নয়াদিল্লি: হিংসাবিধ্বংস্ত মণিপুরে রাজ্য পুলিশকে মঙ্গলবার তীব্র ভর্ৎসনা করল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। দেশের শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, 'মণিপুরের (Manipur Violence) আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও প্রশাসন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।' গত মে থেকে মেইতেই ও কুকিদের সংঘর্ষে জ্বলছে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্য। হালে একটি ভয়ঙ্কর ভিডিও ভাইরাল হলে তুমুল হইচই শুরু হয়। তাতে দেখা গিয়েছিল, দু'জন মহিলাকে বিবস্ত্র করে ঘোরানো হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে জানা যায়, ঘটনাটি মে মাসের হলেও এফআইআর দায়ের, সংশ্লিষ্ট থানায় স্থানান্তর ও তদন্ত শুরু হতে দেরি হয়। এই নিয়েও হালেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের এদিনের পর্যবেক্ষণ, হিংসার যে ঘটনাগুলি ঘটেছে তা নিয়ে তিন মাসে এফআইআর রুজু হয়নি। আর যে ৬ হাজার এফআইআর হয়েছিল, তাতে হাতেগোনা কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই অবস্থায় মণিপুরের ডিজিপিকে (DGP) ৭ অগাস্ট সশরীরে হাজির থাকতে নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।


রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ...
একদিকে যখন শীর্ষ আদালতের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়েছে মণিপুর প্রশাসন, তখনই অন্য দিকে দিল্লি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিওয়াল উত্তরপূর্বের এই রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির অন্তর্বর্তী সুপারিশ জানালেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে। ওই অন্তর্বর্তী সুপারিশেই মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের পদত্যাগের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে বলে খবর। বিষয়টি নিয়ে দিল্লি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সনকে প্রশ্ন করা হলে জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাকি ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের কাছে তাঁর অনুরোধ একবার যেন মণিপুরের পরিস্থিতি সরেজমিন দেখে আসেন তাঁরা। উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করেন। তাঁর বক্তব্য, দিল্লি মহিলা কমিশনের যে টিম সেখানে গিয়েছিল, তারা অন্তত তিনটি এসআইটি গঠন করে হিংসার ঘটনার তদন্তের আর্জি জানিয়েছে। রাষ্ট্রপতির কাছে যে অন্তর্বর্তী সুপারিশ পাঠানো হয়েছে, তাতে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে পদক্ষেপ, যৌন নির্যাতনের শিকারদের পাশে দাঁড়ানোর কথাও জানিয়েছেন দিল্লি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন। যে ভাবে কোনও লাগাম ছাড়াই আগ্নেয়াস্ত্র লুঠপাট চলছে, তাতেও লাগাম পরাতে পদক্ষেপ করার কথা উল্লেখ রয়েছে ওই অন্তর্বর্তী সুপারিশে। 


ভিডিও নিয়েও কড়া কোর্ট...
সোমবার মণিপুরের ঘটনা নিয়ে শুনানি চলাকালীন বাংলার ভোট-হিংসার প্রসঙ্গ ওঠে সুপ্রিম কোর্টে। কেন্দ্রের তরফে আইনজীবী বাঁশুরি স্বরাজ বলেন, 'বাংলায় পঞ্চায়েত ভোটের সময় মহিলাদের বিবস্ত্র করে অত্যাচার হয়েছে। রাজস্থানেও পিছিয়ে পড়া সমাজের মহিলাদের উপর নির্যাতন হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের উচিত দেশের প্রত্যেক মেয়েকে রক্ষা করা।' পত্রপাট কেন্দ্রের আইনজীবীর যুক্তি খারিজ করে দিন শীর্ষ আদালতের বিচারপতি। বলেন, 'সর্বত্র মহিলাদের উপর একই ধরনের অত্যাচার চলছে, এই কথা বলে কোনও লাভ নেই। ...দেশের বাকি প্রান্তেও একই জিনিস ঘটছে এই যুক্তি দেখিয়ে মণিপুরের মতো ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না। প্রশ্ন হল, এই ধরনের কী ভাবে মোকাবিলা সম্ভব? সেটি বলুন...নাকি আপনি বলতে চান, হয় দেশের প্রত্যেকটি মেয়ের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে না হলে কারওই সুরক্ষা-ব্যবস্থা করা যাবে না?' বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এও বলেন, 'মণিপুরের শুনানি চলছে, এখানে শুধু এই মামলাই শোনা হবে।' বিচারপতির প্রশ্ন ছিল, 'ঘটনাটি ৩ মে-র। জিরো এফআইআর দায়ের হয়েছিল ১৮ মে। সংশ্লিষ্ট পুলিশ স্টেশনে এফআইআর স্থানান্তরিত হয় জুনে। গত ১৯ জুলাই ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পরই মামলা বিষয়টি শীর্ষ আদালতের নজরে আসে। তার পর থেকেই যতটুকু যা অগ্রগতি হয়েছে। 


আরও পড়ুন:'বাংলায় ৬ লক্ষ পদ লোপ,২ কোটি বেকারের আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে', রাজ্যকে নিশানা শুভেন্দুর