বারাণসী: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী কেন্দ্র। আর সেখানেই কিশোরীকে গণধর্ষণের অভিযোগ। গত একসপ্তাহ ধরে সেই নিয়ে উত্তাল বারাণসীর পরিস্থিতি। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের পর এবার সেখানে তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিককে তদন্ত থেকে সরানো হল। (Varanasi Girl Assaulted)

গত সপ্তাহে বারাণসীতে ৫০তম সফরে যান মোদি। নাবালিকার উপর নির্যাতনের তদন্ত কতদূর এগিয়েছে, তাও জানতে চান। বারাণসীর পুলিশ কমিশনার এবং উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা সেই নিয়ে তথ্য দেন তাঁকে। আর তার পরই উত্তরপ্রদেশ পুলিশ সিনিয়র IPS অফিসার তথা ডেপুটি কমিশনার চন্দ্রকান্ত মীনাকে তদন্ত থেকে সরানো হল। (Uttar Pradesh News)

সূত্রের খবর, পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে দ্রুত তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দেন মোদি। এমন ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে, তা নিয়েও সতর্ক করেন তিনি এর পরই উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সদর দফতর থেকে IG স্বাক্ষরিত একটি চিঠি যায়, যাতে ২০১৮ ব্যাচের IPS অফিসার চন্দ্রকান্তকে তদন্তের দায়িত্ব থেকে সরানো হয়। পুলিশ কমিশনার মোহিত আগরওয়াল এই মুহূর্তে ছুটিতে রয়েছেন। তিনি ফিরলে দায়িত্বজ্ঞানহীতার জন্য ডেপুটি কমিশনার চন্দ্রকান্তের বিরুদ্ধে পদক্ষেপও করা হতে পারে বলে খবর।

সপ্তাহখানেক আগেই বারাণসী থেকে নাবালিকাকে গণধর্ষণের অভিযোগ সামনে আসে। ১৯ বছরের মেয়েটি পবিত্র শহর খাজুরির বাসিন্দা। ২৯ মার্চ বন্ধুর বাড়ি যাওয়ার সময় নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। খোঁজ মেলে ৪ এপ্রিল। ৬ এপ্রিল মেয়েকে গণধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযাগ দায়ের করেন কিশোরীর মা। নির্যাতিতা জানান, ২৩ জন মিলে অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছে তাঁর উপর, যাঁদের মধ্য়ে ১১ জনকে শনাক্তও করেন তিনি। এখনও পর্যন্ত ওই ঘটনায় ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকি ১০ জন অধরা। 

নির্যাতিতা জানিয়েছেন, ২৯ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত দফায় দফায় গণধর্ষণ করা হয় তাঁকে। চালানো হয় যৌন নির্যাতন। নির্যাতিতা জানিয়েছেন, বন্ধুই তাঁকে পিশাচমোচনের একটি হুক্কাবারে নিয়ে যায়।  সেখানে একে বাকিরা এসে পৌঁছয়। ঠান্ডা পানীয়তে কিছু মিশিয়ে খাইয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। এর পর আজ এই হোটেলে, কাল ওই হোটেলে তাঁকে বার বার ধর্ষণ করা হয়।

প্রায়শই ওই বন্ধুর বাড়িতে যেতেন নির্যাতিতা। কিন্তু গত ২৯ মার্চ বাড়ি থেকে বেরনোর পর থেকে আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রায় সাত দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন। গত ৪ এপ্রিল শেষ পর্যন্ত পাণ্ডেপুর ইন্টারসেকশনে খোঁজ মেলে। মাদক খাইয়ে তাঁকে সেখানে দুষ্কৃতীরা ফেলে গিয়েছিল বলে জানা যায়। সেখান থেকে বন্ধুই বাড়ি ফিরিয়ে আনে তাঁকে। মেয়েকে না পেয়ে ওই দিনই নিখোঁজ বলে ডায়েরি করেছিল পরিবার। মেয়ে বাড়ি ফেরার পর ৬ এপ্রিল থানায় নতুন করে অভিযোগ দায়ের হয়।

জানা গিয়েছে, বাড়ি ফিরে বাবাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন ওই তরুণী। জানান, বাড়ি থেকে বেরনোর পর তাঁকে অপহরণ করে দুষ্কৃতীরা। সাত দিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করে ২২-২৩ জন। কখনও হুক্কাবার, কখনও হোটেল, কখনও লজ, কখনও তোলা হয় গেস্ট হাউসে। মেয়েটির মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের হয়েছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার গণধর্ষণ (৭০-১), শ্লীলতাহানি (৭৪), বিষপ্রয়োগ বা ক্ষতিকর দ্রব্য প্রয়োগ (১২৩), গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ (১২৬-২), অপরাধমূলক ভাবে বন্দি করে রাখা (১২৭-২) অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন) ৩৫১-২) ধারায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।