কলকাতা: নন্দীগ্রামে কেমিক্যাল হাব নিয়ে রাজনৈতিক মঞ্চ তখন সরগরম। সে সময় বঙ্গ রাজনীতিতে উল্কার মত উঠে আসেন সাদা পায়জামা পাঞ্জাবি পরা, মধ্য তিরিশের এক যুবক। ১৩ বছর পর তিনি রাজ্যের পরিবহণ ও সেচ মন্ত্রী, ২০১১-য় তৃণমূলকে ক্ষমতায় আনার অন্যতম হোতা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর তৃণমূলে তর্কাতীতভাবে সব থেকে জনপ্রিয় মুখ শুভেন্দু অধিকারী এবার মন্ত্রিসভা ছেড়ে দিলেন। এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ার।

২০০৬-এ দক্ষিণ কাঁথি কেন্দ্র থেকে রাজ্য বিধানসভায় যান শুভেন্দু। সে বছরই চেয়ারম্যান হন কাঁথি পুরসভার। ২০০৭-এ নন্দীগ্রামে কেমিক্যাল হাব বিতর্কের সময় উত্তাল রাজ্য রাজনীতিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের স্ট্রংম্যান শিশির অধিকারীর বড় ছেলে শুভেন্দু। ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ব্যানারে যে আন্দোলন শুরু হয়, তার পুরোভাগে থাকা শুভেন্দুর নাম ছড়িয়ে পড়ে ঘরে ঘরে। সিআইডি অভিযোগ করে, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলন চালাতে শুভেন্দু মাওবাদীদের অস্ত্র সরবরাহ করেছেন। জমি আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ, প্রাণ হারান ১৪ জন গ্রামবাসী। রাজ্য রাজনীতিতে তলানিতে ঠেকে সিপিএমের জনপ্রিয়তা, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনে ভর করে ২০১১-য় ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। সেই যুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধান সৈনিক ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তার আগে ২০০৯ সালে সাংসদ হয়েছেন তিনি, ১,৭২,৯৫৮ ভোটে তাঁর কাছে হেরে গিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের অবিসংবাদিত সিপিএম নেতা লক্ষ্মণ শেঠ। পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে দেওয়াল লিখন, সিপিএম আর ২০১১-য় কুর্সিতে ফিরছে না।

নন্দীগ্রামে সাফল্যের পর মমতা শুভেন্দুকে জঙ্গলমহলের পরিদর্শকের দায়িত্ব দেন। পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া- জঙ্গলমহলের এই তিন জেলায় তাঁর তত্ত্বাবধানে সংগঠন মজবুত করে তৃণমূল। ২০১৬-য় শুভেন্দু আবার ফিরে আসেন বিধানসভায়, বাম-কংগ্রেস জোটের আবদুল কাদির শেখকে হারিয়ে। পান পরিবহণ দফতরের দায়িত্ব। তার আগে ২০১৫-র জুনে মমতা শুভেন্দুকে দায়িত্ব দেন রাজ্য কংগ্রেসের শেষ ঘাঁটি মুর্শিদাবাদ ও মালদা ছিনিয়ে আনতে। রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর চোখের সামনে দিয়ে মুর্শিদাবাদের একের পর এক পুরসভা, জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করতে থাকে তৃণমূল। একইভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে মালদায় গনি খান পরিবারের বহু বছরের রাজনৈতিক দুর্গ।

কিন্তু এত সাফল্যের পরেও শুভেন্দু ও তৃণমূল হাইকমান্ডের সম্পর্ক নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। শোনা গিয়েছে, দলীয় নেতৃত্বের ওপর শুভেন্দু খুশি নন। কী নিয়ে এই বিবাদ? শুভেন্দু বারবার বলেছেন, লিফট, প্যারাস্যুটে করে নয়, তিনি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এই জায়গায় এসেছেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না করে ইঙ্গিতে এই মন্তব্য দলীয় নেতৃত্ব ভাল চোখে দেখেনি। নত হননি শুভেন্দুও, দলের একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অনুপস্থিত থেকেছেন।

তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব যত বেড়েছে ততই উৎসাহিত হয়েছে বিজেপি। মমতার পর রাজ্য রাজনীতিতে সব থেকে জনপ্রিয় তৃণমূল নেতা শুভেন্দুকে একাধিকবার আমন্ত্রণ জানিয়েছে তারা। কিন্তু শুভেন্দু মন্ত্রিত্ব ছাড়লেও এখনও স্পষ্ট করেননি, ভবিষ্যতে কোন পথে তিনি হাঁটবেন।