নয়াদিল্লি: পাকিস্তানের সর্বকালীন ক্ষমতাশালী সেনাপ্রধান হয়েছেন বটে। কিন্তু এই মুহূর্তে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে আসিম মুনির। গাজ়ায় সেনা পাঠাতে পাকিস্তানের উপর চাপ দিচ্ছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু ওই প্রস্তাব মেনে নিলে দেশের অন্দরেই বিরোধিতার মুখে পড়তে হতে পারে মুনিরকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে তাই ফের আমেরিকা সফরে যাচ্ছেন তিনি। গত ছ’মাসে এই নিয়ে তৃতীয় বার ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানেই গাজ়ায় সেনা পাঠানো নিয়ে বিশদ আলোচনা হবে। (Gaza Peace Plan)

Continues below advertisement

ইজ়রায়েলের সঙ্গে সংঘাত মিটিয়ে, গাজ়ায় দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা পেশ করেছেন ট্রাম্প। গাজ়ায় শান্তি ফেরাতে মোট ২০টি প্রস্তাব দেন ট্রাম্প, যাতে সায় মিলেছে রাষ্ট্রপুঞ্জেরও। গাজ়ায় International Stabilistaion Force (ISF) মোতায়েনের প্রস্তাব দিয়েছেন ট্রাম্প। গাজ়ায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি বজায় থাকে যাতে, সেখানকার নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয়, তা দেখবে ISF. গাজ়ার ‘নিরস্ত্রীকরণে’র জন্যও ওই পরিকল্পনা ট্রাম্পের, যারা ইজ়রায়েল ও মিশরের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করবে, প্যালেস্তাইন পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেবে। (Asim Munir) 

মিশর, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো দেশ ইতিমধ্যেই ISF-এ বাহিনী দিতে রাজি হয়েছে বলে খবর। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তইপ এর্দোয়ানও গাজ়ায় সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। গাজ়াকে নতুন করে গড়ে তুলতে সব মুসলিম দেশের সাহায্য় চেয়েছেন ট্রাম্প। গাজ়ায় ISF বাহিনীকে নেতৃত্ব দেবেন কে, তাও ঠিক করবেন তিনিই। আমেরিকার কোনও জেনারেলকেই তিনি বেছে নেবেন বলে খবর। (Donald Trump)

Continues below advertisement

সেই আবহেই মঙ্গলবার কাতারে বিশেষ সম্মেলনের আয়োজন হয়, যেখানে গাজ়া ISF-কে মোতায়েন করা নিয়ে কথা হয়। একাধিক দেশ ওই সম্মেলনে অংশ নেয়। পাকিস্তান, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, কাতার, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, আজেরবাইজানকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে হামাসের প্রতি সমব্যথী, ইজ়রায়েলের প্রতিদ্বন্দ্বী তুরস্ক সম্মেলনে অংশ নেয়নি। (Pakistan News)

সম্মেলনে অংশ নিলেও মুসলিম দেশগুলি গাজ়া নিয়ে চিন্তিত। হামাসের সঙ্গে তাদের মুখোমুখি দাঁড় করানো হতে পারে বলে আশঙ্কা। এর মধ্যে পাকিস্তানি একমাত্র মুসলিম দেশ, যাদের কাছে পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। প্যালেস্তাইন ইস্যুতে বরাবরই ইজ়রায়েলের বিরোধিতা করে আসছে পাকিস্তান। পৃথক প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের সমর্থক পাকিস্তান, ইজ়রায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্ব স্বীকার করে না। 

পাকিস্তানের পাসপোর্টে পরিষ্কার বলা রয়েছে, সেটি ইজ়রায়েলে প্রবেশের জন্য বৈধ নয়। সেই সঙ্গে ইজ়রায়েলকে ভারতঘনিষ্ঠ হিসেবেও দেখে পাকিস্তান।তাই সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, বাহরাইন, মরক্কো,সুদানের মতো মুসলিম দেশগুলির সঙ্গে আমেরিকার আনা ‘অ্যাব্রাহাম চুক্তি’তেও সই করেনি পাকিস্তান, যার মাধ্যমে ইজ়রায়েলের সঙ্গে মুসলিম দেশগুলির সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা হয়েছে। তাই এখন গাজ়ায় সেনা পাঠানোর প্রস্তাবে পাকিস্তান রাজি হবে কি না, প্রশ্ন আন্তর্জাতিক মহলেও। 

তবে এই মুহূর্তে মুনিরই সবচেয়ে চাপে রয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। নিজেকে ধর্মপ্রাণ মুসলিম হিসেবে তুলে ধরার পাশাপাশি, ইসলামের রক্ষক হিসেবেও তুলে ধরেছেন। তাই গাজ়ায় সেনা পাঠালে, তাঁর ভাবমূর্তি নিয়েও প্রশ্ন উঠে যাবে। পাকিস্তানের ইসলামি সংগঠন থেকে ধর্মীয় নেতারা মুনিরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলে, তাঁর আসন টলমল হতে পারে। পাশাপাশি, তুরস্ক, ওমান, কাতারের মতো দেশ, যারা বিপদে আপদে পাকিস্তানের পাশে থেকেছে, রুষ্ট হতে পারে তারাও। 

কিন্তু মুনির ট্রাম্পকে চটাতে চাইবেন কি না, উঠছে সেই প্রশ্নও। কারণ ভারতের সঙ্গে সংঘাত পর্বের পর থেকেই আমেরিকা এবং পাকিস্তানের সম্পর্কে বেশ উন্নতি চোখে পড়েছে। হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়েছিলেন মুনির। সেখানে মুনিরের ভূয়সী প্রশংসা করেন ট্রাম্প। পাকিস্তানে বিনিয়োগ বেড়েছে আমেরিকার। আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার থেকে নিয়মিত অর্থসাহায্য়ও মিলছে।  তাই গাজ়ায় সেনা পাঠাতে রাজি না হলে, মুনিরের প্রতি ট্রাম্প রুষ্ট হতে পারেন। 

গাজ়ায় সেনা পাঠানো নিয়ে গত মাসে মুখ খোলেন পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ইশাক দার। গাজ়ায় শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানোর বিষয়টি ভেবেচিন্তে দেখা হবে বলে জানান তিনি। কিন্তু হামাসকে ‘নিরস্ত্রীকরণে’র প্রশ্ন উঠলে সাফ বলেন, “ওটা আমাদের কাজ নয়।” তাই গাজ়া নিয়ে শেষ পর্যন্ত কী করেন মুনির, সেদিকে তাকিয়ে সকলেই।