নয়াদিল্লি: আকাশে ফের ওড়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছিল। এবার Jet Airways-এর সম্পত্তি বিক্রির নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের সাফ বক্তব্য, "এছাড়া আর রাস্তা নেই।" ন্যাশনাল কোম্পানি ল অ্যাপিলেট ট্রাইবুনালের তরফে এর আগে Jet Airways-কে উজ্জীবিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধ না করলেও, যাতে মালিকানা হস্তান্তর করা যায়, তার সপক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা। কিন্তু বৃহস্পতিবার ন্যাশনাল কোম্পানি ল অ্যাপিলেট ট্রাইবুনালের সেই সিদ্ধান্ত খারিজ করে দিল আদালত। (Jet Airways Liquidation)
সংবিধানে উল্লেখিত অনুচ্ছেদ ১৪২ ধারা প্রয়োগ করে এদিম Jet Airways-এর সম্পত্তি বিক্রির নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বলা হয়েছে, ঝুলে থাকা ওই মামলায় 'সম্পূর্ণ ন্যায়' যাতে মেলে, তার জন্যই সংবিধান প্রদত্ত অধিকার প্রয়োগ করেছে আদালত। পাঁচ বছর আগে যেখানে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়ে গিয়েছিল, এত দিনেও কেন তার প্রয়োগ হল না, আজ তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে আদালত। ঘটনাক্রমকে 'অদ্ভুত এবং উদ্বেগজনক' বলে উল্লেখ করা হয়। আদালত বলে, "Jet Airways-এর সম্পত্তি বিক্রি ছাড়া আর রাস্তা নেই।" (Jet Airways Crisis)
রায় দিতে গিয়ে এদিন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, "যে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল, তা প্রয়োগ করা যেহেতু আর সম্ভব নয়, তাই সম্পত্তি বিক্রিতে বিনিয়োগকারীদেরও রাখতে হবে, শেষ অবলম্বন হিসেবে।" বিচারপতি জেবি পার্দিওয়ালা, বিচারপতি মনোজ মিশ্রও ওই বেঞ্চে ছিলেন। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক-সহ যারা সংস্থাকে ঋণ দিয়েছিল, তাদেরও এতে যুক্ত করতে বলা হয়েছে।
আদালত জানিয়েছে, বিমান সংস্থার সম্পত্তি বিক্রির সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারী, ঋণদাতা এবং সাধারণ কর্মীদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই। ন্যাশনাল কোম্পানি ল অ্যাপিলেট ট্রাইবুনাল মালিকানা হস্তান্তরের যে প্রস্তাব এনেছিল, তার বিরুদ্ধে আদালতে যান ঋণদাতারা। কনসর্টিয়াম দেনা ৩৫০ কোটির পরিশোধ করতে পারেনি যেখানে, সেখানে মালিকানা হস্তান্তর কী করে সম্ভব, প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। Jet Airways-এর মালিকানা Jalan-Karlock Consortium-এর (JKC) হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল ট্রাইবুনাল। যে ৪ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকার দেনা রয়েছে, তার প্রথম কিস্তি হিসেবে ৩৫০ কোটি দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু সেই টাকা মেলেনি বলে অভিযোগ করেন বিনিয়োগকরারীরা।
বেশ কিছু বছর ধরেই উড়ান বন্ধ Jet Airways-এর। কেন্দ্রের তরফে ওই সংস্থাকে ফের চাঙ্গা করার বার্তা দেওয়া হলেও, এত বছরে সেই কাজ এগোয়নি। এমন পরিস্থিতিতে ঋণদাতাদের কমিটির নেতৃত্বে থাকা SBI জানায়, সংস্থাক পুনরায় উজ্জীবীত করার পরিকল্পনা মোটেই লাভজনক নয়। ট্রাইবুনালের প্রস্তাবেরও তীব্র সমালোচনা করে তারা। এবছর জানুয়ারি মাসে JKC-কে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয় যে, SBI এবং তদের যৌথ এসক্রো অ্যাকাউন্টে ১৫০ কোটি টাকা জমা করতে হবে। অন্যথায় কড়া পদক্ষেপ করা হবে বলেও জানায় আদালত। কিন্তু সেই টাকা জমা পড়েনি বলে অভিযোগ।
দেনার দায়ে ধুঁকতে ধুঁকতে ২০১৯ সালে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে Jet Airways. সেবছর এপ্রিল মাস থেকে থেকে উড়ান বন্ধ রয়েছে। দু'বছর পর JKC, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি নিবাসী ভারতীয় মুরারি জালান এবং বিদেশি সংস্থা Kalrock Capital Partners Limited-এর মাধ্যমে ফ্রোরিয়াব ফ্রিৎশক, যিনি Jet Airways-এর অংশীদারও, তিনি সংস্থার মালিকানা দাবি করেন। সেই মতো নজরদারি কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু বকেয়া টাকা মেটানোর প্রক্রিয়া বার বার আটকে যায়।