বিটন চক্রবর্তী, পূর্ব মেদিনীপুর: ২০১৫ থেকে ২০২০, ৫ বছরেই সম্পূর্ণ পালা বদল। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের মুখ হয়ে ওঠা শুভেন্দু অধিকারীকে যেদিন বিধানসভা ভোটের প্রার্থী এবং ভোটে জিতলে মন্ত্রী করার কথা ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ৫ বছর পর সেদিনই গৃহীত হল বিধায়ক পদে শুভেন্দুর ইস্তফাপত্র। শিবির বদলের পর তাঁকে নিয়ে শাসক ও বিরোধীদের তরজা অব্যাহত।
২০১৫-র ২১ ডিসেম্বর মমতা নন্দীগ্রামের তেখালির মাটিতে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেছিলেন, সামনের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল ফের ক্ষমতায় এলে রাজ্যের নতুন মন্ত্রিসভায় আসবেন শুভেন্দু অধিকারী। ভোটেও লড়বেন নন্দীগ্রাম থেকেই। ৫ বছর বাদে আজ, আরেকটা ২১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলের সঙ্গে শুভেন্দুর যাবতীয় সম্পর্ক চুকে গেল। মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়ে ফুল বদল করে গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছেন শুভেন্দু। এদিনই বিধায়ক পদে তাঁর ইস্তফা গ্রহণ করেছেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যে পালা বদলের অন্যতম মাইলস্টোন নন্দীগ্রাম। ২০০৭ সাল থেকে শুরু হয় নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলন। সেই আন্দোলনের অন্যতম মুখ হয়ে ওঠেন শুভেন্দু। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তমলুক কেন্দ্র থেকে সিপিএমের লক্ষ্মণ শেঠকে হারিয়ে বিধানসভা থেকে সংসদে পা রাখেন তিনি। ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রাম কেন্দ্র থেকে জয়ী হন শুভেন্দু। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায় হন পরিবহণমন্ত্রী। কিন্তু মমতার ২০১৫-র সেই ঘোষণার ৫ বছর পর শুভেন্দু এখন গেরুয়া শিবিরে। তাঁর বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। নন্দীগ্রাম ১ ব্লক তৃণমুল কংগ্রেস সভাপতি স্বদেশ দাস শুভেন্দুর দিকে আঙুল তুলে বলেছেন, উনি দলের সঙ্গে বেইমানি করেছেন, শহিদ পরিবারের সঙ্গেও বেইমানি করেছেন। পাশাপাশি শুভেন্দুর দলত্যাগকে ‘জঞ্জাল সাফ হয়েছে, দল আরও ভাল চলবে’ বলে মন্তব্য করেও স্বাগত জানান স্বদেশবাবু। যদিও শুভেন্দুকে বিশ্বাসঘাতক বলতে রাজি নন নন্দীগ্রামে আন্দোলনে মৃতদের পরিবার। মৃত পুষ্পেন্দু মণ্ডলের দাদা কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল, মৃত ইমাদুলের বাবা আব্দুল দাইহান খান শুভেন্দুকে ‘নয়নের মণি’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, উনি পাশে ছিলেন, এখনও আছেন। এখনই বিশ্বাসঘাতক বলতে পারব না ওঁকে।


তৃণমূলের তীব্র সমালোচনা করে জেলা বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক সহ সভাপতি প্রলয় পালের দাবি, শুভেন্দু আসায় শক্তিশালী হবে তাঁদের দল। তাঁকে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের কাণ্ডারী বলেন তিনি। দাবি করেন, আমাদের লাভ হবে, উনি আসায় তৃণমূল সরকার ভেঙে পড়বে।