নয়াদিল্লি: রাজ্য বিধানসভায় পাস হওয়া বিল নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্তগ্রহণ করতে হবে বলে জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতি অনির্দিষ্টকালের জন্য বিল আটকে রাখতে পারেন না বলে জানিয়েছিল শীর্ষ আদালত। সিদ্ধান্তগ্রহণের জন্য সর্বোচ্চ তিন মাসের সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। সেই নিয়ে এবার আপত্তি জানাল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। তাদের দাবি, আদালতের এমন নির্দেশে দেশে ‘সাংবিধানিক বিশৃঙ্খলা’ দেখা দিতে পারে।

গত কয়েক বছরে বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালদের সংঘাতের খবর বার বার সামনে এসেছে। বিশেষ করে অবিজেপি রাজ্যগুলিতে এই সমস্যা চরম আকার ধারণ করেছে। সাংবিধানিক পদে আসীন রাজ্যপাল, রাজ্যের প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করছেন, কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি-র রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধীরা। পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, তামিলনাড়ুতে বার বার এমন সংঘাত চোখে পড়েছে। ক্ষমতায় থাকাকালীন দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নরের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলেছিল আম আদমি পার্টি।

তামিলনাড়ু এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিধানসভায় পাস হওয়া বিল আটকে রাখার অভিযোগও তুলেছে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে। তামিলনাড়ুর এমকে স্ট্যালিন সরকার এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়, যার প্রেক্ষিতে গত এপ্রিল মাসে রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতিকে সিদ্ধান্তগ্রহণের সময় বেঁধে দেয় বিচারপতি জেপি পর্দিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চ। আদালতের এহেন রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিজেপি সাংসদ থেকে দেশের প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়, যিনি একসময় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ছিলেন। আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। 

এবার বিষয়টি নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানাল মোদি সরকারও। কেন্দ্রের হয়ে আদালতে হলফনামা জমা দিয়েছেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তাঁর দাবি, সংবিধানের ১৪২ নম্বর অনুচ্ছেদ সুপ্রিম কোর্টকে যে কোনও বিষয়ে বিচারপ্রদানের অভূতপূর্ব অধিকার দিলেও,  সংবিধান সংশোধন করতে পারে না আদালত, সংবিধান প্রণেতাদের অভিপ্রায়ের বিরুদ্ধে যেতে পারে না। সংবিধান এর অনুমতি দেয়নি। তিনি বলেন, “(বিলে) সম্মতি কার্যকরের ক্ষেত্রে কিছু সীমিত সমস্যা থাকতে পারে, কিন্তু তার জন্য় রাজ্যপালের উচ্চপদকে অধঃস্তনে নামেয়ে আনা যায় না। রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতির দফতর গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সর্বোচ্চ আদর্শকে তুলে ধরে। কোনও অভিযোগ থাকলে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার সমাধান করতে হবে, বিচারবিভাগের অযাচিত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে নয়।” এমন ঘটলে দেশে সাংবিধানিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে বলে জানান তিনি।

সংবিধানের ২০০ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাজ্য বিধানসভায় পাস হওয়া বিলে অনুমতি দিতে পারেন রাজ্যপাল, কিছু সময় ফেলে রাখতে পারেন, আবার রাষ্ট্রপতির অনুমতির জন্য তা সংরক্ষিত রাখতে পারেন। বিধানসভায় বিল ফেরতও পাঠাতে পারেন রাজ্যপাল। কিন্তু ফের যদি বিলটি বিধানসভায় পাস হয়, সেক্ষেত্রে আর বিল আটকে রাখা যাবে না, খারিজ করা যাবে না। সংবিধান বা দেশের নীতির পরিপন্থী মনে হলে, বিলটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে পারেন। কিন্তু কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করা রাজ্যপাল সেই নিয়ম মানছেন না, অনির্দিষ্টকালের জন্য বিল আটকে রেখে রাজ্যের কাজে বাধা সৃষ্টি করছেন বলে আদালতে গিয়েছিল তামিলনাড়ু সরকার। এর প্রেক্ষিতেই সময়সীমা বেঁধে দেয় আদালত। সেই নিয়ে রাষ্ট্রপতির চ্যালেঞ্জের শুনানি রয়েছে, যার জন্য ১২ অগাস্টের মধ্যে কেন্দ্রের হলফনামা চাওয়া হয়েছিল। ১৯ অগাস্ট থেকে প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাইয়ের নেতৃত্বে শুনানি শুরু হবে।