নয়াদিল্লি: ২০২৫ সালে ভারতের জনসংখ্যা ১৪৬ কোটিতে পৌঁছবে। জনসংখ্যার নিরিখে পৃথিবীর মধ্যে শীর্ষেই থাকবে ভারত। রাষ্ট্রপুঞ্জের জনসংখ্যা-সংক্রান্ত রিপোর্টে এমনই পরিসংখ্য়ান উঠে এল। সেই সঙ্গে ভারতে জন্মের হার যে অনেকটাই কমেছে, তাও তুলে ধরেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। (India Population 2025)
United Nations Population Fund-এর ২০২৫ State of World Population Report-এ ভারতের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, জন্মের হার কমে যাওয়া নিয়ে আতঙ্ক না ছড়িয়ে, তার মোকাবিলা করার রাস্তা খুঁজতে হবে। প্রজনন নিয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে মানুষের মধ্যে। কারণ লক্ষ লক্ষ মানুষের এ সম্পর্কে সঠিক ধারণাই নেই। কিছু বোঝার আগেই গর্ভে সন্তান চলে আসে ৩৬ শতাংশ ভারতীয়ের, ৩০ শতাংশ ভারতীয় আবার কম বা বেশি সন্তান নিয়ে অসন্তুষ্ট। (India Fertility Rate 2025)
রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, কম বা বেশি জনসংখ্যা আসল সমস্যা নয়। আসল সমস্যা লুকিয়ে প্রজনন সম্পর্কে অজ্ঞানতার মধ্যে। যৌন সম্পর্ক, নিরোধক সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান নেই মানুষের। সেই নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতাও নেই। নিজের পরিবারকে নিয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
ভারতে জনসংখ্যার বিন্যাস, জন্মের হার এবং গড় আয়ুতেও পরিবর্তন চোখে পড়ছে। বলা হয়েছে, ভারতে জন্মের হার প্রত্যেক মহিলা পিছু ১.৯-এ নেমে গিয়েছে, যা প্রতিস্থাপক ২.১-এর চেয়েও কম। স্বাভাবিক প্রজনন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এক প্রজন্মের শূন্যস্থান পূরণে অন্য প্রজন্মের এগিয়ে আসার প্রতিস্থাপক হার বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ ভারতীয় মহিলারা যথেষ্ট সংখ্য়ায় সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন না বলে রিপোর্টে ধরা পড়েছে।
তবে জন্মের হার কমলেও, ভারতের তরুণ জনসংখ্যার ভিত মজবুত রয়েছে। মোট জনসংখ্যার ২৪ শতাংশের বয়স ০-১৪, ১৭ শতাংশের ১০-১৯, ২৬ শতাংশের ১০-২৪। ভারতের মোট জনসংখ্যার ৬৮ শতাংশ কর্মক্ষম, অর্থাৎ ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সের মানুষে পরিশ্রম করতে সক্ষম। কর্মসংস্থানের যথেষ্ট সুযোগ তৈরি হলে, মানুষের সুবিধার কথা মাথায় রেখে নীতি তৈরি হলে, দেশের আরও এগিয়ে যাবে।
২০২৫ সাল শেষ হতে হতে ভারতে পুরুষদের গড় আয়ু ৭১ বছর এবং মহিলাদের গড় আয়ু ৭১ বছরে পৌঁছবে। ২০২৫ সাল শেষ হতে হতে ভারতের মোট জনসংখ্যা হবে ১৪৬ কোটি ৯০ লক্ষ। পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারত। আগামী ৪০ বছরে ভারতের জনসংখ্যা আরও বেড়ে হবে ১৭০ কোটি। কিন্তু তার পর থেকে জনসংখ্যা কমতে শুরু করবে বলে উঠে এসেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টে।
বলা হয়েছে, ১৯৬০ সালে ভারতের জনসংখ্যা ছিল ৪৩.৬ কোটি। সেই সময় গড়ে মহিলারা ছয়টি করে সন্তান ধারণ করতেন। সাতের দশকে সেই সংখ্যা এসে পৌঁছয় মহিলা পিছু পাঁচ সন্তানে। সেই সময় নিজের জীবন ও শরীরের উপর তেমন অধিকার ছিল না মহিলাদের। প্রতি চার জনের মধ্যে একজনের কম নিরোধক ব্যবহার করতেন। একজনেরও কম মহিলা প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ পেতেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে মহিলাদের শিক্ষা ও কাজের সুযোগ বেড়েছে। নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার অধিকার পেয়েছেন। বর্তমানে ভারতের প্রত্যেক মহিলা গড়ে দু’টি করে সন্তান ধারণ করেন। তবে আগের চেয়ে এখন ভারতের মহিলারা অনেক এগিয়ে থাকলেও, কয়টি সন্তান চান, কখন সন্তান চান, তা নিয়ে এখনও পুরোপুরি সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতা অর্জন করতে পারেননি তাঁরা। প্রসূতি মৃত্যুর হার কমেছে আগের তুলনায়।
রাষ্ট্রপুঞ্জের আয়ের নিরিখে ভারতকে মাঝারি-আয়ের দেশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আগামী ৭৯ বছরে ভারতের আয় বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ হবে বলে উঠে এসেছে রিপোর্টে। বলা হয়েছে, ভারতীয় সমাজের গভীরে জাতপাত, আয়ের নিরিখে অসাম্য় আজও রয়ে গিয়েছে। প্রত্যেককে প্রজননের স্বাধীনতা দেওয়া গেলে, তাঁদের অধিকার সুনিশ্চিত করা গেলে, পাশাপাশি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে গুরুত্ব দিলে, ভারতের উন্নতি আটকানো যাবে না বলে মত গবেষকদের।