নয়াদিল্লি: নাবালিকাকে অপহরণ ও যৌন নিগ্রহের অভিযোগ মামলা দায়ের হয়েছিল। সেই মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের সাজাও শুনিয়েছিল আদালত। কিন্তু বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে এক যুবকের নিষ্কৃতী দিল সুপ্রিম কোর্ট। যে নাবালিকা কন্যাকে নিগ্রহের দায়ে সাজা হয়েছিল, সেই কন্যার সঙ্গে যুবকের সুখী দাম্পত্যকে সামনে রেখেই এমন সিদ্ধান্ত নিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। (POCSO Case)

Continues below advertisement

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং অগাস্টিন জর্জ মাসিহ্-র বেঞ্চে মামলার শুনানি চলছিল। সেখানে বিচারপতিরা জানান, ওই দম্পতি এখন সুখে সংসার করছেন। তাঁদের এক সন্তানও হয়েছে। তাই আইনের আওতায় ওই যুবক দোষী হলেও, কঠোর আইন ব্যবহার করে অন্যায় হতে দেওয়া যায় না। বিচারপতিরা বলেন, “আমাদের মতে, এটি এমন একটি মামলা, যেখানে আইনকে ন্য়ায়বিচারের সামনে নতি স্বীকার করতে হবে।” (Supreme Court)

আদালতে ওই নির্যাতিতা জানান, ওই যুবকের সঙ্গে সুখে সংসার করছেন তিনি। শান্তিতে আছেন। বিশেষ করে সন্তান হওয়ার পর ভাল আছেন তাঁরা। আর তাতেই আদালত বলে, “আইন অনুযায়ী, জঘন্য অপরাধের জন্য আবেদনকারী দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তাই আবেদনকারী ও তাঁর স্ত্রীর মধ্যে আপসের ভিত্তিতে মামলার কার্যক্রম বাতিল করা যাবে না। কিন্তু ওঁর করুণা ও সহানুভূতির জন্য ওঁর স্ত্রীর যে আর্তনাদ, তা উপেক্ষা করলে ন্যায়বিচারের লক্ষ্যপূরণ হবে না।”

Continues below advertisement

শুনানি চলাকালীন, আদালত আরও জানায়, গুরুতর অপরাধীরাও সহানুভূতি পাওয়ার অধিকারী। আদালত মনে করছে, এক্ষেত্রে ভালবাসার উপর নির্ভর করেই সম্পর্কটি তৈরি হয়েছিল, শোষণের উপর নির্ভর করে নয়। আদালত বলে, “আবেদনকারী এবং নির্যাতিতা শুধুমাত্র আইনত বিবাহিতই নন, তাঁদের পরিবার রয়েছে। এই অপরাধ লালসার ফলশ্রুতি নয়, বরং ভালবাসার। নির্যাতিতা জানিয়েছেন, তিনি আবেদনকারীর সঙ্গে শান্তি ও স্থিতিশীল পারিবারিক জীবন কাটাতে চান। তাঁর গায়ে অপরাধীর থাক, চান না।”

এমন পরিস্থিতিতে ফৌজদারি অপরাধ মামলা চালিয়ে যাওয়া বা কারাগারে পুরে রাখলে, আবেদনকারীর “পারিবারিক জীবন ব্যহত হবে, নির্যাতিতা, তাঁদের শিশুসন্তান এবং সামাজিক পরিকাঠামোর অপূরণীয় ক্ষতি হবে।” এর পরই অনুচ্ছেদ ১৪২-এর আওতায় বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে আবেদনকারীর সাজা বাতিল করে দেন বিচারপতিরা।

সাজা থেকে নিষ্কৃতী দেওয়া হলেও, আবেদনকারীকে সতর্কও করেছে আদালত। কোনও অবস্থাতেই তিনি স্ত্রী ও সন্তানকে ত্যাগ করতে পারবেন না, জীবন দায়িত্ব পালন করতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালত বলে, “ভবিষ্যতে আবেদনকারীর তরফে কোনও ত্রুটি দেখা দিলে, বিষয়টি যদি আদালতের নজরে আনা হয়, তাহলে তাঁর পরিণতি আবেদনকারীর জন্য সুখকর নাও হতে পারে।” শুধু তাই নয়, আদালত জানিয়েছে, অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতেই এই রায় দেওয়া হচ্ছে। অন্য মামলার ক্ষেত্রে তাদের এই রায়কে নজির হিসেবে ধরা উচিত হবে না।

জানা গিয়েছে, মেয়েটি নাবালিকা থাকা অবস্থাতেই তাঁর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হন ওই যুবক। পরবর্তীতে বিয়ে হয় তাঁদের। POCSO আইনে ১০ বছরের সশ্রম কারাবাস হয় ওই যুবকের, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৬ ধারার আওতায় নাবালিকাকে অপহরণ ও যৌন নিগ্রহের দায়ে সাজা হয় পাঁচ বছরের। কিন্তু এই মামলাটিকে ‘অদ্ভুত’ বলে উল্লেখ করে আদালত।