কলকাতা:  ৬৯ বছরের লরেন্স নোকেস কোমায় চলে গিয়েছিলেন। বাঁচার আশা ছিল না। ১০ এপ্রিল সরানো হয় ভেন্টিলেটর থেকে। উঠে শুনলেন, তাঁর স্ত্রী মারা গিয়েছেন করোনাতে। সমস্ত চিকিৎসা অস্বীকার করে মৃত্যু বরণ করলেন তিনিও।


আমেরিকার মেরিল্যান্ডের মাউন্ট এয়ারির প্লেসান্ট ভিউ নার্সিং হোমে নার্সিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন লরেন্স। এলাকার ৯৫ জন বাসিন্দার মধ্যে ৮৪ জনের করোনা ধরা পড়ে। শুশ্রুষা করতে করতে আক্রান্ত হয় লরেন্সও। ৩০ মার্চ তাঁকে ক্যারল হসপিটাল সেন্টারে  ভর্তি করা হয়, পাঠানো হয় ইনকিউবেটরে। এক সপ্তাহর মত কোমায় থাকার পর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয় তাঁর। নিজে নিজেই শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে শুরু করেন তিনি।  জ্ঞান ফিরে আসার পর লরেন্স প্রথমেই জিজ্ঞাসা করেন তাঁর স্ত্রী মিনেটের কথা।  ৭১ বছরের মিনেটের সঙ্গে ২৪ বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়, এতদিন তাঁর সংসার হাসিমুখে ধরে রেখেছিলেন তিনি।

বারবার স্ত্রীর কথা জানতে চাওয়ায় খানিকটা বাধ্য হয়েই চিকিৎসকরা তাঁকে জানান মিনেটের মৃত্যু হয়েছে। লরেন্সকে এমার্জেন্সি বিভাগে ভর্তি করার পর আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। স্বামীকে নিয়ে উদ্বেগ বাড়তে থাকে। নিজেও কোয়ারান্টাইনে থাকায় পরিবারের কাউকে ডাকতে পারেননি। তাঁর ৭২তম জন্মদিনের ঠিক একদিন আগে, ৭ এপ্রিল ঘুমের মধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মিনেট মারা যান।  মৃত্যুর পর পরীক্ষায় দেখা যায়, করোনা হয়েছিল তাঁরও।

লরেন্স এ কথা জানতে পারার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। চিকিৎসা কর্মীদের তিনি বলেন,  আর তিনি কোনওরকম ওষুধপত্র নেবেন না, এ ব্যাপারে সই করার কাগজপত্র চেয়ে পাঠান। বলেন, হাসপাতাল থেকে তাঁকে ছেড়ে দিতে হবে। এর পরের ৫ দিন ধরে ছেলেমেয়ে, নাতি নাতনিদের সঙ্গে দেখা করেন লরেন্স, বলে দেন, তাঁর জিনিসপত্রের কেমন বিলি বন্দোবস্ত হবে। এমনকী বারবার ক্ষমাও চান তাঁদের কাছে, কারণ স্ত্রীর অসুস্থতার দায় এড়াতে পারছিলেন না তিনি।

মিনেটের মৃত্যুর ৮ দিন পর মারা যান লরেন্সও। তিনি যে নার্সিংহোমে কর্মরত ছিলেন, তাঁকে নিয়ে সেখানকার ১১ জন কর্মীর করোনায় মৃত্যু হল।