নয়াদিল্লি: লাগাতার অনুপ্রবেশের ঘটনা সামনে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে কড়া পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত। মায়ানমার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া বসনোর সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। পড়শি দেশ থেকে অনুপ্রবেশ আটকাতেই এমন সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah) খোদ এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, আগামী দিনে বাংলাদেশ সীমান্তের মতোই নিরাপত্তা পেতে চলেছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। (India Myanmar Relations)
সাম্প্রদায়িক হিংসা, অশান্তির জেরে লাগাতার উত্তপ্ত মায়ানমার। প্রাণহানি এড়াতে সীমান্ত পেরিয়ে দলে দলে তাই মায়ানমার থেকে মানুষজন ভারতে প্রবেশ করছেন। সম্প্রতি মায়ানমার সেনার একটি দলও ভারতে ঢুকে আসে। তার পরই এই ঘোষণা করলেন শাহ। অসমে পুলিশ কম্যান্ডোদের একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে ভারত-মায়ানমার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া বসানোর কথা জানান তিনি। বলেন, "বাংলাদেশ সীমান্তের মতো ভারত-মায়ানমার সীমান্তও নিরাপত্তা পেতে চলেছে। মুক্ত সীমান্তে বসবে কাঁটাতারের বেড়া।"
কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত তিন মাসে মায়ানমার থেকে কমপক্ষে ৬০০ সেনা ভারতে প্রবেশ করেছেন। মায়ানমারের পশ্চিমের রাখিন প্রদেশের আরাকান সশস্ত্র বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়ে, সম্প্রতি মিজোরামের লংতলাই জেলায় এসে আশ্রয় নেন তাঁরা। সোশ্যাল মিডিয়াতেও সেই ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। তাই মায়ানমার সীমান্তের নিরাপত্তা বৃদ্ধির উপর জোর দিচ্ছে কেন্দ্র।
এমনিতে ভারত এবং মায়ানমারের মধ্যে Free Movement Regime (FMR) চুক্তি রয়েছে, যার আওতায় ভারতের সঙ্গে পারিবারিক, সামাজিক এবং জাতিগত সংযোগ রয়েছে পড়শি দেশের যে সমস্ত মানুষের, ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়া ভারতে প্রবেশ করতে পারেন তাঁরা। একই ভাবে ভারত থেকেও মায়ানমারে প্রবেশ করা সম্ভব। তাই সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া বসানো হলে, সেই চুক্তি আর বৈধ থাকবে না। ভারতে ঢুকতে হলে মায়ানমারের নাগরিকদের বৈধ ভিসা এবং পাসপোর্ট দেখাতে হবে।
অরুণাচলপ্রদেশ থেকে মিজোরাম পর্যন্ত ভারত এবং মায়ানমারের মধ্যে ১৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সীংহ দীর্ঘদিন ধরেই FMR তুলে দিয়ে, সীমান্তে কাঁটাতার বসানোর আর্জি জানিয়ে আসছিলেন। মায়ানমার থেকে উগ্রপন্থী, বেআইনি অভিবাসী এবং মাদক পাচারকারীরা ওই চুক্তিকে ব্যবহার করে ভারতে ঢুকে পড়ছেন এবং মণিপুরে অস্থিরতা তৈরি করছেন বলে দাবি করেন তিনি।
যদিও মিজোরাম সরকার কেন্দ্রকে জানিয়েছে, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া বসানোর বিরোধী তারা। মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লাডুহোমা জানিয়েছেন, ইংরেজ আমলে সীমান্তরেখা টানা হয়। দুই তরফের মানুষজনই কাঁটাতারের ঘোর বিরোধী। কারণ দুই দিকেই পরস্পরের পরিবার, আত্মীয় রয়েছে। FMR বাতিলের পক্ষেও সায় নেই মিজোরামের, জানিয়েছেন লাডুহোমা। ১৯৭০ সালে FMR চালু করা হয়, যাতে দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে সংযোগ বজায় থাকে।