বালেশ্বর: বালেশ্বর ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা নিয়ে কার্যত প্রকাশ্যে মতবিরোধ (Odisha Train Accident)। সংবাদমাধ্যমের ক্য়ামেরার সামনেই মতবিরোধে জড়ালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এবং কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণো (Ashwini Vaishnaw)। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনে দুর্ঘটনা প্রতিরোধী যন্ত্র কেন ছিল না, প্রশ্ন তোলেন তিনি। এ বার তার জবাব দিলেন অশ্বিনী। তাঁর দাবি, বালেশ্বর দুর্ঘটনার সঙ্গে দুর্ঘটনা প্রতিরোধী যন্ত্রের কোনও সম্পর্ক নেই।
দুর্ঘটনায় গাফিলতির অভিযোগ মমতার
শনিবার ওড়িশার বালেশ্বরে পরিস্থিতি পরিদর্শনে যান মমতা। সেখানে অশ্বিনীর সামনেই গাফিলতির অভিযোগ তোলেন তিনি। "আপনি বিষয়টি দেখুন। আমার কাছে খবর আছে, দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনে দুর্ঘটনা প্রতিরোধী যন্ত্র ছিল না। যা ঘটে গিয়েছে, ঘটে গিয়েছে। এতগুলি প্রাণ তো আর ফিরবে না! কিন্তু এর মধ্যে নিশ্চয়ই কিছু আছে। ভাল করে সবদিক খতিয়ে দেখতে হবে। এতগুলি মানুষের প্রাণ চলে গিয়েছে।"
এ দিন, মমতার সঙ্গে প্রকাশ্যে মতবিরোধও দেখা দেয় অশ্বিনীর। মৃতের সংখ্যা ২৩৮ বলে দাবি করেন তিনি। মমতা জানান, গতকালই ওই পরিসংখ্যান ছিল। আজ বেড়েছে এবং আরও বাড়তে পারে বলে খবর রয়েছে তাঁর কাছে। তিনটি কামরা থেকে এখনও উদ্ধারকার্য সম্ভব হয়নি বলে জানান মমতা। তাতেও আপত্তি জানান রেলমন্ত্রী। এর পর সন্ধেয় দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ নিয়ে মুখ খোলেন তিনি।
সংবাদমাধ্যমে সন্ধেয় অশ্বিনী বলেন, "এই দুর্ঘটনার সঙ্গে অ্যান্টি কোলিশন ডিভাইসের সম্পর্ক নেই। এটা পয়েন্টের বিষয়।" মৃত্যুর পরিসংখ্যান নিয়ে মমতার সঙ্গে মতবিরোধের প্রসঙ্গ উঠলে বলেন, "আমরা স্বচ্ছতাই চাই। এটা রাজনীতি করার সময় নয়। কী ভাবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা যায়, তা-ই এখন প্রধান লক্ষ্য।"
যদিও পটেন্ট বিভ্রাটেই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে এ দিন বিকেলেই দাবি করেন বাংলায় তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। ট্যুইটারে ফোনে কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ পোস্ট করেন তিনি। লেখেন, 'সিগনাল ছিল মেন লাইনের, পয়েন্ট ছিল লুপলাইনে। রেলের দুই কর্তার কথোপকথন...বড়সড় গোলমাল আছে রেল দুর্ঘটনার পিছনে'। কুণালের এই ট্যুইটে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় বিজেপি। তার পর যদিও অশ্বিনী জানালেন, পয়েন্ট বিভ্রাটের জেরেই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
লুপ লাইন এবং পয়েন্ট কী?
মূলত স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় লুপ লাইন থাকে, যাতে একাধিক ট্রেন ঢুকলেও পরিষেবায় বিঘ্ন না ঘটে। একাধিক ইঞ্জিন বিশিষ্ট, পূর্ণ্যদৈর্ঘ্যের মালগাড়ি যাতে দাঁড় করানো যায়, তার জন্য সাধারণত এই লুপ লাইনের দৈর্ঘ্য হয় ৭৫০ মিটার। সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, ঘণ্টায় ১২৮ কিলোমিটার বেগে যখন ছুটে আসছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস এবং বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১৬ কিলোমিটার, সেই সময় মেন লাইনেই সিগনাল ছিল।
কিন্তু সূত্রের দাবি, শুক্রবার দুর্ঘটনার সময় ট্রেনের গতি নির্ধারণ এবং বদলকারী পয়েন্ট ছিল লুপলাইনে। ফলে সোজা গিয়ে মালগাড়িতে ধাক্কা মারে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। তার ফলে করমণ্ডলের কামরাগুলি লাইনচ্যুত হয়, কয়েকটি কামরার সঙ্গে হাওড়ামুখী ট্রেনের পাশাপাশি সংঘর্ষ হয় এবং ওই ট্রেনের শেষের দিকে দু'টি কামরা নয়ানজুলিতে পড়ে যায়। কুণালের পোস্ট করা অডিও ক্লিপেও এই কথোপকথন ধরা পড়েছে, যদিও তার সত্যতা যাচাই করেনি এবিপি আনন্দ।