নয়াদিল্লি: মায়ের পরিচয়ের ভিত্তিতে মেয়েকে তফসিলি জাতির শংসাপত্র পাওয়ার অধিকারী বলে জানাল সুপ্রিম কোর্ট। মেয়েটির বাবা তফসিলি জাতি নন। কিন্তু মায়ের পরিচয়ই এক্ষেত্রে যথেষ্ট বলে জানাল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এর আগে মাদ্রাজ হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল, তাতে হস্তক্ষেপ করা হয়নি। জাতি শংসাপত্র নিয়ে বিস্তর ওজর-আপত্তি রয়েছে। কিন্তু তার জন্য মেয়েটির শিক্ষায় যাতে কোনও বাধা না আসে, তার উপরই জোর দিয়েছে আদালত। (Supreme Court on SC Certificate)

Continues below advertisement

গত ৮ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির বেঞ্চ এই রায় দিয়েছে। শুনানি চলাকালীন CJI প্রশ্ন তোলেন, “সময় পাল্টাচ্ছে। মায়ের জাত কেন অনুসৃত হবে না?” এই প্রথম এমন কোনও বিষয় নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করলেন CJI সূর্যকান্ত।  আদালতের এই রায়ে আইনি বিবাদের নিষ্পত্তি না হলেও, বংশপরিচয়ের নিরিখে, সামাজিক পরিবেশের নিরিখে জাতপাত সংক্রান্ত যত মামলা রয়েছে, তাতে নতুন দিশা মিলল। (Supreme Court)

 যে মামলায় এই নির্দেশ দিল আদালত, সেটি নতুন কোনও মামলা নয়। পুদুচ্চেরীর বাসিন্দা এক মহিলা নিজের দুই মেয়ে ও এক ছেলের তফসিলি জাতি শংসাপত্র বানানোর জন্য আবেদন জানান তহসিলদারকে। তাঁর যুক্তি ছিল, বিয়ের পর থেকে তাঁর বাপের বাড়িতেই রয়েছেন স্বামী। ওই মহিলা নিজেকে ‘আদি দ্রাবিড়’ সম্প্রদায়ের মানুষ বলে পরিচয় দেন। মাদ্রাজ হাইকোর্ট থেকে সেই মামলা এসে পৌঁছয় শীর্ষ আদালতে। আর তাতেই মহিলার পরিচয়ের ভিত্তিতেই তাঁর মেয়ের জাতি শংসাপত্র তৈরিতে অনুমতি দেওয়া হল। আদালতের এই রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, তফসিলি জাতির কোনও মহিলা যদি উচ্চজাতের কাউকে বিয়ে করেন, সেক্ষেত্রে তাঁদের সন্তানও মায়ের জাতি পরিচয়ের ভিত্তিতে শংসাপত্র পেতে পারবে।

Continues below advertisement

দেশের আইন অনুযায়ী, অনুচ্ছেদ ১৫ এবং ১৬ তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাগ্রহণের ক্ষমতা প্রদান করে। কিন্তু কাদের তফসিলি জাতি ও উপজাতি হিসেবে গণ্য করা হবে, তার হিসেব মোটেও সোজা নয়। বরং অনুচ্ছেদ ৩৪১ এবং ৩৪২-এর আওতায় রাষ্ট্রপতির নির্দেশানুসারে পৃথক তালিকা বরাদ্দ হয় প্রত্যেক রাজ্যের জন্য়। সরকারি নীতি অনুসারে, এতকাল বাবার জাতি পরিচয়ই সন্তানের ক্ষেত্রে কার্যকর হয়েছে। পুরনো সার্কুলারে এর উল্লেখ রয়েছে এবং হিন্দু রীতিনীতির সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।  

২০০৩ সালে পুনীত রাই বনাম দীনেশ চৌধরি মামলায় সুপ্রিম কোর্টও জানায়, নথিবদ্ধ আইন না থাকলে বাবার জাতি পরিচয়ই সন্তানের জাতি পরিচয় হয়ে উঠবে। তবে সংরক্ষণ আইন এবং ব্যক্তিগত আইন পৃথক বিষয়। সামাজিক সুবিধা-অসুবিধার প্রশ্ন জড়িয়ে রয়েছে এর সঙ্গে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৯ এবং ৪৬-এ সমাজের প্রান্তিক মানুষদের স্বার্থরক্ষার কথা বলা হয়েছে। সেখানে জাতি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত কোনও সম্পদ হিসেবে স্বীকৃত নয়।

ভারতীয় সংস্কৃতিতে এযাবৎ বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিয়ের পর স্বামীর গোত্রই হয়ে ওঠার চল থেকেছে। যদিও তার বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বার বার। মহিলারা সন্তানের জাতি নির্ধারণ করতে পারেন কি না, উঠেছে সেই প্রশ্নও। বিশেষ করে সামাজিক পরিবেশের কথা উঠে এসেছে বার বার। তা সত্ত্বেও বাবার জাতি পরিচয়ে সন্তানের বেড়ে ওঠার চল আজও রয়েছে। যদিও এটি একটি ধারণা ব্যাতীত অন্য কিছু নয় বলে আগেও জানিয়েছে আদালত। তবে ১৯৬৪ সালের ৫ মার্চ এবং ২০০২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারির প্রেসিডেন্সিয়াল নোটিফিকেশনে বলা হয়েছিল, বাবার জাতের নিরিখেই শংসাপত্র প্রাপ্য ছেলেমেয়েদের। পাশাপাশি, নাগরিক পরিচয়, কোন রাজ্য বা কোন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে, কোন পরিস্থিতিতে বসবাস, তাও গ্রাহ্য হবে।