নয়াদিল্লি : নয়া 'হিট অ্যান্ড রান' আইন (New Hit and Run Law) নিয়ে আলোচনার আশ্বাস কেন্দ্রের। আশ্বাস পেয়ে দেশজুড়ে প্রতিবাদকারী ও বিক্ষোভ দেখানো ট্রাক চালকদের কাছে পুনরায় কাজ শুরু করার আর্জি জানাল পরিবহন সংস্থাগুলি। নতুন আইন অনুযায়ী, হিট অ্যান্ড রান মামলায় ১০ বছর কারাদণ্ডের বিষয়টি এখনও লাগু হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সরকারের আশ্বাস, কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর আগে পরিবহন সংস্থাগুলির সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তার পরেই উঠে যায় দেশজুড়ে চলা ট্রাক চালক ও পরিবহন সংস্থাগুলির প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি। 


কেন্দ্রের নতুন পরিবহণ আইনে বিপদে পড়বেন তাঁরা। বড়সড় আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়তে হবে। এই অভিযোগে দেশজুড়ে বিক্ষোভে সামিল হন ট্রাক ও লরি চালকরা। ভারতীয় দণ্ডবিধির পরিবর্তে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা এনেছে কেন্দ্র। এই আইনে গাড়ি দুর্ঘটনা নিয়ে নিয়মের কড়াকড়ি করা হয়েছে। বড়সড় পথ-দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলার পর, পুলিশ-প্রশাসনকে না জানিয়ে যদি চালকরা পালিয়ে যান, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে হিট-অ্যান্ড-রান মামলা দায়ের হবে। সেক্ষেত্রে দোষ প্রমাণ হলে চালকদের 
সর্বোচ্চ ১০ বছর সাজা অথবা ৭ লক্ষ টাকা জরিমানা হতে পারে। কেন্দ্রের এই আইনেরই বিরোধিতা করেন ট্রাক ও লরি চালকরা। কেন্দ্রীয় এই পরিবহণ নীতির বিরোধিতায় দেশজুড়ে ট্রাক চালকদের বিক্ষোভের আঁচ। যার প্রভাব পড়ে পেট্রোল পাম্পগুলিতে। মহারাষ্ট্র, হিমাচল প্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্যে দেখা দিয়েছে জ্বালানি-সঙ্কট। বাণিজ্য নগরী মুম্বইয়ে প্রতিদিন দেড় হাজার ট্রাক ঢোকে। কিন্তু বিক্ষোভ-আন্দোলনের জেরে গতকাল সকাল থেকে পেট্রোল পাম্পগুলিতে কোনও ট্রাক ঢোকেনি। ফলে পেট্রোল-ডিজেলের ভাণ্ডারে টান পড়তে শুরু করে। প্রায় ৫০ শতাংশ ঘাটতি দেখা দেয়। নাগপুর, ইন্দোর, ধর্মশালায় পেট্রোল পাম্পগুলির সামনে গাড়ির লাইন ক্রমশ লম্বা হতে থাকে গতকাল। শুধু পেট্রোল পাম্প নয়, প্রভাব পড়ে নভি মুম্বইয়ের ফল ও সব্জি বাজারেও। জোগান কমে যাওয়ায় চড়চড়িয়ে বাড়তে থাকে দাম। পেট্রোল-ডিজেল, LPG সিলিন্ডার সরবরাহ অব্যাহত রাখতে পুলিশকে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেয় মহারাষ্ট্র সরকার।


প্রভাব পড়ে এরাজ্যেও। এর প্রতিবাদে বছর শেষের দিন হুগলির ডানকুনিতে অবরোধ-আন্দোলন শুরু করেন ট্রাক ড্রাইভাররা। সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ে অবরোধ করা হয় জাতীয় সড়ক। ট্রাক চালকদের অবরোধের জেরে তীব্র যানজট দেখা দেয় বন্দর এলাকায়। সপ্তাহের দ্বিতীয় কাজের দিনে একাধিক রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। 


এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠক হয় পরিবহন সংস্থাগুলির। পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভাল্লা বলেন, 'আমরা অল ইন্ডিয়া মোটর ট্রান্সপোর্ট কংগ্রেস প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছি... সরকার বলতে চায় যে, নতুন নিয়ম এখনও কার্যকর করা হয়নি। আমরা বলতে চাই যে ভারতীয় ন্যায়সংহিতা ১০৬/২ বাস্তবায়নের আগে, আমরা অল ইন্ডিয়া মোটর ট্রান্সপোর্ট কংগ্রেস প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করব এবং তারপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'