নয়াদিল্লি: আবগারি দুর্নীতি মামলায় জামিন পেলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। গ্রেফতারির প্রায় ছয় মাস পর তিহাড় জেল থেকে বেরিয়ে এলেন তিনি। আর সেই জামিন মঞ্জুর করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (CBI)-কে 'খাঁচাবন্দি তোতা' কটাক্ষে বিদ্ধ করল দেশের শীর্ষ আদালত। এর আগে, UPA জমানায় আদালত CBI-এর উদ্দেশে একই মন্তব্য করেছিল। সেই নিয়ে কার্যত ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বিজেপি। তাই শুক্রবার আদালতের এই মন্তব্যে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি নরেন্দ্র মোদির আমলেও CBI খাঁচাবন্দি তোতা হয়ে রয়েছে? (Supreme Court on CBI)


আবগারি দুর্নীতি মামলায় ২১ মার্চ অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করে ED. ১০ মে লোকসভা ভোটের মুখে তাঁর ২১ দিনের অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করে সুপ্রিম কোর্ট। এরপর জেলে ফিরে যান কেজরিওয়াল। ২০ জুন দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালত কেজরিওয়ালের জামিন মঞ্জুর করে। কিন্তু জামিনের বিরোধিতা করে দিল্লি হাইকোর্টে চলে যায় ED. ২১ জুন ED-র দাবি মেনে জামিনে স্থগিতাদেশ দেয় হাইকোর্ট। (Arvind Kejriwal)

এর পর হঠাৎই ২৬ জুন তিহাড় জেলে গিয়ে কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করে CBI. ১২ জুলাই ED-র মামলায় সুপ্রিম কোর্টে জামিন পেলেও, CBI-এর মামলা থাকায় জেল থেকে বেরোতে পারেননি কেজরিওয়াল। শুক্রবার সেই নিয়েই প্রশ্ন তোলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়া।  তোলেন, ২০২৩ সালের মার্চ মাসে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও, কেজরিওয়ালকে গ্রেফতারের প্রয়োজন আছে বলে করেনি CBI. কিন্তু ED-র মামলায় হাইকোর্ট জামিনের ওপর স্থগিতাদেশ দিতেই CBI সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং কেজরিওয়ালকে হেফাজতে নেয়। অথচ, ২২ মাস তারা এই প্রয়োজন অনুভবই করেনি। তাই CBI-এর এই পদক্ষেপের সময় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি ভুঁইয়া। জানান, ED-র মামলায় কেজরিওয়াল যাতে জামিন না পান, সেজন্যই তাঁকে গ্রেফতার করে CBI. 


এর পর, CBI সম্পর্কে অত্যন্ত কড়া মন্তব্য করেন বিচারপতি ভুঁইয়া। নির্দেশনামায় লেখেন, 'গণতন্ত্রে আইনের শাসন অত্য়ন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সিজারের স্ত্রীর মতোই তদন্তকারী সংস্থাকেও সবসময় সন্দেহের ঊর্ধ্বে থাকতে হয়। বেশিদিন আগের কথা নয়, যখন এই আদালত CBI-কে 'খাঁচাবন্দি তোতা'র সঙ্গে তুলনা করেছিল। CBI-কে এই ভাবমূর্তি থেকে বেরোতে হবে। CBI-এর ভাবমূর্তি খাঁচা থেকে মুক্ত তোতা'র মতো হওয়া উচিত। তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকা যে সবসময় নিরপেক্ষ হওয়া উচিত তা সিবিআইকে মনে করিয়ে দেন বিচারপতি।

২০১৩ সালে UPA জমানায়, কয়লা কেলেঙ্কারির মামলায় CBI-কে 'খাঁচাবন্দি তোতা' বলে ভর্ৎসনা করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আর এম লোধা, যাকে হাতিয়ার করে তদানীন্তন UPA  সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল গোটা বিজেপি শিবির। এর পরের বছরই কংগ্রেসকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসে মোদি সরকার। কিন্তু মোদি সরকারের বিরুদ্ধেও বারবার অভিযোগ উঠেছে ED-CBI-আয়কর দফতরের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগানোর। সেই আবহে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির কেজরিওয়াল মামলায় কড়া পর্যবেক্ষণ নিঃসন্দেহে মোদি সরকারের কাছে অস্বস্তির।

তবে বিচারপতি ভুঁইয়া কেজরিওয়ালের গ্রেফতারি নিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থার সমালোচনা করলেও, সুপ্রিম কোর্টের আর এক বিচারপতি সূর্যকান্ত এ ব্য়াপারে ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, "হেফাজতে থাকা কোনও ব্যক্তিকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা নেই। আমরা দেখছি, CBI তাদের আবেদনেই জানিয়েছে, কেন তারা মনে করছে এই গ্রেফতারি প্রয়োজন। ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪১A (৩) ধারা লঙ্ঘন করা হয়নি।"