সকালে উড়িয়ে দেননি বীরভূমের তৃণমূল সাংসদ! বলেছিলেন, ঘরবাড়ি, মিটিং থাকে, স্যান্ডিং কমিটি, বন্ধুবান্ধব থাকে, অস্বাভাবিক কিছু নয়। অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বীরভূমের সাংসদ বলেন, পরিচিতদের সঙ্গে দেখা হতেই পারে। মিটিং করব এমন কোনও ব্যাপার নয়। জানি না, কিছুই ঠিক নেই।


এরপরেই শতাব্দীকে বোঝাতে আসরে নামে তৃণমূল। ফোনে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন সৌগত রায়। অভিনেত্রী সাংসদের বাড়িতে চলে যান কুণাল ঘোষ। শেষে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আধঘণ্টার বৈঠকের পরই ইউ টার্ন করেন শতাব্দী। শনিবার রাতে শতাব্দী জানিয়ে দেন, তিনি তৃণমূলের সঙ্গেই আছেন। সাংসদ বলেন, মমতার জন্য তৃণমূলে আছি। এই লড়াই আমাদের সবার লড়াই। একসঙ্গে লড়াই করতে হবে।


শুধু তাই নয়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করে শতাব্দী লেখেন, যেভাবে তিনি সমস্যা শুনেছেন, আলোচনা করেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন, তাতে আমি নিশ্চিত তরুণ নেতাটি এখন যথেষ্ট দায়িত্বশীল ও পরিণত। নতুন প্রজন্মের এমন নেতার নেতৃত্ব দলকে আরও শক্তিশালী হবে।


ভোটের আগে দলকে একত্র করতে ফেসবুকে শতাব্দীর আহ্বান, এখন সবাই হাতে হাত মিলিয়ে মিলিয়ে লড়াই করার সময়। আসুন, সবাই মমতাদির নেতৃত্বে তৃতীয় তৃণমূল সরকার গঠনের লক্ষ্যে বাংলার স্বার্থে কাজ করি।


যদিও, জল্পনা জিইয়ে রেখেছে বিজেপি। বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ বলেন, ৫-৭ দিনের অপেক্ষা করলেন। মমতার মুখ দেখে কষ্ট হচ্ছে। খুব তাড়াতাড়ি বিজেপিতে জয়েন করবেন। প্রসূন, গৌতম, অপরূপারা আছে। ৭-৮ জন সাংসদ, ৪০ থেকে ৪২ বিধায়ক আসার জন্য তৈরি। চুরিবিদ্যা ভাইপো, দুষ্টুবুদ্ধি প্রশান্ত কিশোর ও ছিচকে চোর কুণাল ঘোষ, এই যদি নেতা হয় তাহলে।


যদিও বিজেপির বক্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল। পরিষদীয় প্রতিমন্ত্রী তাপস রায় বলেন, ও তো আমাদের সঙ্গেই রয়েছএ। একটা ফেসবুক পোস্ট করেছে। সেটা দেখে নিন। ও দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। নেত্রীর কথা শুনে চলে।


এরপর ভোটের আগে শতাব্দী-চিত্রনাট্যে নতুন কোনও মোড় আসে কি না, সেই উত্তর দেবে সময়।