নয়াদিল্লি: উত্তর কোরিয়ায় গোপন অভিযান চালাতে গিয়ে ব্যর্থ হয় আমেরিকার সেনা, শেষে নিরীহ নাগরিকদের হত্যা করে ফিরে যায় তারা, এবার এমনই মারাত্মক অভিযোগ সামনে এল। ২০১৯ সালে এই ঘটনা ঘটে, যে সময় প্রথম দফায় আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পই। তাঁর নির্দেশেই এই গোপন অভিযান চালানো হয়, যা এতদিন কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি বলে দাবি। (US-North Korea Relations)

আমেরিকার নিউ ইয়র্ক টাইমস সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উনের পরমাণু পরিকল্পনা জানতে অভিযান চালানো হয়। ঠিক ছিল, আমেরিকার নৌবাহিনী SEAl রাতের অন্ধকারে উত্তর কোরিয়ায় ঢুকবে। সেখানে এমন প্রযুক্তি ও ডিভাইস বসিয়ে আসবে, যার মাধ্যমে কিমের সমস্ত কথোপকথন, পরমাণু পরিকল্পনা আমেরিকার হাতে পৌঁছে যাবে। (US Mission in North Korea)

পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে ওসামা বিন লাদেনকে নিকেশ করতে SEAL-এর যে অতি দক্ষ Red Squadron-কে ব্যবহার করা হয়, উত্তর কোরিয়াতেও সেই দলকেই পাঠান ট্রাম্প।  অভিযান এত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল যে সরাসরি ট্রাম্পের অনুমোদন প্রয়োজন ছিল। কারণ SEAL বাহিনী ধরা পড়ে গেলে আমেরিকার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু সমঝোতা ভেস্তে যেত এবং SEAL-এর অফিসারদের পণবন্দি করে রাখত পিয়ংইয়ং। 

হিমশীতল জলে সেই মতো বেশ কয়েক মাস প্রশিক্ষণও নেন SEAL-এর অফিসাররা। পরমাণু শক্তি সম্পন্ন একটি সাবমেরিনে চেপে উত্তর কোরিয়ার ঢোকার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। পাশাপাশি, দু’টি ছোট আকারের সাবমেরিন ব্যবহারের কথাও ছিল, যেগুলি রেডারে ধরা পড়ে না। সেই মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা জলপথে পাড়ি দেন SEAL-এর আটজন অফিসার। স্কুবা গিয়ার, হিটেড স্যুট পরে তৈরিই ছিলেন। ঠিক ছিল সাঁতরে উপকূলে পৌঁছবেন তাঁরা। 

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভিয়েতনামে কিমের সঙ্গে মুখোমুখই সাক্ষাতের কথা ছিল ট্রাম্পের। তার আগেই অভিযানে অনুমোদন দিয়ে দেন ট্রাম্প। পরিকল্পনা মাফিক উত্তর কোরিয়ার উপকূলে পৌঁছেও যান ওই আট অফিসার। কিন্তু সেই সময়ই বিপত্তি বাধে। অন্ধকার ফুঁড়ে হঠাৎই সেখানে হাজির হয় মাছ ধরার একটি নৌকা। ধরা পড়ার ভয়ে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করেন SEAL অফিসাররা। এতে নৌকায় উপস্থিত সকলেই মারা যান। 

এমতাবস্থায় মৃতদেহগুলি নৌকা থেকে টেনে নামান SEAL অফিসাররা। দেহগুলি যাতে কারও নজরে না পড়ে, তার জন্য নিথর দেহগুলির বুকে অজস্র ছুরির কোপ বসানো হয়, যাতে সেগুলি জলে ডুবে যায়। 

নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, মাছ ধরতে আসা লোকজন নিরস্ত্র ছিলেন। পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত অভিযান বাতিল করতে হয়। আমেরিকার স্যাটেলাইট নজরদারিতে দেখা যায়, ওই উপকূল এলাকায় উত্তর কোরিয়ার সেনা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তাই কোনও রকমে প্রাণ বাঁচিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যান SEAl অফিসাররা। এর পর ভিয়েতনামে কিম এবং ট্রাম্পের বৈঠকও হয়। কিন্তু সমঝোতায় পৌঁছনো যায়নি। এর পর মে মাস থেকে আবারও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা শুরু করে দেন কিম। 

সরকারি ভাবে ২০১৯ সালের ওই অভিযান নিয়ে কিছু জানায়নি পেন্টাগন। আমেরিকার কোনও আধিকারিকও সরকারি ভাবে বিবৃতি দেননি। সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পর ট্রাম্পকে  সেই নিয়ে প্রশ্নও করা হয়। কিন্তু তাঁর বক্তব্য, “আমি এসবের কিছু জানি না। এই প্রথম শুনছি।” কিন্তু অভিযোগ উঠছে যে, আমেরিকার কংগ্রেসের গোয়েন্দা কমিটিকে অভিযানের কথা জানানোই হয়নি। অভিযানের আগেও কিছু জানানো হয়নি, পরেও নয়, যা দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় আইনের পরিপন্থী। এ নিয়ে মুখ খুলেছেন কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ম্যাথু ওয়াক্সম্যান, যিনি জর্জ বুশের আমলে জাতীয় নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন।  তাঁর বক্তব্য, “কংগ্রেসকে কখনও অন্ধকারে রাখা ঠিক নয়।”

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত SEAL অফিসারদের পদোন্নতি হয় পরবর্তীতে। অভিযাব সফল হলে উত্তর আমেরিকার পরমাণু প্রকল্প নিয়ে গোপন তথ্য হাতে পেতে পারত আমেরিকা। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। উত্তর কোরিয়া ওই গোপন অভিযানের কথা বুঝতে পেরেছিল কি না, তা জানা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে প্রথম দফায় ট্রাম্পের মেয়াদ শেষ হলে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হন জো বাইডেন। সেই সময় সরকারের অভ্যন্তরে ওই অভিযান তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে। বাইডেনের প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড জে অস্টিন থার্ড নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশও দেন। ২০২১ সালে কংগ্রেসকে বিষয়টি জানানো হয়। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় ফের দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে আমেরিকায় এই মুহূর্তে ক্ষমতায় ট্রাম্প। সেই তদন্তের কী হল, তার সদুত্তর নেই কারও কাছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি আমেরিকার নৌবাহিনী এবং পেন্টাগন।

তথ্যসূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস (https://tinyurl.com/2er6m275)