অর্ণব মুখোপাধ্যায়: সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছিল তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীকে।  এবার কি এক ধাপ এগিয়ে নরেন্দ্র মোদির কাঁথির রাজনৈতিক সভায় দেখা যাবে দিব্যেন্দুর বাবা শিশির অধিকারীকে? জল্পনা উস্কে দিলেন খোদ কাঁথির তৃণমূল সাংসদই। 


এবিপি আনন্দকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে অকপট শিশির অধিকারী---


প্রশ্ন - আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় হুইলচেয়ার নিয়ে নন্দীগ্রাম দিবস পালন করেছেন, আপনি কী বলবেন?


উত্তর -  এতো খুব ভাল কথা। ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করছিলাম, উনি দ্রুত ফিরে আসুন। তবে, ওঁর যা হয়েছে, তাতে হুইলচেয়ার মানায় না। এসব করে কোনও লাভ আছে?  উনি তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করছেন। দলকে তৃতীয়বারের জন্য জেতানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু তা বৃথা হবে। নন্দীগ্রামের মানুষ ওঁর সঙ্গে এই বেইমানি করেনি। আমি প্রথম দিন থেকে বলছি। যা কিছু ঘটেছে, তা মমতার নিজের জন্যই ঘটেছে। এসব তো সিনেমা হয়েছে আগে। এই সিনেমা আমরা বহু আগে দেখেছি। এখন নতুন করে না দেখলেও চলবে। 


প্রশ্ন -  লকেটকে আপনি বলেছেন, মমতা চাইছেন শুভেন্দুকে শেষ করতে। এই কথাটা আপনি বিশ্বাস করেন? 


উত্তর  - এ তো ঘটনা। তাঁর নিজের কেন্দ্র ভবানীপুর পড়ে রয়েছে। তিনি এখানে আসবেন কেন? দীর্ঘদিন ধরে নন্দীগ্রামে লড়াই করছে শুভেন্দু। নন্দীগ্রামে অন্য রাজনীতি নেই। এখানে ওয়ান-সাইডেড গেম হবে। শুভেন্দুর পক্ষেই হবে। আজ যে বিভাজন তিনি (মমতা) তৈরি করলেন এখানে এসে, এতে বাম-বিরোধী শক্তির ক্ষতি হবে। 


প্রশ্ন - অভিষেকের কারণেই কি মমতা এমনটা করলেন?


উত্তর - একেবারেই। এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। 


প্রশ্ন - ২৪ তারিখ প্রধানমন্ত্রী কাঁথিতে আসছেন। আপনি উপস্থিত থাকছেন? 


উত্তর -  ওরা বললে নিশ্চয় থাকব। কেন থাকব না? মোদির কাছে যাওয়া বা না যাওয়া কোনও প্রশ্নই নয়। যদি ডাকে নিশ্চয় যাব। ছেলেরা অনুমতি দিলে যাব। উন্নয়নের প্রশ্নে যেতেই পারি।


প্রশ্ন -  বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য আবেদন করেছেন, শিশিরবাবু আপনার ঘরে বসে থাকার সময় নেই। চলে আসুন...


উত্তর -  আমি ঘরে বসে নেই। ডাক্তার মানা করেছে। ছেলেরাও চাইছে না। তাছাড়া, আমি যাতে না বেরোতে পারি, তার জন্য সব ব্যবস্থা করে দিয়েছে আমার দল। 


প্রশ্ন -  বাবার সঙ্গে ছেলের সম্পর্ক তো পারিবারিক। তাকে কি আবেদন করবেন..


উত্তর - মেদিনীপুরের মাটি বড় শক্ত মাটি। কলকাতা-দিল্লি থেকে উস্কে দিয়ে কোনও লাভ হবে না। 


প্রশ্ন - প্রধানমন্ত্রীর সভায় দিব্যেন্দুও থাকবেন?


উত্তর- সেটা ওর ব্যাপার। সিদ্ধান্ত ওই নেবে। আমি শুধু এটা জানি, যেভাবে শুভেন্দুকে আক্রমণ করা হচ্ছে, বাবা হিসেবে আমার উচিত ওকে রক্ষা করার। যতটা শক্তি প্রয়োগ করার আমি করব। 


প্রশ্ন - দলবদল করবেন? 


উত্তর -  চাইলে এখুনি ছেড়ে দিতে পারি। এক সেকেন্ডও লাগবে না। নেত্রী খুব ভাল করে জানেন, আমার কাছে আমার ছেলে কি! তবে, যেদিন বাংলার বড়বাবু এসেছিলেন, আমি সেদিন বেরিয়েছিলাম। আওয়াজটা শুনেছিলাম। যাচ্ছিলাম। কয়েকজন শুভাকাঙ্খী দেখতে পেয়ে যান। আমি সেদিন প্যান্ডেলেই উঠে প্রশ্ন করতাম, কার বাপকে ডাকছে! আমার সেই সৎ সাহস আছে। সেইদিনিই পেরেক মারা হয়ে গিয়েছে।  অভিমান দিয়ে আমরা মঙ্গলকামনা করি।  ও তো আমার ছেলের চেয়েও ছোট। আমি ওর মঙ্গলকামনা করি। কেন অমঙ্গল চাইব? কিন্তু, এসব দম্ভ-অহঙ্কার এখানে না করাই ভাল। জীবনভর সাংসদ-বিধায়ক তৈরি করেছি। পঞ্চায়েত আর না বলাই ভাল। যারা ভোট দিতে দিল না, তারা আজকে অনেকেই প্রার্থী হয়েছে। কী করছে আমি জানি। জীবনে অনেক দেখেছি। দেখতে চাইছি, হুইলচেয়ার কোনদিকে গড়ায়। 


প্রশ্ন - ২৪ তারিখ কি শিশির-শুভেন্দুকে পাশাপাশি দেখা যাবে? 


উত্তর- হতে পারে। যদি হয় হবে। এখনই বলতে পারব না।