নয়াদিল্লি: মুষলধারে বৃষ্টির দোসর মুহুর্মুহু বজ্রপাত। সবমিলিয়ে দু'ঘণ্টার দুর্যোগ। আর তাতেই মৃতদেহের সারি দেখা গেল উত্তরপ্রদেশে। বুধবার সন্ধেয়, মাত্র দু'ঘণ্টার মধ্যে সেখানে বজ্রাঘাতে মৃত্যু হল কমপক্ষে ৩৮ জনের। অনেকে আহতও হয়েছেন। এমনিতেই ভারী বৃষ্টিতে জল থৈ থৈ অবস্থা রাজ্যের। সেই আবহেই এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে রাজ্যে। (Uttar Pradesh Lightning Deaths) উত্তরপ্রদেশের পডশি রাজ্য বিহারেও বজ্রাঘাতে কমপক্ষে ১০ জন মারা গিয়েছেন বলে খবর।


গত কয়েক দিন ধরেই বৃষ্টি চলছে উত্তরপ্রদেশে। বুধবার বিকেল ৪টে নাগাদ ফের বৃষ্টি শুরু হয়। সঙ্গে মুহুর্মুহু বজ্রপাত, ঝোড়ো হাওয়া। সন্ধে ৬টা পর্যন্ত এই দুর্যোগ চলে। আর তা থামতেই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মৃত্যুর খবর উঠে আসতে শুরু করে। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় বেশ কয়েক জনকে। তাতেই দুর্যোগ থানার পর থমথমে হয়ে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। (Lightning Strikes in Uttar Pradesh)


বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশে বজ্রাঘাতে কমপক্ষে ৩৮ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। এর মধ্যে প্রতাপগড়েই ১১ জন মারা গিয়েছেন। সুলতান পুরে সাত জন, চন্দৌলিতে ছয় জন, মইনপুরিতে পাঁচ জন, প্রয়াগরাজে চার জন, অউরাইয়া, দেওরিয়া, হাথরস, বারাণসী এবং সিদ্ধার্থনগর থেকে একজন করে মারা গিয়েছেন। বজ্রাঘাতে জখমও হয়েছেন অনেকেছ অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি তাঁরা। 


মৃতদেহগুলি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চন্দৌলিতে অনেকে জখম হয়েথেন। জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে তাঁদের। স্থানীরা জানিয়েছেন, ভারী বৃষ্টির পাশাপাশি পর পর বজ্রপাতে কেঁপে উঠছিল চারিদিক। থামতে দেখা যায় এত মানুষ মারা গিয়েছেন। মৃতদের মধ্যে চন্দৌলির বাসিন্দা, ১৩ এবং ১৫ বছর বয়সি দুই তুতো ভাইও রয়েছে। মৃতদের মধ্যে কেউ জমিতে কাজ করছিলেন, কেউ মাছ ধরতে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।


সুলতানপুরে বজ্রাঘাতে তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। জমিতে ধান রোয়ার পর, গাছের তলায় আম কুড়োতে যায় তারা। এর পর জল নিয়ে বাড়ি ফিরছিল বলে জানা গিয়েছে। বৃষ্টিতে গাছের নীচে মাথা গোঁজা এক মহিলাও বজ্রাঘাতে মারা গিয়েছেন। অউরাইয়াতে আম গাছের নীচে দাঁড়িয়ে থাকা ১৪ বছরের এক কিশোর মারা গিয়েছে। দেওরিয়ায় পাঁচ বছরের একটি মেয়ে মারা গিয়েছেন। পরিবারের বাকিদের সঙ্গে জমির দিকে যাচ্ছিল মেয়েটি। রাস্তায় বৃষ্টি নামলে গাছের নীচে দাঁড়ান সকলে। সেই সময় মেয়েটিই বজ্রাঘাতে মারা যায়। বারণসীতে দুই ভাই বজ্রাঘাতে জখম হন। চিকিৎসা চলাকালীন একজন মারা গিয়েছেন। অন্য জন চিকিৎসাধীন। এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আবহাওয়া দফতর যদিও জানিয়েছে, আগামী পাঁচ দিন উত্তরপ্রদেশে দুর্যোগ চলবে। ভারী বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি বজ্রপাতের প্রকোপও রয়েছে। 


অন্য দিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় বিহারে বজ্রাঘাতে মারা গিয়েছেন কমপক্ষে ১০ জন। রোহতাসে তিনজন, সিওয়ানে দুই জন, কইমুর, পশ্চিম চম্পারন, মুঙ্গের, বাঙ্কা এবং সুপৌলে একজন করে মারা গিয়েছেন বলে খবর। ঝড়ের সময় আম কুড়োতে গিয়ে পাঁচ বছরের এক মেয়ে বজ্রাঘাতে প্রাণ হারিয়েছে। জমিতে কাজ করতে গিয়েও বাজ পড়ে মারা গিয়েছেন কয়েক জন। বেশ কয়েক জন ঝলসে আহত হয়েছেন। তাঁদের চিকিৎসা চলছে। বিহার সরকার মৃতদের পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা করেছে।