নয়াদিল্লি: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের ঊর্ধ্বে গিয়ে নয়া আইন এনেছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে প্রধান বিচারপতিকে। নয়া নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের আগে ‘ক্ষমতা পৃথকীকরণের’ কথা শোনা গেল উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়ের মুখে। কার্যনির্বাহী আধিকারিক নিয়োগে প্রধান বিচারপতিকে কেন রাখা হবে, প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। যে সময় এই মন্তব্য করলেন ধনকড়, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ কমিটি থেকে প্রধান বিচারপতিকে বাদ দেওয়া নিয়ে মামলা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। সেই মামলার শুনানি যেমন রয়েছে, তেমনই নয়া নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের বৈঠকও রয়েছে। (Jagdeep Dhankhar)


শুক্রবার মধ্যপ্রদেশের ভোপালে ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমি-র একটি অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন ধনকড়। তাঁর মন্তব্য, “আমাদের দেশই হোক বা অন্য কোনও গণতান্ত্রিক দেশে, CBI ডিরেক্টর নিয়োগে প্রধান বিচারপতি শামিল হন কী করে? এটা কি যুক্তিযুক্ত? যে সময় এই নিয়ম চালু হয়, কার্যনির্বাহী বিভাব আদালতের রায়ের সামনে নতি স্বীকার করে। কিন্তু বিষয়টি পর্যালোচনার সময় এসেছে। কারণ এটা গণতন্ত্রের পরিপন্থী। কার্যনির্বাহী আধিকারিক নিয়োগে প্রধান বিচারপতিকে কেন যুক্ত করা হবে?” (Election Commissioner)


১৮ ফেব্রুয়ারি মুখ্য নির্বাচন কমিশনার  রাজীব কুমারের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নয়া মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ নিয়ে সোমবার, অর্থাৎ ১৮ ফেব্রুয়ারি বৈঠক হতে চলেছে। ২০২৩ সালের Chief Election Commissioner And Other Election Commissioners আইনের আওতায় নয়া নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত হওয়ার কথা। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলনেতা এবং প্রধান বিচারপতিকে রাখতে হবে।  সেই রায়ের পরই নয়া আইন আনে কেন্দ্রের মোদি সরকার। নয়া আইনে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয় প্রধান বিচারপতিকে। পরিবর্তে আইনমন্ত্রীকে কমিটির অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নয়া এই আইনে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন বিরোধীরা। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতেই নয়া আইন আনা হয়েছে বলে দাবি তাঁদের। বিরোধীদের যুক্তি, আগে অন্তত নিরপেক্ষ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার অবকাশ ছিল। কিন্তু নয়া কমিটিতে সরকার পক্ষের পাল্লা ভারী। নিজেদের পছন্দের লোককেই ক্ষমতায় বসাতেই নয়া আইন আনা হয়েছে।


এই নয়া আইনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই শীর্ষ আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। ১৯ ফেব্রুয়ারি আদালতে সেই মামলার শুনানি রয়েছে। আর তার একদিন আগেই নয়া নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের বৈঠকে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি, আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল এবং বিরোধী দলনেতা রাহুল গাঁধী।  আর সেই আবহেই কার্যনির্বাহী আধিকারিক নিয়োগে প্রধান বিচারপতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ধনকড়। তাঁর বক্তব্য, “বৈচারিক ডিক্রির মাধ্যমে কার্যনির্বাহী শাসন কায়েম সংবিধানের পরিপন্থী। পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রে এমনটা আর চলতে পারে না। প্রতিষ্ঠানগুলি এক্তিয়ার ভুলে গেলে বিস্মৃতির ক্ষত দিয়েই গণতন্ত্রকে মনে রাখা হয়। সাংবিধানিক এক্তিয়ারের মধ্যে থেকে, জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে, সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ বজায় রেখেই প্রতিষ্ঠানগুলিকে চলতে হবে।”


ধনকড়ের দাবি, কার্যনির্বাহী ক্ষেত্রে মানুষের ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটাই কাম্য। নির্বাচিত সরকার সেই কাজে দায়বদ্ধ। আইনের কাছে দায়বদ্ধ নির্বাচিত সরকার। সেই ক্ষমতা না থাকলে দায়বদ্ধতা থাকবে না। শাসনকার্যের সবকিছু সরকারের হাতেই থাকা উচিত। বাইরের কারও হস্তক্ষেপ ঘটলে, তা গণতন্ত্রের মৌলিক চরিত্রের পরিপন্থী বলে দাবি ধনকড়ের। গণতন্ত্রে কর্তৃত্বের অহঙ্কারের জায়গা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।


যদিও এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "গণতন্ত্র বলতে উনি কী বলছেন, বুঝতে চাইছেন, জানি না। কিন্তু আমাদের দেশে যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত, সেটা সাংবিধানিক গণতন্ত্র। এতে প্রধান বিচারপতির পদ সাংবিধানিক। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে স্বচ্ছতা রাখতে শীর্ষ আদালতের অবস্থান সংবিধান স্বীকৃত, আইনে স্বীকৃত। উপরাষ্ট্রপতি হয়ে তিনি সেই আইনকে, সংবিধানকে কী করে চ্যালেঞ্জ করেন জানি না। তিনি তো সংবিধানের নামে শপথ নিয়েছেন!" ধনকড়ের মন্তব্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে।