নয়াদিল্লি: বিমানে সওয়ার ছিলেন ২৪২ জন। একমাত্র তিনিই বেঁচে ফিরেছেন। কিন্তু এই বেঁচে ফেরাই এখন বুকে শেল হয়ে বিঁধছে। একেবারে বাক্শক্তিহীন হয়ে গিয়েছেন আমদাবাদে ভেঙে পড়া এয়ার ইন্ডিয়া বিমানের একমাত্র জীবিত যাত্রী বিশ্বাসকুমার রমেশকে। কারও সঙ্গে কথা বলেন না তিনি। মনোবিদের সাহায্য় নেওয়া হলেও, প্রতি মুহূর্তে তিনি কার্যত দগ্ধে মরছেন বলে জানাচ্ছেন পরিবারের লোকজন। (Ahmedabad Plane Crash)
গত ১২ জুন গুজরাতের আমদাবাদে ভেঙে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনগামী বিমান। লন্ডনের বাসিন্দা রমেশ, তাঁর দাদা অজয় ওই বিমানে চেপেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বাড়ি ফেরা হয়নি দু’জনের কারও। দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন অজয়। প্রাণে বেঁচে গেলেও, লন্ডন ফিরে যাওয়ার শক্তি এখনও সঞ্চয় করে উঠতে পারেননি রমেশ। বরং প্রতি মুহূর্তে নিজের সঙ্গে লড়াই করছেন তিনি। (Vishwas Kumar Ramesh)
রমেশ কী অবস্থায় রয়েছেন, সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তা খোলসা করেছেন তাঁর তুতো ভাই সানি। তিনি জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাস্থলের ভয়ঙ্কর দৃশ্য এখনও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে রমেশকে। কিছুতেই মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছেন না। নিজে বেঁচে ফিরলেও, দাদার মর্মান্তিক পরিণতি কোথাও না কোথাও বিঁধছে তাঁকে।
পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সানি বলেন, “বহু মানুষ ফোন করছেন। বিদেশে থাকা আত্মীয়রাও খবর নিচ্ছেন ফোনে। কিন্তু ও (রমেশ) কারও সঙ্গে কথা বলে না। এখনও মানসিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি ও। দাদার মৃত্যু এখনও বিঁধছে ওকে। মাঝরাতে এখনও জেগে ওঠে হঠাৎ। তার পর আর ঘুমাতে পারে না।”
রমেশ মনোবিদের সাহায্য় নিচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন সানি। তাঁর বক্তব্য, “দু’দিন আগেই মনোবিদের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম আমরা। লন্ডন ফিরে যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা এখনও করেনি ও। সবে তো চিকিৎসা শুরু হয়েছে।”
দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের 11A আসনে সওয়ার ছিলেন রমেশ। বিমানটি মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলে ধাক্কা মারলে, তার একটি অংশ ভেঙে গিয়ে গ্রাউন্ড ফ্লোরে পড়ে। যে আসনে বসেছিলেন রমেশ, তার পাশে থিল এমার্জেন্সি এগজিট। কোনও ক্রমে তাই বেরিয়ে আসতে সফল হন তিনি। নিজে বেরিয়ে আসার পর দাদাকেও খুঁজতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু লাভ হয়নি।
দুর্ঘটনার পর আহত অবস্থায় বেশ কয়েকদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন রমেশ। গত ১৭ জুন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে দাদার শেষকৃত্যেও যোগ দেন। DNA পরীক্ষার পর অজয়ের দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেয় হাসপাতাল। দাদার শেষকৃত্যে কাছা গলায় দেখা যায় রমেশকে। সেখানে ভেঙেও পড়েন তিনি। সেই ধাক্কা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি পুরোপুরি।