নয়াদিল্লি: কোলের সন্তানের ভবিষ্যৎই অনিশ্চিত। তার উপর গর্ভেও সন্তান বেড়ে উঠছে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে তাই ঝুঁকি নেননি। বোমা-গুলি থেকে মাথা বাঁচিয়ে দেশে ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু যুদ্ধ এড়াতে পারলেও, ঘৃণা-বিদ্বেষের অভিশাপ এড়াতে পারলেন না ইরানি মহিলা। রাশিয়া পৌঁছে গোড়াতেই জোর ধাক্কা খেলেন তিনি। বিমানবন্দরে আছাড় মারা হল তাঁর শিশুসন্তানকে। ১৮ মাস বয়সি শিশুটি এখন কোমায় রয়েছে। (Viral Video)

ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যখন মুহুর্মুহু ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণ চলছে, সেই সময় কোলের ছেলেকে নিয়ে দেশ ছাড়েন অন্তঃসত্ত্বা ওই ইরানি মহিলা। আফগানিস্তান হয়ে, অনেক ঝক্কি সামলে রাশিয়া পৌঁছন তিনি। মস্কোর শেরেমেতিয়েভো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন মহিলা। কিন্তু সেখানেই তাঁর একরত্তি ছেলের উপর হামলা হল। (Moscow Sheremetyevo International Airport)

হামলাকারী যুবককে ৩১ বছর হয়সি ভ্লাদিমির ভিকতভ বলে শনাক্ত করা গিয়েছে। সে বেলারুসের বাসিন্দা, রাশিয়া বেড়াতে গিয়েছিল বলে জানা যাচ্ছে। বিমানবন্দরের সিসিটিভি ফুটেজে যে দৃশ্য ধরা পড়েছে, তা দেখলে শিউরে উঠতে হয়। দেখা যায়, বিমানবন্দরে স্যুটকেসের হাতল ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে একরত্তি শিশুটি। তার ঠিক পিছনেই দাঁড়িয়ে ভ্লাদিমির। এদিক ওদিক তাকিয়ে প্রথমে পরিস্থিতি মেপে নেয় সে। তার পর হঠাৎই শিশুটিকে তুলে নিয়ে সজোরে আছাড় মারে বিমানবন্দরের মেঝেতে। উল্টো হয়ে মেঝেতে পড়ে শিশুটি। প্রথমে মাথাটাই আছাড় খায় মেঝেতে। সেকেন্ডের মধ্যেই নিস্তেজ হয়ে যায় তার শরীর।

চোখের সামনে ওই দৃশ্য দেখে যায় কার্যত হতভম্ব হয়ে যান সকলে। কী করা উচিত প্রথমে বুঝতেই পারেননি কেউ। শিশুটিকে আছড়ে ফেলার পর ভ্লাদিমির এমন ভাব করে,যেন কিছুই হয়নি। চোখে সানগ্লাস পরে পায়চারি করে। তার পর বসে পড়ে মেঝেতে। সেই সময় এক যাত্রী ছুটে এসে নিস্তেজ হয়ে যাওয়া শিশুটিকে কোলে তুলে নেন। শিশুটির মা-ও ছুটে আসেন। কিন্তু শিশুটি নড়াচড়া করছিল না একেবারেই। বরং নেতিয়ে পড়েছিল।

তড়িঘড়ি বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় শিশুটিকে। কিন্তু কোমায় চলে গিয়েছে সে, মৃত্য়ুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। জোরে আছড়ে ফেলায় শিশুটির মাথার খুলিতে একাধিক চিড় ধরেছে, শিরদাঁড়াও ক্ষতিগ্রস্ত বলে জানা গিয়েছে। তার অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। রুশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বিমানবন্দরে নেমে স্ট্রোলার খুঁজছিলেন ওই মহিলা, যাতে ছেলেকে বসিয়ে ঠেলে নিয়ে যেতে পারেন। ছেলের থেকে কয়েক হাত দূরেই ছিলেন তিনি। আর সেই সময়ই ওই ঘটনা ঘটে। 

ভ্লাদিমিরকে গ্রেফতার করেছে রুশ পুলিশ। খুনের চেষ্টার মামলা দায়ের হয়েছে তার বিরুদ্ধে। কেন হঠাৎ শিশুটিকে সে আছাড় মারল, শিশুটির ইরানি পরিচয় জেনেই কি তার উপর হামলা করে ভ্লাদিমির, তা জানার চেষ্টা চলছে। ভ্লাদিমিরের কাছ থেকে গাঁজা উদ্ধার হয়েছে, পাওয়া গিয়েছে কিছু ওষুধও। সে মাদকাসক্ত ছিল কি না, তা জানার চেষ্টা চলছে। জিজ্ঞাসাবাদে ভ্লাদিমির জানিয়েছে, আগেও আইনি ঝামেলায় জড়িয়েছে সে। এমন ‘ভুল’ আগেও করেছে।

বিমানবন্দরে ভ্লাদিমিরের সঙ্গী ছিলেন এক মহিলা। তিনিও গোটা ঘটনায় হতভম্ব। জানিয়েছেন, ভ্লাদিমিরের নিজের মেয়েও ওই শিশুটির বয়সি। সে কেন এমন ঘটনা ঘটাল, তা বুঝে উঠতে পারছেন না ওই মহিলা। তবে এই ঘটনায় নিন্দার ঝড় সর্বত্র। মস্কোর শিশু সুরক্ষা বিভাগ জাবিয়েছে, এক রাক্ষস শিশুটিকে যেভাবে আছড়ে ফেলেছে, তা ভাবলেও অস্বস্তি হচ্ছে। ভ্লাদিমিরের কঠোর সাজার পক্ষে সওয়াল করেছে তারা।

এই ঘটনার নিন্দা করেছে ইরানও। মস্কোয় ইরানের রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালি বলেন, “ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে বলে জেনেছি। হামলাকারী ইহুদি বলে দাবি করছেন কেউ কেউ। আমি নিশ্চিত ভাবে তা বলতে পারছি না এখনই।”

(বিঃ দ্রঃ- এই ভিডিওতে এমন দৃশ্য রয়েছে, যা কোনও দর্শককে বিব্রত করতে পারে। মানসিকভাবে দুর্বল দর্শকদের এই ভিডিও না দেখাই ভাল।)