নয়াদিল্লি: ‘রামসেতু’ নিয়ে (Ram Setu) সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court)  প্রশ্নের মুখে পড়ল কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্র আদৌ ‘রামসেতু’কে ন্যাশনাল হেরিটেজ ঘোষণা করতে আগ্রহী কিনা জানতে আদালতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন প্রাক্তন রাজ্যসভা সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী (Subramanian Swamy)। তা নিয়ে সরাসরি উত্তর দেওয়ার পরিবর্তে কেন্দ্র বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে বলে মত সুপ্রিম কোর্টের। তাই চার সপ্তাহের সময়সীমা বেঁধে দিল শীর্ষ আদালত। তার মধ্যে কেন্দ্রকে অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।


চার সপ্তাহের সময়সীমা বেঁধে দিল শীর্ষ আদালত


বৃহস্পতিবার আদালতে সওয়াল-জবাব চলাকালীন স্বামীর আইনজীবী জানান, কেন্দ্রীয় সরকার আদৌ ‘রামসেতু’কে ন্যাশনাল হেরিটেজ ঘোষণা করতে চায়, না, চায় না, সেইটুকুই জানতে চান তাঁরা। এর জবাবে সরকারি আইনজীবী জানান, উত্তরপত্র প্রস্তুত রয়েছে। শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের অনুমোদন পাওয়া বাকি। তাতেই প্রধান বিচারপতি ডিওয়ই চন্দ্রচূড় প্রশ্ন তোলেন যে, সরাসরি জবাব না দিয়ে, কেন বিষয়টিকে দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে? সরাসরি হ্য়াঁ, বা না বলে দেওয়ার পরিবর্তকেন জবাব এড়াচ্ছে কেন্দ্র, প্রশ্ন তোলেন তিনি।


এই মামলার শুনানিতে আগেই স্থগিতাদেশের আর্জি জানিয়েছেল কেন্দ্রীয় সরকার। তবে বৃহস্পতিবার জবাবদিহি করতে কেন্দ্রকে চার সপ্তাহের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে আদালত। কেন্দ্রের তরফে আদালতে জবাব জমা পড়লে, তার দু’সপ্তাহের মধ্যে নিজের মতামত জানাতে হবে স্বামীকেও।


কোনও সৌধকে ন্যাশনাল হেরিটেজ ঘোষণা করার ক্ষেত্রে আদৌ কেন্দ্রের কোনও কার্যনির্বাহী নীতি রয়েছে কিনা, এর আগে শুনানি চলাকালীন সরকারের কাছে জানতে চায় আদালত। 


আরও পড়ুন: Suvendu Adhikari: চাকরিপ্রার্থীকে কামড়ে দেওয়া পুলিশকর্মী তাঁর নবান্ন অভিযানেও ছিলেন, দাবি শুভেন্দুর


যে ‘রামসেতু’কে ঘিরে বিতর্ক, সেটি ‘আদম সেতু’ হিসেবেও পরিচিত। তামিলনাড়ুর দক্ষিণ-পূর্বের রামেশ্বরম দ্বীপ এবং শ্রীলঙ্কার উত্তর-পশ্চিম উপকূলের মান্নর দ্বীপের মধ্যে  চুনাপাথরের শৃঙ্খলকেই ‘রামসেতু’ বলে উল্লেখ করা হয়। এর সঙ্গে ‘রামায়ণ’-এর সংযোগ টানেন কেউ কেউ। 


কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ প্রথম সরকারের আমলে তামিলনাড়ু এবং শ্রীলঙ্কা উপকূলের মধ্যবর্তী সমুদ্রের ওই অগভীর জায়গায় জাহাজপথ গড়ে তোলার প্রকল্প গৃহীত হয়। তার আওতায়, ৮৩ কিলোমিটার দীর্ঘ জলের চ্যানেল গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন সরকার।  কিন্তু ওই প্রকল্পে 'রামসেতু'র ক্ষতি হতে পারে দাবি করেন স্বামী। চুনাপাথরের ওই শৃঙ্খলকে 'রামসেতু' বলে দাবি করে, সেটিকে ন্যাশনাল হেরিটেজ ঘোষণা করার দাবি জানান তিনি। সেই মামলা আদালতে পৌঁছলে ২০০৭ সালে সরকারি প্রকল্পে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। 


বেশ কয়েক বছর ধরেই 'রামসেতু' নিয়ে বিতর্ক



তার পর ২০১৪ সালে ক্ষমতায় রদবদল ঘটে। ইউপিএ-র জায়গায় ক্ষমতায় আসে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার। আর্থ-সামাজিক অসুবিধার জন্য পরে ওই প্রকল্প থেকে সরে আসে তারা। বরং  'দেশের স্বার্থে' 'রামসেতু'র ক্ষতিসাধন না করে প্রকল্পকে বিকল্প স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা জানায়। গোড়া থেকেই ওই 'সেতুসমুদ্রম' প্রকল্পের বিরোধিতা করে আসছিল কিছু রাজনৈতিক দল, হিন্দুত্ববাদী ধর্মীয় সংগঠন এবং পরিবেশ কর্মীরাও।