লখনউ: মাঝে ১০ বছরের ব্যবধান। সেই দিনটি ছিল ২০১৪ সালের ২৭ মে। আজ ২০২৪ সালের ২৭ অগাস্ট। আবারও উত্তরপ্রদেশে গাছে ঝুলতে দেখা গেল দুই দলিত কন্যার নিথর দেহ। সেবার বদায়ুঁতে ঘটেছিল ভয়ঙ্কর ওই ঘটনা, এবার ঘটল ফারুখাবাদে। আর জি করে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় যখন উত্তাল গোটা দেশ, ফারুখাবাদের এই ঘটনা কার্যতই প্রমাণ করে দিল যে, সময়, সরকার সব বদলালেও, ভারতীয় সমাজে মেয়েদের জায়গায় সেই একই রয়েছে। (Farrukhabad Dalit Girls)


মঙ্গলবার সকালে দেহ দু'টি গাছে ঝুলতে দেখা যায়। ওই দু'জনের মধ্যে একটি মেয়ের বয়স ১৫ বছর, অন্য জনের ১৮ বছর। ফারুখাবাদের পুলিশ সুপার অলোক প্রিয়দর্শী জানিয়েছেন, কায়মগঞ্জের কাছে ভগৌতিপুর গ্রামের আমবাগানে মেয়ে দু'টির দেহ ঝুলছিল। মেয়ে দু'টি পরস্পরের কাছের বন্ধু এবং দলিত সম্প্রদায়ের। সকালে খবর আসে দু'টি দেহ ঝুলছে বলে। সেই মতো পুলিশের দল ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। মেয়ে দু'টির পরিবার এবং স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলছে পুলিশ। (Farrukhabad News)


পুলিশ জানিয়েছে, গাছের ডালে চুড়িদারের ওড়না বেঁধে, তার একদিকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল একটি মেয়েকে। দ্বিতীয় মেয়েটির দেহ ঝুলছিল অন্য দিকে।  অর্থাৎ একটি ওড়নায় বেঁধেই দু'টি দেহ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশের দাবি, পরিবার ও পড়শিদের সঙ্গে কথা বলে মেয়ে দু'টি পরস্পরের কাছের বন্ধু ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে মনে হচ্ছে পুলিশের। কিন্তু আরও তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে।


পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার নিখোঁজ হয়ে যান ১৮ বছরের ওই তরুণী এবং ১৫ বছরের ওই কিশোরী। গ্রামের মন্দিরে জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠান দেখতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন রাত ৯টা নাগাদ। তার পর আর বাড়ি ফেরেননি দু'জনের কেউই। পরিবারের লোকজন রাতেই বিস্তর খোঁজাখুঁজি করেন। কিন্তু কোথাও খোঁজ মেলেনি। শেষ পর্যন্ত, মঙ্গলবার ভোরবেলা গাছে দেহ ঝুলতে দেখা যায়। যে গাছে দেহ দু'টি ঝুলছিল, সেখানে একটি মোবাইল ফোনও উদ্ধার হয়েছে।  দু'জনের একজনের কাছ থেকে মিলেছে একটি সিমকার্ড। দেহ দু'টি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। তদন্ত চলছে। 


কিন্তু আত্মহত্যার যে তত্ত্ব পুলিশ দিচ্ছে, তা মানতে নারাজ নিহত দুই কন্যার পরিবার। একজনের বাবা, সরাসরি মেয়েকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, "প্রথমে একসঙ্গে ৭.৩০টা নাগাদ বেরিয়েছিল। ফিরে এসে আবার ৯টা নাগাদ বেরোয়। মন্দিরে যায়। রাত বাড়লেও বাড়ি ফেরেনি। মন্দিরের কাছেই বোনের বাড়ি। সেখানেও খোঁজ নিতে যাই। কিন্তু পাইনি। গ্রামেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিই। আজ ভোর ৫টা নাগাদ  আমার শ্যালিকা জানায়, সকালে শৌচকর্ম সারতে বাইরে গিয়েছিল। সেখানে গাছে বাঁধা অবস্থায় দু'টি দেহ ঝুলতে দেখেছে। খবর পেয়েই দৌড়ে যাই আমি। দেখি, একটি দেহ আমার মেয়ের। অন্যটি আমাদের প্রতিবেশীর। দু'জনকেই খুন করা হয়েছে। ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে গলায় ওড়না বেঁধে।"


এর আগে, ২০১৪ সালে একই ঘটনা ঘটেছিল বদায়ুঁতে। দলিত সম্প্রদায়ের দুই নাবালিকা কন্যার দেহ ঝুলতে দেখা গিয়েছিল গাছে। পরে জানা যায়, অপহরণ, গণধর্ষণের পর খুন করে দেহ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এদিনের ঘটনায় সেই স্মৃতিই ফিরে এসেছে। সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব এই ঘটনায় কড়া শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, 'অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠান দেখতে যাওয়া দুই মেয়ের দেহ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে ফারুখাবাদে। এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করা উচিত বিজেপি সরকারের। খুন করা হয়েছে কি না, সেই নিয়ে রিপোর্ট জমা পড়া দরকার'।


অখিলেশের মত, এই ধরনের ঘটনা সমাজকে ভয়ঙ্কর পরিবেশ তৈরি করে। মহিলাদের মধ্যে ট্রমা তৈরি হয়। মহিলাদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত বলে মত তাঁর। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে সকলকে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।