নয়াদিল্লি: রাজ্যপাল অনন্তকাল বিল আটকে রাখতে পারেন না বলে সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এই প্রথমবার, রাষ্ট্রপতির বিল আটকে রাখার সময়সীমাও কার্যত বেঁধে দিল শীর্ষ আদালত। বলা হয়েছে, রাজ্যপাল কোনও বিল রাষ্ট্রপতিকে যদি পাঠান, সেক্ষেত্রে তিন মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে রাষ্ট্রপতিকে। তামিলনাড়ু সরকার বনাম রাজ্যপাল আর এন রবির মধ্যে সংঘাত মামলাতেই এই নির্দেশ এসেছে। (Supreme Court)

তামিলনাড়ু বিধানসভায় পাস হওয়া ১০টি বিল রাজ্যপাল রবি আটকে রেখেছেন বলে আদালতে মামলা হয়েছিল।  সেই নিয়ে মঙ্গলবারই কড়া নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জেবি পর্দিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চ। শুক্রবার তাঁদের অর্ডারের যে কপি সামনে এসেছে, তাতে রাষ্ট্রপতিকেও বিল আটকে রাখা নিয়ে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে বলে দেখা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিল যদি না ছাড়েন রাষ্ট্রপতি, তাঁর তরফে যদি বিলটি নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য না করা হয়, সেক্ষেত্রে আদালতে আবেদন জানাতে পারবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য। রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে 'Writ of Mandamus' জারির জন্য আবেদন জানাতে পারবে। কোনও সরকারি আধিকারিক বা প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব পালন  না করলে আদালত  'Writ of Mandamus' জারি করতে পারে, যাতে আইনত দায়িত্ব পালন বাধ্য করা হয় সংশ্লিষ্ট আধিকারিক তথা প্রতিষ্ঠানকে ।  (SC Deadline for President)

আদালত জানিয়েছে, সংবিধানের ২০১ নম্বর অনুচ্ছেদের আওতায় রাষ্ট্রপতির দায়দায়িত্বও বৈচারিক পর্যালোচনার মধ্যে পড়ে। সংবিধানের ২০১ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা রয়েছে, রাজ্যপাল কোনও বিল সংরক্ষণ করলে রাষ্ট্রপতি বিলটিতে সমর্থন জানাবেন বা জানাবেন না। সিদ্ধান্তগ্রহণের জন্য সংবিধানে কোনও সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তগ্রহণে এবার সময়সীমা বেঁধে দিল আদালত।

আদালত জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতির ভেটো ক্ষমতা নেই। হয় তিনি বিলে সমর্থন জানাবেন অথবা জানাবেন না। অর্থাৎ বিলটি নিয়ে রাষ্ট্রপতির হাতে কোনও ক্ষমতা নেই। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বিষয়টি মিটে যাওয়া কাম্য। এর পরই বিল নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। কোনও কারণে যদি তিন মাসের বেশি সময় লাগে, তার জন্য উপযুক্ত কারণ দেখাতে হবে এবং দেরি হওয়ার কারণ জানাতে হবে রাজ্যকে।

রাজ্য বিধানসভায় পাস হওয়া বিল আটকে রাখা নিয়ে গত কয়েক বছরে বার বার রাজ্য এবং রাজ্যপালের মধ্যে সংঘাত দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি যেখানে ক্ষমতায়, সেখানে এই সংঘাত চরম আকার ধারণ করেছে। সেই আবহেই সম্প্রতি রাজ্যপালকে বিল পাস নিয়ে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। রাজ্যপাল অনন্তকাল বিল আটকে রাখতে পারেন না বলে জানায় আদালত। রাষ্ট্রপতিকেও সেই মতো সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হল। 

বিল পাসে দেরি করা নিয়ে সম্প্রতি সরব হয় পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় সরকারও। আর জি কর কাণ্ডের পর রাজ্য বিধানসভায় সর্বসম্মতিতে 'অপরাজিতা বিল' পাস হয়, যেখানে ধর্ষণে কড়া শাস্তি, মৃত্যুদণ্ডের বিধানও রয়েছে। কিন্তু বিধানসভায় পাস হলেও, রাষ্ট্রপতির অনুমোদন না মেলায় সেই বিল আজও আইনে পরিণত হয়নি। সেই নিয়ে সম্প্রতি তৃণমূলের একটি প্রতিনিধি দল দিল্লি গিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখাও করেন। বিলটিতে সত্বর অনুমোদন দেওয়ার আবেদন জানান।