ইস্তানবুল: নিজের পরিচয় দিতেন ধর্মগুরু হিসেবে। স্বল্পবসনা নারীদের নিয়ে টেলিভিশনে জীবনের পাঠও দিতে দেখা যেত। তুরস্কের সেই স্বঘোষিত ইসলামি (Muslim Preacher) ধর্মগুরুই এ বার বিরল সাজা পেলেন। জালিয়াতি, চরবৃত্তি, যৌন নিগ্রহ, শিশুদের উপর লালসা মেটানোর দায়ে তাঁকে সাড়ে ৮ হাজার বছরেরও বেশি সময়ের কারাবাস শোনাল সে দেশের আদালত (Istanbul)।
ইস্তানবুল আদালতে বিরল সাজা পেলেন আদনান ও তাঁর সহযোগীরা
ইস্তানবুল আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন স্বঘোষিত ইসলামি ধর্মগুরু আদনান ওকতার (Adnan Oktar)। বুধবার তাঁকে সাজা শোনায় আদালত। তাতে মোট ৮ হাজার ৬৫৮ বছরের কারাবাস দেওয়া হয় তাঁকে। তাঁর বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহ, শিশুদের যৌন নিগ্রহ, জালিয়াতি, রাজনৈতিক এবং সামরিক চরবৃত্তির অভিযোগও ছিল। সব মিলিয়ে বিরল সাজা শুনিয়েছে ইস্তানবুল আদালত।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বল্পবসনা নারীদের দ্বারা পরিবৃত হয়ে চেলিভিশনের পর্দায় আবির্ভূত হতেন আদনান। ওই সমস্ত মেয়েদের তিনি আদর করে 'বিড়ালছানা' বলে ডাকতেন। চড়া মেকআপে সেজে তাঁকে ঘিরে ধরে থাকতেন ওই মেয়েরা। তাঁদের মধ্যমণি হয়ে বসে টেলিভিশনের পর্দায় সৃষ্টিতত্ত্ব, রক্ষণশীল মূল্যবোধ নিয়ে লম্বা-চওড়া বক্তৃতা করতেন আদনান।
আরও পড়ুন: Twitter: কর্মীদের একের পর হুঁশিয়ারি ইলন মাস্কের, ছাঁটাইয়ের জন্য ট্যুইটে চাইলেন ক্ষমাও
এর আগে, গত বছরই ৬৬ বছর বয়সি আদনানকে ১ হাজার ৭৫ বছরের সাজা শোনা সে দেশের নিম্ন আদালত। কিন্তু অপরাধের গুরুত্ব অনুধাবন করে আদনানের বিরুদ্ধে থাকা মামলা পৌঁছয় উচ্চ আদালতে। মামলার পুনর্বিচার শুরু হয়। তাতে নিম্ন আদালতের রায় পাল্টে দেয় উচ্চ আদালত। ১ হাজার ৭৫ বছরের পরিবর্তে ৮ হাজার ৬৫৮ বছর কারাবাসের সাজা শোনানো হয়।
যৌন নিগ্রহ, জালিয়াতি, চরবৃত্তি ছাড়াও ইচ্ছের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা হরণের ধারা প্রয়োগ করা হয় আদনানের উপর। আদনানের পাশাপাশি আরও ১০ জন সন্দেহভাজনও দোষী সাব্যস্ত হয়েছে আদালতে। তাঁদের প্রত্যেকেও ৮ হাজার ৬৫৮ বছর কারাবাসের সাজা শোনানো হয়েছে। এমন বিরল সাজায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে দেশে এবং দেশের বাইরেও।
আগে ১০০০ বছরের সাজা হয়, পুনর্বিবেচনায় তা আরও বাড়ল
আদনানের সমালোচকরা যদিও তাঁকে ধর্মগুরু মনেই করেন না। তাঁদের মতে, আদনানকে আদতে 'কাল্ট' নেতা হয়ে গিয়েছেন। কুকর্মের জন্যই কিছু মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। টেলিভিশনের পর্দায় তাঁর কুরুচিকর অনুষ্ঠানও তাই গিলতে শুরু করেন অনেকে। আদনানের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন ধরেই সরব ছিলেন তুরস্কের ধর্মীয় নেতা-ব্যক্তিরা। অর্থনৈতিক অপরাধ সংক্রান্ত একটি মামলায় ২০১৮ সালে ইস্তানবুল পুলিশ আদনানকে হেফাজতে নেয়। তাঁর সংগঠন এবং অনুগামীদেরও ধর-পাকড় করা হয়।