কলকাতা: মেক্সিকো শহরের একবারে দক্ষিণে রয়েছে সবুজে ঘেরা একটি দ্বীপ। সবুজের সমারহ একেবারেই নয়নাভিরাম। কিছুটা দৃষ্টি মেললেই দেখা যায় দ্বীপটি বেশ আলো-ছায়া মাখা। অথচ দ্বীপে পা রাখলেই যেন এক অজানা আতঙ্ক গ্রাস করতে ছুটে আসে। ভরদুপুরেও এই দ্বীপ যেন হয়ে ওঠে অশরীরিদের আখড়া। কারণ দ্বীপে ঢুকলেই যেন গা ছমছমিয়ে ওঠে। এই দ্বীপের নামই হয়ে গিয়েছে ‘দ্য আইল্যান্ড অব ডলস’। সব গাছ থেকে ঝুলে রয়েছে ছোট-বড় এমন নানা চেহারার পুতুল।
যদিও এই পুরোটাই শোনা কথা। দ্বীপটি ঘিরে ছড়িয়ে আছে নানা কাহিনী শোনা যায়। কথিত আছে, এই দ্বীপে পুতুল নিয়ে খেলছিলো তিন মেক্সিকান শিশু। খেলার সময়ে হঠাৎ একটি শিশু উধাও হয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর পাশের একটি খালে সেই শিশুটির মৃতদেহ পাওয়া যায়। সেই থেকে সাধারণ মানুষের কাছে এই দ্বীপটি হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর এক দ্বীপ। সবুজে ঘেরা দ্বীপ নিয়ে তৈরি হয় নানা অজানা কাহিনী।
কিন্তু এই দ্বীপটিতে পুতুল রাখার কাজ কে করেছিলেন?
জানা যায় ডন জুলিয়ান সান্তানা বারেরা নামের এক ব্যক্তি দ্বীপটির তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। শিশুটির মৃত্যুর পর পরই তিনি ওই দ্বীপমধ্যস্থ খালে একটি ভাসমান পুতুল দেখতে পান। তাঁর মনে হয়েছিল হয়ত মৃত শিশুটিই ভেসে এসেছে। শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সেই পুতুলটিকে তিনি গাছে বেঁধে ঝুলিয়ে দেন। সেই শুরু। এরপর থেকেই তিনি গাছে নানা ধরনের পুতুল ঝুলিয়ে রাখতে থাকেন। সমাজ থেকে নিজেকে আলাদা করে নিয়ে তিনি থাকতে শুরু করেন এই নির্জন দ্বীপে।
যদিও অনেকের মতে জুলিয়ান যেন কোনও অদৃশ্য শক্তির মাধ্যমে চালিত হতে শুরু করেছিলেন। সারা দিনই বাচ্চা মেয়ের ফিসফিস শুনতে পেতে শুরু করেন তিনি, এমনটাই কথিত রয়েছে। জীবনের বাকি ৫০টি বছর ওই দ্বীপেই কাটান জুলিয়ান। শুরু তাই নয় বিভিন্ন জায়গা থেকে এমন সব নানা পরিত্যক্ত পুতুল তুলে এনে দ্বীপের গাছগুলিতে ঝোলাতে শুরু করেন তিনি। কোনও পুতুল মুণ্ডহীন, কোনটির আবার চোখ ওপরানো, কারও নেঅ হাত-পা।
আশ্চর্যজনকভাবে ৫০ বছর পর জুলিয়ানকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় সেখানেই, যেখানে মেয়েটি ডুবে গিয়েছিল। জুলিয়ানের পরিবার অবশ্য পরবর্তীকালে এগুলো অস্বীকার করে। কিন্তু পুতুলদ্বীপের রহস্য আজও অজানা। ১৯৯০ সালে এই দ্বীপটিকে ‘ন্যাশনাল হেরিটেজ’ ঘোষণা করেছে মেক্সিকান সরকার। মানুষের ভয় দূর করতেই দ্বীপটিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে পর্যটন এলাকা বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
তবে এখনও কি সেখানেই ঘুরে বেড়ায় অশরীরিরা? কিংবা জুলিয়ান নিজেও? না কি পুরো ব্যাপারটাই মানব মনের কল্পনা? কল্পনার রহস্য ঘেরা এই দ্বীপ এখনও এমন নানা প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে।