নয়া দিল্লি: আজ থেকে আমেরিকার ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হল ভারতের উপর। আজ থেকে ভারতে তৈরি জিনিসের ওপর আমেরিকা বিপুল পরিমাণে শুল্ক চাপানোয় কোন কোন শিল্পক্ষেত্রে প্রভাব পড়তে পারে একবার দেখে নেওয়া যাক।
এর সরাসরি প্রভাব রত্ন,গয়না, চর্মজাত সামগ্রী, মাছ-এর ক্ষেত্রে পড়বে। আমেরিকার ৫০ শতাংশ শুল্কে প্রভাব পড়তে পারে রত্ন, জুয়েলারি ও গয়না শিল্পে। আমেরিকায় এর ফলে বহুমূল্য রত্ন বা গয়নার দাম আরও বাড়বে। আমেরিকার শুল্কের ঠেলায় রফতানি কমতে পারে ভারতে তৈরি চর্মজাত পণ্যের। শুল্ক-চাপে ভারত থেকে রফতানি কমতে পারে ওষুধ, রাসায়নিক, বস্ত্র, কার্পেট, আসবাব ও সামুদ্রিক খাবারের।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আমেরিকার বর্ধিত শুল্কের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে, রত্ন, গয়না, চর্মজাত সামগ্রী, মাছ, কৃষিজাত সামগ্রী, সেরামিক, কাচ, বস্ত্র, কার্পেট এবং আসবাব শিল্পের উপর। অর্থনীতিবিদ সৈকত সিনহা রায়ের মতে, 'ইমিডিয়েট রপ্তানি কমবে, কর্মহীনতার সম্ভাবনা থাকবে, যেগুলো প্রভাবিত হবে, সেগুলো কর্মী নির্ভর, তাই কর্মসংস্থার হারানোর সম্ভাবনা বেশি। মূলত ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর উপর চাপ।'
এদিকে, এক্স পোস্টে কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে লিখেছেন, এই শুল্কের প্রথম ধাক্কাতেই ১০টি খাতে আমাদের আনুমানিক ২ লক্ষ ১৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হবে। এটা শুধুমাত্র একটা ঝলক, হিমশৈলের চূড়ামাত্র। বাস্তব হল ---
১. ভারতের বস্ত্র রফতানি ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ৫ লক্ষ দক্ষ কর্মী চাকরি সঙ্কটের মুখে পড়েছেন।
২. এই শুল্ক হার বজায় থাকলে রত্ন ও গয়না শিল্পে প্রায় দেড় লক্ষ থেকে ২ লক্ষ কর্মীর কাজ সঙ্কটে পড়বে।
আমেরিকার ১০ শতাংশ শুল্ক চাপার পর থেকেই সৌরাষ্ট্র অঞ্চলে হিরের কাটিং ও পালিশের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ১ লক্ষ কর্মী গত এপ্রিল মাস থেকে কাজ হারিয়েছেন।
৩. প্রায় ৫ লক্ষ চিংড়ি চাষির জীবিকা সরাসরি এবং আরও ২৫ লক্ষ মানুষের জীবিকা পরোক্ষভাবে গভীর সঙ্কটের মুখে রয়েছে।
অন্যদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক দাদাগিরির পাল্টা নয়াদিল্লিও ইতিমধ্যেই বুঝিয়ে দিয়েছে, আমেরিকার হুমকির কাছে মাথানত করা হবে না। রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনাও বন্ধ হবে না। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীও এই ইঙ্গিত দিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, 'আমার সরকার ছোট শিল্প, কৃষক, পশুপালকদের কখনও ক্ষতি হতে দেবে না। চাপ যতই আসুক, আমরা সহ্য করার ক্ষমতা বাড়িয়ে যাব।' কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই দাবির মধ্যেই উদ্বেগের বিষয় হল, সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ট্রাম্প সরকার ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপলে প্রায় ৪০০০ কোটি ডলারের রফতানি ধাক্কা খাবে।
অর্থনীতিবিদ শৈবাল করের মতে, 'সোনা-রূপের উপর প্রভাব পড়বে, আমেরিকায় দাম বাড়বে। রপ্তানি কমতে পারে। যারা কাজ করত কর্মসংস্থান কমবে। এটা থেকে বেরিয়ে আসার পর ভারত নিশ্চয়ই বের করতে পারবে।'
ভারত ও আমেরিকার মধ্যে শুল্ক নিয়ে উত্তেজনা আরও তীব্র হয়ে ওঠার পরে বুধবার আমেরিকার ট্রেজ়ারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট দু’দেশের সম্পর্ক নিয়ে আস্থা প্রকাশ করেছেন। স্কট বলেছেন, “ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র, আমেরিকা বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি। আমার মনে হয়, দিনের শেষে আমরা একত্রিত হব।”