নয়াদিল্লি: আমেরিকার মসনদে দ্বিতীয়বার প্রত্যাবর্তন ঘটেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বের কথা শোনা গেলেও, গত কয়েক মাসে দিল্লির অস্বস্তি লাগাতার বাড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। এবার ভারতে সংখ্যালঘুদের অবস্থা নিয়েও সমালোচনা করল আমেরিকা। শুধু তাই নয়, ভারতের গুপ্তচর সংস্থা Research and Analysis Wing (RAW)-কেও নিষিদ্ধ করার দাবি উঠল। সেই নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত। রিপোর্টটিকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে উল্লেখ করা হয়েছে। (Commission on International Religious Freedom)

US Commission on International Religious Freedom (USCIRF) মঙ্গলবার তাদের রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেই রিপোর্টে ভারতের সংখ্যালঘু নাগরিকদের নিরাপত্তা বিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। পাশাপাশি, ভারতের গুপ্তচর সংস্থা RAW-কে নিষিদ্ধ করার সুপারিশও করা হয়েছে রিপোর্টে। বিদেশের মাটিতে শিখ বিচ্ছিন্নতাকামীদের খুনে RAW এজেন্টরা খুন করেছে বলে এর আগে দাবি করেছিল কানাডা। শিখ বিচ্ছিন্নতাকামীদের খুনের নেপথ্যে RAW-র ভূমিকার কথা তুলে ধরা হয়েছে এই রিপোর্টেও। ভারতের মতো ভিয়েতনামের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক নিয়েও আমেরিকার ভাবনাচিন্তা করা উচিত, ভিয়েতনামকেও 'উদ্বেগজনক দেশ' হিসেবে চিহ্নিত করার কথা বলা হয়েছে। (RAW Sanction Recommendations)

US Commission on International Religious Freedom-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, '২০২৪ সালে ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতার ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও হামলা বাড়ছে'। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, নির্বাচনী প্রচার চলাকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তাঁর দল ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP) সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়েছেন। ভারতকে 'উদ্বেগজনক' দেশের তালিকায় রাখতে সুপারিশ করা হয়েছে রিপোর্টে। 

US Commission on International Religious Freedom আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের তৈরি একটি সংগঠন, যারা বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে রিপোর্ট দেয় এবং সেই মতো সরকারের কাছে রিপোর্ট জমা দেয়। ভারতে সংখ্যালঘুদের অবস্থা নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে তারা। কিন্তু গুপ্তচর সংস্থা RAW-কে নিষিদ্ধ করার সুপারিশ আগে কখনও প্রকাশ্যে আসেনি। ফলে সেই নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। 
বিদেশের মাটিতে RAW-এর গতিবিধি নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই প্রশ্ন ধেয়ে আসছিল। আমেরিকা এবং কানাডার মাটিতে খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাকামী, যাদের ভারত সরকার জঙ্গি হিসেবে গণ্য করে, তাদের RAW এজেন্টরা খুন করছেন বলে অভিযোগ ওঠে। ২০২৩ সালে প্রথম এ নিয়ে ভারতের দিকে আঙুল ওঠে। আমেরিকার মাটিতে RAW-এর একটি পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার পর সেখানে মোতায়েন অফিসার বিকাশ যাদবকে ডেকে পাঠিয়ে ওয়াশিংটন সমঝে দেয় বলেও দাবি সামনে আসে। কানাডার তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো দেশের সংসদে দাঁড়িয়ে সরাসরি ভারত সরকার এবং RAW-র দিকে আঙুল তোলেন। কানাডার মাটিতে RAW বেআইনি ভাবে হিংসা ও রক্তপাত ঘটাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। সেই নিয়ে তীব্র টানাপোড়েন শুরু হয় দুই দেশের মধ্যে। US Commission on International Religious Freedom-এর রিপোর্টে RAW-কে নিষিদ্ধ করার সুপারিশ ঘিরে তাই উদ্বেগ বাড়ছে।
 
বুধবার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ভারত সরকার যদিও ওই রিপোর্টের দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছে। বিদেশমন্ত্রকের তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, 'US Commission on International Religious Freedom-এর রিপোর্ট দেখেছি আমরা। বরাবরের মতো রিপোর্টটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পক্ষপাতদুষ্ট'। রিপোর্টটিকে কার্যত 'ভুয়ো' বলেও উল্লেখ করেছে দিল্লি। বলা হয়েছে, 'কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে ভুল ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ভারতের প্রাণবন্ত, বহুত্ববাদী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা গচ্ছে, তার নেপথ্যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নীতিই ফুটে উঠছে, ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ নয়'। সংগঠন হিসেবে US Commission on International Religious Freedom-কে নিয়েই উদ্বেগ রয়েছে বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দিল্লি।