কলকাতা : তসলিমা নাসরিনের বই রাখা নিয়ে আবার অশান্তি তুঙ্গে অমর একুশে বইমেলার।  বইমেলায় বাগ্‌বিতণ্ডা তুঙ্গে। তসলিমার একটি বই স্টলে রাখা নিয়ে বাকবিতণ্ডা থেকে জল গড়ায় অশান্তি , হাতাহাতিতে। সূত্রের খবর, একদল হামলাকারীর হাতে প্রহৃত হন প্রকাশকও । দাবি করা হয়,তসলিমার যে বইটি স্টলে রাখা হয়েছে,তা বাংলাদেশে নিষিদ্ধ, কিন্তু আদপেই তা নয়, বলে দাবি লেখিকার। সোমবার সন্ধ্যায় বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘সব্যসাচী’র স্টলে তসলিমা নাসরিনের বই রাখার প্রতিবাদে হামলা করে একদল উগ্রপন্থী। অশান্তির জল এতদূর গড়ায় যে স্টল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। 


ঘনার সূত্রপাত একটি ফেসবুক পোস্ট থেকে। সেখানে বলা হয়, ওই স্টলে নাস্তিকতা প্রচার করা হচ্ছে। এই অভিযোগ স্টলটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানায় কিছু ব্যক্তি । তারপরই এই  পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে।  ওই ঘটনার পর ফেসবুকে কলম ধরেন তসলিমা। তাঁর দাবি, 'জিহাদিরা বইমেলায় সব্যসাচী স্টলটিতে হামলা করেছে। এই হামলা ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। ফেসবুকেই জিহাদিরা ডাক দেয় স্টল আক্রমণের। দোষ স্টলটি আমার লেখা বই রেখেছে। জিহাদিরা আমার নামটি সহ্য করতে আগেও পারেনি, এখনও পারেনা।' 


প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, একসময় তসলিমা বিরোধিতা বাংলাদেশে এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায়, তাঁকে দেশ ছাড়তে হয়। তিনিও ভারতে পালিয়ে আসেন। তারপর থেকেই তিনি আর দেশে ফিরতে পারেননি। আর এখন বাংলাদেশের নতুন পরিস্থিতিতেও তসলিমা বিরোধিতা আরও তীব্রই হয়েছে। তারই বহিঃপ্রকাশ বইমেলার স্টল গুঁড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান। 
তসলিমাও বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির সমালোচনা করে গিয়েছেন শুরু থেকেই। বারবার তাঁর নিশানায় ছিল ইউনূস সরকার। এবারও তাঁর অন্যথা হল না। তসলিমা বিরোধীদের দাবি, তাঁর চুম্বন গল্পগ্রন্থটি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ। কিন্তু তেমনটা একেবারেই নয় বলে দাবি লেখিকার। সোমবার গভীর রাতের একটি পোস্টে তিনি লেখেন, 'পুলিশ জিহাদিদের গ্রেফতার না করে, গ্রেফতার করে শতাব্দি ভবকে, এমনকী তাঁর স্টল বন্ধ করে দেয়। এরপর জিহাদিরা একরাশ মিথ্যে মিডিয়াকে শোনায়। তারা বলে আমার লেখা চুম্বন গল্পগ্রন্থটি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ। না, চুম্বন লাদেশে কোনও সরকারই নিষিদ্ধ করেনি। আমি নাকি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ। না, আমি নিষিদ্ধ নই। প্রতিটি সরকারই অবৈধভাবে আমাকে বাংলাদেশে ফিরতে বাধা দিচ্ছে।' 


হাসিনা আমল থেকেই তসলিমা বাংলাদেশ ছাড়া। নানা পরিস্থিতিতে তিনি ফিরতে চেয়েও ফিরতে পারেননি। সেই কথা টেনে এনেই তসলিমা নাম করে হাসিনা-সরকারকেও বিদ্ধ করেছেন এই পোস্টে 'আমার বাংলাদেশের পাসপোর্ট রিনিউ করছে না, আমার বিদেশি পাসপোর্টে বাংলাদেশের ভিসা দিচ্ছে না। কোনও ভ্যালিড ডকুমেন্ট ছাড়া এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়া যায় না। সে কারণে আমি বাংলাদেশের উদ্দেশে  যাত্রা করতে পারছি না। '


তসলিমা স্পষ্ট করে দেন, তিনি কোনওদিনই হাসিনাপন্থী ছিলেন না। আওয়ামি লিগকে সমর্থন করেননি। আর তাই জুলাই বিপ্লব সমর্থন করেছিলেন।  হাসিনার পদত্যাগ চেয়েছিলেন। কিন্তু ৫ অগাস্টের পর যে অরাজকতা, নৈরাজ্যের পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন তিনি আর নতুন প্রশাসকদর সমর্থন করতে পারেননি। '...যখন মুক্তিযোদ্ধাদের  ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দিতে থাকে, যখন তাণ্ডব চালাতে থাকে সর্বত্র, যখন বিপ্লবের নেপথ্যে যে   জামাত শিবির, হিযবুত তাহরীর আর জঙ্গি জিহাদি রাজাকার ছিল-- এই সত্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে, তখন থেকে আমি তাদের আর সমর্থন করিনি। '


তিনি প্রশ্ন তোলেন, 'জিহাদিরা কি আমার চুম্বন বইটি পড়েছে? না, পড়েনি। ....আসলে এই অশিক্ষিতরা কখনও বই পড়েনা।  '