ভয়ঙ্কর নৈরাজ্য। সাধারণ নির্বাচনের আগে ফের একবার অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে পদ্মাপাড়ের দেশে। ফের আক্রান্ত পদ্মাপাড়ের হিন্দুরা। ময়মনসিংহে দীপুচন্দ্র দাস নামে এক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে খুনের পর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন দীপু। ময়মনসিংহের ভালুকায় ভাড়াবাড়িতে থাকতেন। হাসিনা-বিরোধী ছাত্রনেতা শারিফ ওসমান হাদির খুনের জেরে বৃহস্পতিবার রাত থেকে বাংলাদেশজুড়ে নৈরাজ্য়ের আগুন জ্বলতে শুরু করে। রাত ৯টা নাগাদ বিক্ষোভের মাঝে পড়ে যান দীপু দাস। তাঁকে পিটিয়ে খুন করা হয়। এরপর প্রকাশ্য়ে মৃতদেহ জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনার পর সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে একটি ভিডিও। যেখানে দেখা যাচ্ছে, দীপু কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলছেন। পুলিশের পোশাকধারী বলে মনে হচ্ছে তাঁদের। নীল রঙের ফুলহাতা সোয়েটার জাতীয় ও ট্রাউজার পরে দীপু। খালি পা। ভিডিও দেখে মনে হচ্ছে, তাঁর সামনে থাকা মানুষজনকে তিনি কিছু ব্যাখ্যা করে বোঝাতে চাইছেন। এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন। 

Continues below advertisement

এক্স হ্যান্ডেল পোস্টে তিনি লেখেন,  "দীপু চন্দ্র দাস ময়মনসিংহের ভালুকায় একটি কারখানায় কাজ করতেন। তিনি একজন দরিদ্র শ্রমিক ছিলেন। একদিন, একজন মুসলিম সহকর্মী তাঁকে তুচ্ছ বিষয়ে শাস্তি দিতে চেয়েছিলেন, তাই ভিড়ের মাঝখানে তিনি ঘোষণা করেন যে, দীপু নবী সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। সেটাই যথেষ্ট ছিল। নবীর উন্মত্ত অনুগামীরা হায়নার মতো দীপুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তাঁকে ছিঁড়ে ফেলতে শুরু করে। অবশেষে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে হেফাজতে নেয় - অর্থাৎ দীপু পুলিশি সুরক্ষায় ছিলেন। দীপু পুলিশকে ঘটনাটি খুলে বলেন, নিজেকে নির্দোষ বলেন, নবী সম্পর্কে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি এবং বিষয়টি সবই সেই সহকর্মীর ষড়যন্ত্র বলে জানান। পুলিশ সেই সহকর্মীর পিছনে গেল না। পুলিশের অনেকেই জিহাদের প্রতি অনুরাগী। এই অতিরিক্ত জিহাদি উৎসাহের কারণে কি তারা দীপুকে ওই ধর্মান্ধদের কাছে ছুঁড়ে দিয়েছিল? নাকি জিহাদি জঙ্গিরা পুলিশকে ধাক্কা দিয়ে দীপুকে স্টেশন থেকে বের করে নিয়েছিল? ওরা দীপুকে মারধর, ফাঁসি, পুড়িয়ে মারা— জিহাদি উৎসবের পূর্ণাঙ্গ আয়োজন করেছিল।"

তসলিমার সংযোজন, "দীপু চন্দ্র দাস ছিলেন তাঁর পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁর উপার্জন দিয়ে তাঁর বিশেষভাবে সক্ষম বাবা, মা, স্ত্রী এবং সন্তানের জীবন চলছিল। এখন তাদের কী হবে? আত্মীয়স্বজনদের কে সাহায্য করবে? পাগল খুনিদের বিচারের আওতায় কে আনবে ? দীপুর পরিবারের কাছে জিহাদিদের হাত থেকে বাঁচতে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার মতো টাকাও নেই। গরিবদের কেউ নেই। তাদের কোনও দেশ অবশিষ্ট নেই, এমনকী কোনও ধর্মও অবশিষ্ট নেই।"

Continues below advertisement