নয়াদিল্লি: দিল্লির তিহাড় জেলের পরিবেশ কেমন, বন্দিদের রাখার উপযুক্ত কি না, তা খতিয়ে দেখল ব্রিটেনের সংস্থা। বিজয় মাল্য ললিত মোদি, নীরব মোদি, সঞ্জয় ভাণ্ডারীর মতো অর্থনৈতিক অপরাধে যুক্ত ব্যক্তিত্ব, যাঁরা ভারত ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন, ব্রিটেনে রয়েছেন এই মুহূর্তে, তাঁদের দেশে ফেরানোর চেষ্টা চালাচ্ছে দিল্লি। কিন্তু তিহাড় জেলের পরিবেশ, সেখানকার অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল ব্রিটেনের আদালত। তাই আদতে তিহাড় জেল কেমন, রাজধানীতে এসে দেখে গেলেন ব্রিটেনের প্রতিনিধিরা। (Tihar Jail)
ব্রিটেনের Crown Prosecution Service (CPS) ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে অপরাধ সংক্রান্ত মামলার আইনি দিকগুলি খতিয়ে দেখে। তাদের একটি প্রতিনিধি দল জুলাই মাসে দিল্লিতে এসে পৌঁছয়। দিল্লিতে নেমে সটান তিহাড় জেলে চলে যায় ওই প্রতিনিধি দল। চার জনের ওই প্রতিনিধি দলে দুই বিশেষজ্ঞ এবং ব্রিটিশ হাই কমিশনের দুই অধিকারিক ছিলেন। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মোড়া তিহাড়ের ওয়ার্ড ঘুরে দেখেন তাঁরা। বন্দিরা কী ধরনের নিরাপত্তা পান, তা খতিয়ে দেখেন। পাশাপাশি, কিছু বন্দির সঙ্গে কথাও হলেন তাঁরা। (Indian Fugitives)
তিহাড় সূত্রে খবর, তিহাড়ের পরিবেশ, ব্যবস্থাপনা দেখে সন্তুষ্টিই প্রকাশ করেন ব্রিটেনের প্রতিনিধিরা। কারাব্যবস্থার প্রশংসা করেন তিনি, তা যে আন্তর্জাতিক মানের, সেব্যাপারে ঐক্যমত্য প্রকাশ করেন। শুধু তাই নয়, তিহাড় কর্তৃপক্ষ তাঁদের সবরকম ভাবে আশ্বস্তও করেন। জানানো হয়, পলাতকদের দেশে প্রত্যর্পণের জন্য প্রয়োজনে আলাদা কুঠুরি তৈরি করা হবে, যাতে জেলের মধ্যে হাই-প্রোফাইল বন্দিদের কোনও অসুবিধা না হয়, তাঁদের প্রয়োজন পূরণ হয়। জেলের মধ্যে কোনও বিপদেও যাতে পড়তে না হয়, তাও দেখা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয় ব্রিটেনের প্রতিনিধিদের।
ব্রিটেনের প্রতিনিধিদল যেভাবে তিহাড় জেল ঘুরে দেখলেন, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ বিজয় মালিয়া, ললিত মোদি, নীরব মোদি, সঞ্জয় ভাণ্ডারীর মতো তাবড় পলাতক ব্যক্তিত্ব, অর্থনৈতিক অপরাধে যাঁদের নাম জড়িয়েছে, তাঁদের দেশে ফেরাতে মরিয়া কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু ভারতে তাঁদের প্রত্যর্পণ করা নিয়ে কয়েক মাস আগে উদ্বেগ প্রকাশ করে ব্রিটেনের একটি কোর্ট। তিহাড়ে প্রাণের ঝুঁকি রয়েছে, তাঁকে হুমকির মুখে পড়তে হতে পারে, হিংসার মুখে পড়তে হতে পারে বলে আদালতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন হাই-প্রোফাইল অস্ত্র কারবারি সঞ্জয়।
ভারতের প্রত্যর্পণের আর্জির বিরুদ্ধে সঞ্জয়ের সেই আবেদন গৃহীত হয় আদালতে। এর পর ব্রিটেনের তরফে ভারতের তিহাড় জেলের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। কোনও বন্দির সঙ্গে জেলের মধ্যে দুর্ব্যবহার করা হবে না বলে লিখিত প্রতিশ্রুতি চাওয়া হয় ভারতের কাছ থেকে। আর তারই অংশ হিসেবে ব্রিটেনের প্রতিনিধিরা তিহাড় জেল পরিদর্শন করে গিয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে অপরাধ ঘটিয়ে পালিয়েছেন, এই মুহূর্তে বিদেশে রয়েছেন, এমন ১৭৮ জনকে ফিরিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন দেশের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ২০ জন ব্রিটেনে রয়েছেন, যাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিজয় মাল্য, ললিত মোদি, নীরব মোদি, সঞ্জয় ভাণ্ডারী এবং বেশ কয়েক জন খালিস্তানপন্থী নেতা।