নয়াদিল্লি: একটি বা দু’টি নয়। নয় নয় করে গত চার মাসে ১০০০-এর বেশি দাবানল দেখা গিয়েছে উত্তরাখণ্ডে। সেই নিয়ে রাজ্য সরকারকে তীব্র ভর্ৎসনা করল সুপ্রিম কোর্ট। দাবানলকে উপেক্ষা করে বনকর্মীদের কেন নির্বাচনী ডিউটিতে নামানো হয়েছে প্রশ্ন তুলল দেশের শীর্ষ আদালত।রাজ্যের মুখ্যসচিবকে আদালতে হাজির হতে বলা হল ১৭ মে-র মধ্যে। (Uttarakhand Forest Fire)


বুধবার শুনানি চলাকালীন উত্তরাখণ্ড সরকারকে আদালত প্রশ্ন করে, “দাবানল চলাকালীন বনকর্মীদের কেন ভোটের ডিউটিতে নামিয়েছেন?” আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়ে উত্তরাখণ্ড সরকারের কৌঁসুলি জানান, নির্বাচনী ডিউটি শেষ হয়ে গিয়েছে। রাজ্যের মুখ্যসচিব নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে বনকর্মীদের আর নির্বাচনী ডিউটিতে নামানো না হয়। কিন্তু তাঁর এই মন্তব্যে আরও ক্ষুব্ধ হয় আদালত। বলে, “অত্যন্ত দুঃখজনক পরিস্থিতি। শুধু অজুহাত দিয়ে যাচ্ছেন।”


আদালতে সওয়াল জবাব করতে গিয়ে আইনজীবী পরমেশ্বর জানান, উত্তরাখণ্ডে দাবানল ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। বনভূমির ৪০ শতাংশ পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। (Supreme Court)


গত নভেম্বর মাস থেকে একের পর এক দাবানলের ঘটনা সামনে আসছে উত্তরাখণ্ড থেকে। এর প্রেক্ষিতে সরকারি কৌঁসুলি দাবি করেন, নতুন করে আর কোনও দাবানলের খবর সামনে আসেনি। কেন্দ্রের তরফে দাবানল মোকাবিলায় এখনও টাকা মেলেনি, তা পাওয়া গেলে পরিস্থিতি সুবিধাজনক জায়গায় চলে আসত বলেও আদালতে জানান রাজ্য সরকারের কৌঁসুলি।


আরও পড়ুন: India-China Relations: দুই তরফেই বিপুল সেনা মোতায়েন, চিনা সীমান্তে পরিস্থিতি ‘অস্বাভাবিক’, জানাল দিল্লি


আদালতে উত্তরাখণ্ড সরকার জানায়, কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের নিয়ে ছয় সদস্যের একটি গড়া হয়েছে। কীভাবে এই দাবানলের মোকাবিলা করা যায়, তাঁরাই উপায় বাতলে দিতে পারেন। ৯০০০-এর বেশি মানুষ লড়াই করছেন। ৪২০টি মামলা দায়ের হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামি সর্বক্ষণ এ নিয়ে আলাপ আলোচনা করছেন বলেও আদালতে জানায় রাজ্য।


উত্তরাখণ্ডে লাগাতার এই দাবানল মোকাবিলায় রাজ্য কী পদক্ষেপ করেছে জানতে চায় আদালত। জবাবে সরকারি কৌঁসুলি জানান, ১২০০ শূন্যপদ পূরণ করা হয়েছে। আরও নিয়োগ চলছে। এখনও পর্যন্ত কেন শূন্যপদ পূরণ হল না, তার জবাবে জানানো হয়, দ্রুত নিয়োগ সম্পন্ন হবে। রাজ্যের বন দফতরের পরিসংখ্যা অনুযায়ী, নভেম্বর মাস থেকে একের পর এক দাবানলে এখনও পর্যন্ত উত্তরাখণ্ডের ১৪৩৭ হেক্টরের বেশি বনভূমি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। নৈনিতাল, আলমোরা, পিথোরাগড়, পউরি, উত্তরকাশীই সবচেয়ে দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত দাবানলে পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। আগুনে পড়ে, আঘাত পেয়ে আহত হয়েছেন অনেকে। সম্প্রতি ভারী বৃষ্টিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও, ক্ষয়ক্ষতির কোনও সীমা নেই বলে জানা গিয়েছে।


কিন্তু দাবানল সামাল দিতে যেখানে ৯ কোটি টাকা প্রয়োজন, সেখানে রাজ্যের তরফে মাত্র ৩.১৫ কোটি টাকাই মঞ্জুর করা হয়েছে বলে খবর। সেই নিয়েও আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়েছে উত্তরাখণ্ড সরকার। লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় উত্তরাখন্ডের পাঁচটি আসনে ভোটগ্রহণ ছিল। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতেও কেন বনকর্মীদের নির্বাচনী কাজে নামানো হল, তার সদুত্তর দিতে পারেনি রাজ্য।