মোরোদাবাদ: লাগাতার হেনস্থা। বাড়িতে ঢুকে হুমকি। বাড়ির সামনে শ্লীলতাহানিও। আতঙ্কে বাড়ির বাইরে পা রাখতে পারছিল না। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল স্কুলে যাওয়াও। পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েও লাভ হয়নি কিছু (Moradabad Girl Suicide)। তাতেই শেষ মেশ চরম পদক্ষেপ উত্তরপ্রদেশের কিশোরীর। নিজেকেই শেষ করে দিল সে। প্রশাসনের জন্য রেখে গেল শুধু প্রশ্ন, “এ বার শুনতে পাচ্ছেন কি?”


উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদের ঘটনা। দ্বাদশ শ্রেণিতে পাঠরত, ১৭ বছরের এক কিশোরী আত্মঘাতী হয়েছে সেখানে। আর দু’পাতার সুইসাইট নোটে প্রশাসনের জন্য রেখে গিয়েছে একাধিক প্রশ্ন, যা পড়লে শিউড়ে উঠতে হয়। বিষয়টি সামনে আসতেই নিন্দার ঝড় উঠেছে (Uttar Pradesh News)।


স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার চার যুবক লাগাতার হেনস্থা করছিলেন ওই কিশোরীকে। দিন দশেক আগে বাড়ির সামনে তাঁরা ওই কিশোরীর শ্লীলতাহানিও করেন বলে অভিযোগ। মেয়েটির পরিবারের তরফে সেই নিয়ে থানায় অভিযোগও জানানো হয়েছিল। কিন্তু উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে, ওই চার যুবকের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনও পদক্ষেপ তো করেইনি, অভিযোগের কর্ণপাতও করেনি বলে অভিযোগ। তাতেই রবিবার আত্মঘাতী হয় ওই কিশোরী।


বাড়ি থেকে যে সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে, মৃত্যুর আগে তাতে ওই কিশোরী লেখেন, ‘ওরা আমাকে স্বপ্ন পূরণ করতে দিল না। ওদের সামনে দাঁড়ানোর সাহস পাচ্ছি না আমি। কিন্তু আমার পরিবারকে যেন ভুগতে না হয়। স্যর, এ বার কি শুনতে পাচ্ছেন আপনারা? আমার মৃত্যুর পর অন্তত ওদের শাস্তি দিন, যাতে গরিব ঘরের মেয়েরা বাঁচতে পারে, স্বপ্ন পূরণ করতে পারে’।


সুইসাইড নোটে চার যুবকের নাম উল্লেখ করে ওই কিশোরী। জানায়, দিনের পর দিন হেনস্থার শিকার হতে হতে স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তার। কোনও ভয়ডর ছিল না। চাকু হাতে নিয়ে সটান বাড়ির ছাদে উঠে আসতেন ওই চার যুবক। খুনের হুমকি দিতেন। থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন মেয়েটির মা-বাবা। কিন্তু লাভ হয়নি। ওই চার যুবক উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে বলেই পুলিশ অভিযোগে কর্ণপাত করেনি, দাবি পরিবারের।


মেয়েটি আত্মঘাতী হওয়ার পর অভিযুক্তদের মধ্যে বিকেশ এবং অমৃত নামের দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকি দু’জন গা ঢাকা দিয়েছেন। তাঁদের পরিবারও এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছে বলে খবর। গোটা গ্রাম আত্মঘাতী ওই কিশোরীর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। মেয়েটির বাবা কৃষি শ্রমিক। তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের পরিবার থেকে তাঁর মেয়েই প্রথন কলেজ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। দিল্লিতে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন ছিল মেয়ের। শিক্ষিকা হতে চাইত। সামর্থ্য না থাকলেও, ঋণ নিয়ে মেয়েকে পড়াতে প্রস্তুত ছিলেন বলে জানিয়েছেন আত্মঘাতী কিশোরীর বাবা। তাঁর অভিযোগ, ছোট থেকেই তাঁর মেয়ে লড়াকু ছিল। কিন্তু এত হেনস্থা করা হয়, যে ভয়ে কুঁকড়ে যায়।


মেয়েটির পরিবারের অভিযোগ, হোলির দিন তাদের বাড়িতে ঢুকে আসেন অভিযুক্তরা। মেয়েটিকে ট্যানা-হ্যাঁচড়া করছিলেন, মারধরও করেন। মেয়ে অঝোর ধারায় কাঁদছে দেখে বাধা দিতে গিয়েছিলেন সকলে। কিন্তু তাঁদেরও প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। তার পরই থানায় বিষয়টি জানানো হয়। শুরুতে অভিযোগ নেওয়াই হয়নি। দু’-তিন পর যাও বা অভিযোগ গৃহীত হয়, কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। দরিদ্র বলেই তাঁদের সঙ্গে এমন আচরণ বলে দবি মেয়েটির মা-বাবার।


মেয়েটির দিদি এদিক ওদিক কাজ করে সংসারে সাহায্য় করেন। তিনি জানিয়েছেন, বেশ কয়েক মাস ধরেই তাঁর বোনকে হেনস্থা করছিলেন অভিযুক্তরা। লাগাতার পিছু নিতেন। এমনকি ছাদে স্নান করার সময় লুকিয়ে তাঁর বোনের ভিডিও-ও বানানো হয়। কিছু বলতে গেলে ছুরি, পিস্তল উঁচিয়ে হুমকি দেওয়া হতো। তাতে পেরে না উঠে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয় ওই কিশোরী।


মোরাদাবাদের এসএসপি হেমরাজ মীনা জানিয়েছেন, ওই পরিবারের অভিযোগে গুরুত্ব না দেওয়ায় এক সাব ইনস্পেক্টরকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হলেও, বাকি দু’জন পলাতক। পকসো আইনে যৌন হেনস্থা, অনুসরণ, তালাভেঙে বাড়িতে ঢোকা, ভয় দেখানো, আত্মহত্যায় প্ররোচনা জোগানোর মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জমি নিয়ে উচ্চবিত্তদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ছিল ওই পরিবারের। তা নিয়ে মামলাও হয়েছে অতীতে।