কলকাতা: এবার নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে নালিশ করতে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হতে চলেছে তৃণমূল। 


একাধিক ইস্যুতে আগামীকাল, শুক্রবার কমিশনের কাছে অভিযোগ জানাবে তৃণমূলের প্রতিনিধিদল। পাশাপাশি, কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কাল রাজ্যজুড়ে কালো পতাকা নিয়ে মৌন মিছিল করবে শাসক দল।


রাজ্যে শিয়রে নির্বাচন। বেজে গিয়েছে ভোটের বাদ্যি। এই পরিস্থিতিতেই গতকাল মনোনয়ন দাখিল করতে নন্দীগ্রামে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 


আর সেদিনই সন্ধ্যায় ঘটে যায় বিপত্তি। রানিচকে হরিনাম সঙ্কীর্তনের অনুষ্ঠানে যোগ দেন তৃণমূল নেত্রী। সেখান থেকে ফেরার সময়, বিরুলিয়া বাজারে চোট পান তিনি। 


তার আগের দিন, অর্থাৎ মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ডিজিপির দায়িত্ব থেকে সরানো হল বীরেন্দ্রকে। তাঁকে পাঠানো হল রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের নিরাপত্তা ও নজরদারি সংক্রান্ত পরামর্শদাতা পদে।


 



 


তার আগে এডিজি আইনশৃঙ্খলা পদেও রদবদল করেছিল নির্বাচন কমিশন। এডিজি আইনশৃঙ্খলা তথা বিধানসভা ভোটের নোডাল অফিসার জাভেদ শামিমকে পাঠানো হয় ডিজি দমকল পদে। তাঁর জায়গায় এডিজি আইনশৃঙ্খলা করা হয় জগমোহনকে।


এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলেন করে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় কমিশনের একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষোভ পোষণ করেন। 


তাঁর দাবি, রাজ্যের দুই শীর্ষ পুলিশকর্তাকে কমিশন বদল করার পরই মুখ্যমন্ত্রীর ওপর 'পূর্ব পরিকল্পিত আঘাত' হল। পার্থ বলেন, ‘কমিশন দায়িত্ব নিয়েই এডিজি আইনশৃঙ্খলা ও ডিজিকে বদল করেছে।’ তাঁর প্রশ্ন, ‘কেন কমিশন নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হল?’


এই নিয়ে আগামীকাল, কমিশনে অভিযোগ জানানো হবে বলেও জানিয়ে দেন তিনি। বললেন, ‘কাল দিল্লিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনে তৃণমূল প্রতিনিধি দল যাবে। কমিশনে লিখিত অভিযোগ করবে তৃণমূল।’


পাশাপাশি, কমিশনের নিরপেক্ষতার প্রশ্ন তুলে রাজ্যজুড়ে আগামীকাল প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে শাসক দলের তরফে। পার্থ বলেন, ‘কাল রাজ্যজুড়ে কালো পতাকা নিয়ে মৌন মিছিল করবে তৃণমূল। কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মিছিল হবে।’


 



 


শাসক দলের অভিযোগ, বাংলায় যেভাবে ৮ দফায় ভোট করানো হচ্ছে, তা সঠিক নয়। এছাড়া, পরপর দুই শীর্ষ আধিকারিকের বদলের পর তৃণমূল নেত্রীর উপর হামলা চলছে। সর্বত্র চেষ্টা হচ্ছে তৃণমূল প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের চক্রান্ত হচ্ছে।’


মুখ্যমন্ত্রীর আঘাতকে 'পূর্ব পরিকল্পিত, অভিসন্ধিপূর্ণ' উল্লেখ করে পার্থ জানিয়ে রাখলেন, গোটা বিষয়টার তদন্ত হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি এটা দুর্ঘটনা, কিন্তু অভিসন্ধি ছিল। নন্দীগ্রামে মমতার উপর আঘাত পূর্ব পরিকল্পিত। গোটা ঘটনার তদন্ত করতে হবে।’


তিনি মনে করিয়ে দেন, বাম আমলেও মমতার উপর আঘাত করা হয়েছিল। বললেন, ‘এই ধরনের চেষ্টা বাম আমলেও হয়েছিল। দুষ্কৃতীরা মমতার উপর আঘাত হেনেছে। সেকথা নির্বাচন কমিশনে জানিয়েছি। 


জেড প্লাস নিরাপত্তা ভেদ করে কীভাবে আঘাত পেলেন মমতা? পার্থর মতে, কমিশনের উচিত সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা। তাঁর অভিযোগ, ‘মমতার প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা দৃশ্যত করতে পারেনি কমিশন। সেই কারণেই আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন মমতা।’ 


তিনি আরও যোগ করেন, ‘মমতার আঘাত নিয়ে অপপ্রচার করা হচ্ছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করে মূল ঘটনা চাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’


মমতা আহত হওয়া সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর খোঁজ নেননি। এই নিয়ে উষ্মাপ্রকাশ করেন তৃণমূল মহাসচিব। বললেন, ‘বাংলার ‘মুখ্যমন্ত্রী আহত হয়েছেন অথচ প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খোঁজ নিলেন না। এই বিষয়টির তীব্র নিন্দা করছে তৃণমূল।’