নয়াদিল্লি: অভিনয় ক্ষমতায় হোক বা জনপ্রিয়তার নিরিখে, বলিউডের ‘শাহেনশা’ বলেই গন্য তিনি। তারকা নায়িকাকে ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার আগে নাকি গাছের চারপাশে সাতপাক ঘুরিয়েছিলেন তিনি! এতে নাকি ‘মাঙ্গলিক’ কন্যার সঙ্গে বিয়ে হলেও আয়ু কমবে না ছেলের, ফাঁড়া কেটে যাবে গাছের উপর দিয়ে! সেই খবর সামনে আসার পর ঢি ঢি পড়ে গিয়েছিল চারিদিকে। কিন্তু ধর্ষণের শিকার মেয়ে ‘মাঙ্গলিক’ না ‘অমাঙ্গলিক’, আদালত তা যাচাই করে দেখার নির্দেশ দিচ্ছে, তা বোধহয় এই ভারতেই সম্ভব। গোটা ঘটনায় তাজ্জব সুপ্রিম কোর্টও (Supreme Court)।


একটি মামলার শুনানিতে সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদ হাইকোর্টই এক মেয়ের ঠিকুজি-কুষ্ঠি বিচারের নির্দেশ দেয়। মামলাটি ছিল বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের। অভিযুক্ত এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দীর্ঘদিন তিনি এক তরুণীকে ধর্ষণ করে গিয়েছেন বলে অভিযোগ। সেই মামলায় জামিনের আবেদন জানিয়ে ওই অধ্যাপক আদালতে জানান, অভিযোগকারিণী আসলে মাঙ্গলিক। তাই ওই তরুণীকে বিয়ে করার সাহস পাননি তিনি।


তাতে গত ২৩ মে এলাহাবাদ হাইকোর্ট লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতিষ বিভাগকে অভিযোগকারিণীর ঠিকুজি-কুষ্ঠি বিচার করে দেখার নির্দেশ দেয়। মেয়েটি সত্যিই ‘মাঙ্গলিক’ কিনা, খতিয়ে দেখে খামবন্দি অবস্থায় আদালতে জমা দিতে বলা হয় একসপ্তাহের মধ্যে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দৌলতে বিষয়টি কানে পৌঁছয় দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের (CJI DY Chandrachud)। এই মুহূর্তে আদালতে গ্রীষ্মকালীন ছুটি চলছে। বিদেশে রয়েছেন প্রধান বিচারপতি।


আরও পড়ুন: Odisha Train Accident: পয়েন্ট বিভ্রাটেই এতবড় দুর্ঘটনা! প্রাথমিক তদন্তে ধারণা, কুণালের ট্যুইটের পরই বললেন রেলমন্ত্রী


এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশ জানতে পেরে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে বিদেশে বসেই বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। শনি-রবি আদালতের শুনানি না হওয়া সত্ত্বেও, বিষয়টি নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত বেঞ্চ গঠনের নির্দেশ দেন তিনি। সেই মতো বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া এবং পঙ্কজ মিঠালের ডিভিশন বেঞ্চ শনিবার দুপুর ৩টেয় বিষয়টির শুনানি করে এবং এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়।


এদিন সরাসরি সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে প্রশ্ন করে শীর্ষ আদালত। তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত কিনা, এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশ পড়ে দেখেছেন কিনা, জানতে চাওয়া হয়। জবাবে মেহতা জানান, “আমি দেখেছি। অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। মহামান্য আদালতকে বলব, এই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিন।”


অভিযুক্তের পক্ষের আইনজীবী এর পর আদালতে জানান, দু’পক্ষের সম্মতিক্রমেই এলাহাবাদ হাইকোর্ট এমন নির্দেশ দিয়েছে।  তাতে তাঁকে ভর্ৎসনা করে শীর্ষ আদালত। বলা হয়, “কিন্তু এর তো সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক! মাঙ্গলিক হওয়া না হওয়ার সঙ্গে মামলার কী সম্পর্ক? গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারের পরিপন্থী এই নির্দেশ। বাস্তব ঘটনাকে জ্যোতিষশাস্ত্রের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হবে কেন? এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন আমরা। এখানে জ্যোতিষ এলই বা কেন?” আদালত চাইলে অভিযুক্তের জামিনের আবেদন যাচাই করে দেখতেই পারে। কিন্তু অভিযোগকারিণীর ঠিকুজি-কুষ্ঠি বিচার যাচাইয়ের নির্দেশে স্তম্ভিত শীর্ষ আদালত।