সন্দীপ সরকার, রণজিৎ সাউ, সৌভিক মজুমদার, পার্থপ্রতিম ঘোষ, কলকাতা: ভ্যাকসিন চুরি বিতর্কের মধ্যে এবার কোভিশিল্ডের সরবরাহকারী ভ্যানে জিপিএস লাগানোর সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের। স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, ৫০ টি ভ্যানে জিপিএস লাগিয়ে করা হবে নজরদারি। আগামী সপ্তাহেই রাজ্যে আসছে আনুমানিক ৭ লক্ষ ভ্যাকসিন।


করোনা ভ্যাকসিন নিয়েও তুঙ্গে শাসক-বিরোধী তরজা। রাজ্যে প্রয়োজনের তুলনায় কম টিকা পাঠিয়েছে কেন্দ্র। এই অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাল্টা তৃণমূলের বিরুদ্ধে টিকা চুরির অভিযোগ করেছে বিজেপি। এই প্রেক্ষিতে এবার করোনার টিকা সরবরাহকারী ভ্যানের গতিবিধির উপর নজরদারি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।

স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর,  বিমানবন্দর থেকে বাগবাজারের ভ্যাকসিন স্টোর হয়ে ভ্যাকসিন সরবরাহের সময় করা হবে নজরদারি। ভ্যাকসিন বহনকারী ৫০টি ভ্যানে বসানো হবে জিপিএস। ইতিমধ্যেই কয়েকটি ভ্যানে জিপিএস বসানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর।

নবান্ন সূত্রে খবর, শনিবার এরাজ্যে ৬ লক্ষ ভ্যাকসিন পাঠিয়েছে কেন্দ্র। স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, আগামী সপ্তাহেই দ্বিতীয় দফায় পুণে থেকে রাজ্যে আসছে করোনা ভ্যাকসিন ‘কোভিশিল্ড’। আনুমানিক ৭ লক্ষ ভ্যাকসিন আসার সম্ভাবনা। তবে ঠিক কবে বা কত পরিমাণ ভ্যাকসিন আসবে কেন্দ্রের তরফে নির্দিষ্টভাবে জানানো হয়নি।

শনিবার রাজ্যে ২০৭টি কেন্দ্রে করোনার টিকাকরণ হয়। রবিবার পশ্চিম বর্ধমানের পানাগড়ে সেনা হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীদের দেওয়া হয় করোনা টিকা। সূত্রের খবর, চিকিৎসক, নার্স মিলিয়ে ৫০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়া হয়।

করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শনিবার দুনিয়ার সর্ববৃহৎ টিকাকরণ কর্মসূচির সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্পষ্ট করে দেন, প্রথম দফায় চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও সামনের সারির করোনা যোদ্ধারাই পাবেন ভ্যাকসিন। দ্বিতীয় পর্যায়ে, পঞ্চাশোর্ধ এবং কোমরবিডিটি রয়েছে এমন ২৭ কোটি মানুষকে ভ্যাকিসন দেওয়ার কথা। কোভিডের হানার পর থেকে দিনরাত এক করে পরিশ্রম করে চলেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। সারা দেশের মতো এরাজ্যেও শনিবার করোনার টিকা স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের জন্যই নির্দিষ্ট ছিল।

শনিবার স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য টিকাকরণ শুরু হলেও, বেশ কয়েকজন তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিকে দেখা যায় ভ্যাকসিন নিতে। তাঁদের তালিকাটা বেশ লম্বা। শনিবার করণদিঘি হাসপাতালে টিকাকরণ শুরু হয় স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক মনোদেব সিংহকে দিয়ে। কাটোয়ার তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ও নেন ভ্যাকসিন। ভাতারের তৃণমূল বিধায়ক সুভাষ মণ্ডল ও ভাতারেরই প্রাক্তন বিধায়ক বনমালী হাজরা লাইন দিয়ে ভ্যাকসিন নেন। টিকা নেন ব্যারাকপুর পুরসভার প্রশাসক তথা তৃণমূল নেতা উত্তম দাস। বিধাননগর পুরসভা প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য প্রণয় রায় ও রাজেশ চিড়িমার এবং কাঁথি ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রদীপ গায়েন। যা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। কিন্তু করোনাযোদ্ধাদের পিছনে ফেলে শাসক দলের জনপ্রতিনিধিদের কীভাবে নিলেন ভ্যাকসিন? উঠেছে প্রশ্ন।

বিতর্কের মুখে পড়ে ভ্যাকসিন নিয়ে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের সাফাই, তাঁরা করোনাকালে মানুষের পাশে ছিলেন। হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য ভ্যাকসিন বলেছে দাবি প্রত্যেকের। ভ্যাকসিন নিয়ে নিয়ম ভাঙার অভিযোগে শাসক দলের দিকে তীব্র কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে বিজেপি। পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূল। বিরোধীদের অভিযোগ, সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করে তৃণমূল নেতারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন। টিকা নেওয়ায় দলীয় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকার সমালোচনা করে বিজেপিক পাল্টা কটাক্ষ করেছে শাসক দল। সব মিলিয়ে শনিবারের টিকাকরণে জনপ্রতিনিধিদের যোগ ঘিরে বিতর্কের জল গড়াল অনেক দূর।