নয়াদিল্লি: আমজনতার যাতায়াতের অসুবিধার দিকটি বিবেচনা করে শাহিনবাগের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধী প্রতিবাদ-অবস্থান অন্যত্র সরানো যায় কিনা, ভেবে দেখার কথা বলল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত বলল, গণতন্ত্রে প্রতিবাদ জানানোর মৌলিক অধিকার আছে, কিন্তু তা বলে রাস্তা আটকানো উচিত নয়।
বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কউল ও বিচারপতি কে এম জোসেফের দুই সদস্যের সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ আজ শাহিনবাগের অবস্থানকারীদের ওখান থেকে তুলে দেওয়ার দাবিতে পেশ হওয়া পিটিশনের শুনানিতে বলেছে, একটা ভারসাম্য থাকা উচিত। নয়তো নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে। ওই পিটিশনে বলা হয়েছে, শাহিনবাগে লোকজন রাস্তা জুড়ে বসে থাকায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। এদিন শুনানির শুরুতে বেঞ্চ মন্তব্য করেন, ওঁদের প্রতিবাদ করা উচিত কিনা, সেটা প্রশ্ন নয়। রাস্তার মতো স্থান প্রতিবাদের ক্ষেত্র হতে পারে না। বিচারপতি কউল বলেন, গণতন্ত্র মতামত প্রকাশের ওপর চলে। কিন্তু তারও সীমারেখা, পরিধি আছে। ওঁরা প্রতিবাদ করতে পারেন, সুপ্রিম কোর্টের (সিএএ) রায়ের জন্য তাঁদের অপেক্ষারও প্রয়োজন নেই। কিন্তু প্রশ্ন হল, রাস্তা কি প্রতিবাদের জায়গা?
আইনজীবী অমিত সাহনি ও বিজেপি নেতা নন্দকিশোর গর্গ, এই দুজন সুপ্রিম কোর্টে দুটি পিটিশন দিয়ে আবেদন করেছেন, শাহিনবাগ- কালিন্দি কুঞ্জ এলাকায় রাস্তা অবরোধ বন্ধ করতে প্রতিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হোক। গত সপ্তাহে ভীম আর্মির প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদও এই মামলার পক্ষ হতে আদালতে আবেদন করেন।
বিচারপতি কউল বলেন, আমরা বলছি না, নিজেদের অভাব-অভিযোগের কথা তোলার অধিকার মানুষের নেই। প্রশ্ন হল, কোথায় প্রতিবাদ করা যাবে? কারণ আজকে রাস্তায় বসে এই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-অবস্থান চলতে থাকলে কাল ফের অবস্থান-ধরনা হতে পারে আরেকটা আইনের বিরুদ্ধে।
শীর্ষ আদালত দুজন সিনিয়র আইনজীবীকে দুমাসের ওপর শাহিনবাগে অবস্থান চালিয়ে যাওয়া লোকজনের সঙ্গে কথা বলার ভার দিয়েছে। এঁরা হলেন সঞ্জয় হেগড়ে, সাধনা রামচন্দ্রন। তাঁরা অবস্থানকারীদের অন্যত্র উঠে যাওয়ার জন্য বোঝাবেন যাতে রাস্তার রুট বদল, অবরোধের জেরে যাত্রীদের সমস্যায় পড়তে না হয়। এব্যাপারে ওই দুজনকে সাহায্য করবেন প্রাক্তন প্রধান তথ্য কমিশনার ওয়াজাত হবিবুল্লাহ।
সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, প্রতিবাদের অধিকার মৌলিক অধিকার। তাহলে রাস্তা অবরোধ না করে কোন বিকল্প জায়গায় ওঁরা প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে পারবেন? দিল্লি পুলিশের আইনজীবী তখন বলেন, ওঁরা একটা জায়গা বাছাই করুন।
শাহিনবাগের আশপাশ পুলিশ ব্যারিকেড করে ঘিরে দেওয়ায় তাঁদের প্রতিদিন প্রচুর সময় লাগবে, ক্লান্তি, কষ্ট বাড়ছে বলে ক্ষোভ জানিয়েছেন সাধারণ লোকজন। ঘনঘন ট্রাফিক জ্যামের জন্য কেনাকাটা, ব্যাবসা মার খাচ্ছে, লোকসান হচ্ছে বলে সরকারের কাছে অনুযোগ করেছেন ব্যাবসায়ীরা। এই প্রেক্ষাপটে শীর্ষ আদালত বলেছে, আমাদের উদ্বেগ, সবাই যদি রাস্তা আটকায়, তবে লোক কোথায় যাবে!
অবস্থানকারীদের আইনজীবীকে শীর্ষ আদালত বলে, ওঁরা আন্দোলন চালিয়ে যেতেই পারেন, তবে প্রতিদিন অগণিত মানুষের ব্যবহার করা রাস্তায় নয়। আইনজীবী বলেন, আমায় সময় দিন, আমরা করব।