নয়াদিল্লি: কর্মসূত্রে আমেরিকায় পা রাখা মানুষজনই নয় শুধু, উচ্চশিক্ষাতেও বিদেশিদের আগমন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পএবং তাঁর সরকার বিদেশি বিতাড়নে অতি তৎপর হয়ে উঠেছে। নামী ইউনিভার্সিটিতে পাঠরত বিদেশি পড়ুয়াদেরও শনাক্তকরণের প্রচেষ্টা চলছে সেখানে। সেই নিয়ে লস অ্যাঞ্জেলস-সহ আমেরিকার বিভিন্ন শহর এই মুহূর্তে অগ্নিগর্ভ। আর তার মধ্যেই ভারতীয়দের উদ্দেশে ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা এখানে আমেরিকার দূতাবাসের। বলা হয়েছে, বৈধ পর্যটকদের দেশে স্বাগত জানিয়ে চলছে আমেরিকা। কিন্তু তার অর্থ আমেরিকায় প্রবেশ কোনও অধিকার নেই।

Continues below advertisement

আমেরিকার নেওয়ার্ক বিমানবন্দরে পিছমোড়া করে, হাতকড়া পরানো অবস্থায় ভারতীয় পড়ুয়াকে মাটিতে ফেলে রাখার ভিডিও ঘিরে এই মুহূর্তে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে। আর সেই আবহেই ভারতে আমেরিকার দূতাবাসের তরফে ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা দেওয়া হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলে লেখা হয়েছে, 'আমেরিকা বৈধ পর্যটকদের নিজের দেশে স্বাগত জানায়। কিন্তু আমেরিকায় প্রবেশের কোনও অধিকার নেই। বেআইনি অনুপ্রবেশ, ভিসার অপব্যবহার বা আমেরিকার আইনের লঙ্ঘন বরদাস্ত করব না আমরা'।

'আমেরিকায় প্রবেশের কোনও অধিকার নেই' বলে যে বাক্যটি লেখা হয়েছে, তা সকলের নজর কাড়ছে। এই মুহূর্তে অভিবাসী তাড়াতে তৎপর হয়ে উঠেছে ট্রাম্প সরকার। বৈধ কাজগপত্র না থাকায় ব্যাপক ধরপাকড় চলছে সেদেশে। তবে শুধুমাত্র বেআইনি অভিবাসী বিতাড়ন নয়, ট্রাম্প সরকার আসলে আমেরিকাকে বিদেশি-মুক্ত করতে তৎপর হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। এমনকি দেশের নামী ইউনিভার্সিটিগুলিতে বৈধ কাগজপত্র নিয়ে যাঁরা পড়তে যান, তাঁদের উপরও নজর রয়েছে ট্রাম্প সরকারের। যে কারণে বিদেশি পড়ুয়া ভর্তি নেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। তাই 'আমেরিকায় প্রবেশ কোনও অধিকার নয়' বলে কি ভারতীয়দের সতর্ক করে দিল তাদের দূতাবাস? উঠছে প্রশ্ন।

একদিন আগেই এক ভারতীয় পড়ুয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভিডিওটি পোস্ট করেন এক প্রবাসী ভারতীয়ই। আমেরিকায় বিদেশি পড়ুয়াদের সঙ্গে অপরাধীর মতো আচরণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। ওই প্রবাসী ভারতীয় জানান, নেওয়ার্ক বিমানবন্দরে এক ভারতীয় পড়ুয়াকে হাতে হাতকড়া পরিয়ে, তাঁর সঙ্গে অপরাধীর মতো আচরণ করা হচ্ছিল। ওই তরুণ নিজের স্বপ্নরূরণে আমেরিকায় পা রেখেছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে আমেরিকায় প্রবাসী ভারতীয়রা অসহায় বোধ করছেন, হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে বলে লেখেন ওই প্রবাসী ভারতীয়। 

সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়, তাতে দেখা যায় ভারতীয় তরুণের হাত পিছমোড়া করে হাতকড়া পরানো হয়েছে। উল্টো করে মাটিতে চেপে ধরে রাখা হয়েছে তাঁকে। হরিয়ানার ভাষায় ওই তরুণ বলে চলেছেন, তিনি পাগল নন। কিন্তু জোর করে তাঁর ঘাড় ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কংগ্রেসের তরফেও সেই নিয়ে পোস্ট করা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এভাবে ভারতীয় পড়ুয়াদের অপমান করা যায় না বলে লিখেছে তারা। সেই নিয়ে কাটাছেঁড়ার মধ্যেই এই পোস্ট। 

আমেরিকায় যুগ যুগ ধরে প্রবাসী ভারতীয়রা বাস করছেন। ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমেরিকায় বসবাসকারী ভারতীয় ও ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের সংখ্যা প্রায় ৫২ লক্ষ। আমেরিকায় যে দেশের যত সংখ্যক অভিবাসী আছেন, তাঁদের মধ্যে ভারত দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। কিন্তু চলতি বছরে আমেরিকায় ক্ষমতায় ফিরেই অভিবাসী নীতি বদল করেন ট্রাম্প। ভিসার নিয়ম কানুনও কঠোর করা হয় আগের তুলনা। সেই সঙ্গে দলে দলে অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো শুরু হয়। বৈধ কাগজপত্র নেই বলে জানিয়ে হাতে-পায়ে, কোমরে বেড়ি পরিয়ে অপরাধীর মতো সামরিক বিমানে চাপিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হয় অভিবাসীদের। ফেরত পাঠানো হয় ভারতীয়দেরও। 

তাই এভাবে ভারতীয়দের উদ্দেশে আমেরিকার দূতাবাস যে পোস্ট করেছে, তাতে তীব্র প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে। একজন লেখেন, 'মনে হচ্ছে, আমেরিকার বুদ্ধিসুদ্ধিই শুধু লোপ পায়নি, হিটলারের নাৎজি বাহিনীর মতো আচরণ করছে ওরা। বিদেশিদের সঙ্গে এমন আচরণ করেন আপনারা? আপনাদের এবং ট্রাম্পের লজ্জা হওয়া উচিত'। আর এক জন লেখেন, 'ধন্যবাদ। এবার আমরা বাংলাদেশি, পাকিস্তানি, মায়ামনমার, নাইজিরিয়া, ফিলিপিন্সের লোকজনকে বের করে দিলে কোনও কথা বলতে আসবেন না'। তৃতীয় একজন লেখেন, 'আমি চিনকে বিশ্বাস করব, কিন্তু আমেরিকাকে করব না। চিন নিজের অভিসন্ধি মুখের উপর বলে দেয়। আমেরিকা প্রথমে বন্ধুত্বের কথা বলে, তার পর পিছন থেকে কামড়ে ধরে। পৃথিবীতে যত সমস্যা, তার নেপথ্যে দুই দেশ, আমেরিকা এবং ব্রিটেন'।ট