নয়াদিল্লি: প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ। ভারত থেকে ফেরার হয়ে গিয়েছেন আগেই। এ বার ভারতে তাঁকে ফেরানোর রাস্তাও কার্যত বন্ধ হয়ে গেল। হিরে ব্যবসায়ী তথা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত মেহুল চোকসিকে অ্যান্টিগুয়া-বারবুডা থেকে সরানো যাবে না বলে নির্দেশ দিল সে দেশের  হাইকোর্ট।


আদালতে নিজের আবেদনে মেহুল জানান, অমানবিক আচরণের শিকার হচ্ছেন তিনি। অপমান করা হচ্ছে তাঁকে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। ২০২১ সালের ২৩ মে জোর করে তাঁকে অ্যান্টিগুয়া থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেন মেহুল। অ্যান্টিগুয়া-বারবুডা প্রশাসনকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আবেদন জানান। 


সেই আবেদনের শুনানিতেই শুক্রবার মেহুলকে রক্ষাকবচ দিয়েছে অ্যান্টিগুয়ার হাইকোর্ট। বলা হয়েছে, অ্যান্টিগুয়ার মাটি থেকে মেহুলকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না। এই সংক্রান্ত কোনও পদক্ষেপের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের অনুমোদনের পাশাপাশি আন্তঃদলীয় শুনানির উল্লেখও করেছে আদালত। মেহুল সবরকমের আইনি সুযোগ-সুবিধাও পাবেন। ইচ্ছের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ২৩ মে মেহুলকে অ্যান্টিগুয়া থেকে সরানোর চেষ্টা হয়েছিল বলেও মেনে নিয়েছে আদালত।


৬৩ বছরের মেহুল ভারতে ওয়ান্টেড। পঞ্জাব ন্য়াশনাল ব্য়াঙ্কের প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার জালিয়াতিতে অভিযুক্ত তিনি। অ্যান্টিগুয়া আদালত তাঁকে রক্ষাকবচ দিলেও, CBI জানিয়েছে, ভারতে মেহুলকে ফেরাতে বদ্ধপরিকর তারা। এ দেশে তাঁকে বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে গিয়ে যেতে হবেই। পঞ্জাব ব্যাঙ্ক দুর্নীতিতে ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মেহুলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে CBI. ২০২২ সালে আরও পাঁচটি অপরাধ মামলা দায়ের হয় তাঁর বিরুদ্ধে। 


দুর্নীতির বিষয়টি জানাজানি হওয়ার আগেই দেশ ছাড়েন মেহুল। তার ১০ মাস পর, ২০১৮ সালে মেহুলের বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিস জারি করে ইন্টারপোল।  এই মুহূর্তে অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডাতে রয়েছেন তিনি। সেখানকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন।  সিবিআই-এর তরফে রেড কর্নার নোটিস জারির আবেদন হলে, চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন মেহুল। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছিলেন। শুধু তাই নয়, ভারতে জেলের দৈন্যদশা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার কথাও তুলে ধরেন।  


এর পর বিষয়টি পাঁচ সদস্যের ইন্টারপোল কোর্টে ওঠে। সেখানে সবকিছু খতিয়ে দেখে মেহুলের যুক্তি খারিজ করা হয় বলে সূত্রের খবর। এর পর, ২০২১ সালের মে মাসে  অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা থেকে কার্যত উধাও হয়ে যান মেহুল। পড়শি দেশ ডমিনিকায় অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক হন। সে খবর সামনে আসতেই সিবিআই-এর ডিআইজি সারদা রাউতের নেতৃত্বাধীন তদন্তকারীদের একটি দল কাজে লেগে পড়ে। ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিসে ভর করে মেহুলকে প্রত্যর্পণের চেষ্টা শুরু হয়।


কিন্তু তার পর যত সময় এগিয়েছে, বিষয়টি ক্রমশই জটিল হয়ে দাঁড়ায়। লন্ডনে মেহুলের আইনজীবী মাইকেল পোলাক স্কটল্য়ান্ড ইয়ার্ডে আলাদা করে অভিযোগ দায়ের করেন। জানান, অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা থেকে কৌশলে বার করা হয়েছে মেহুলকে। কিন্তু সেই দেশের আইন আনুযায়ী, অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডার  নাগরিক সরাসরি ব্রিটেনের রানির প্রিভি কাউন্সিলে আবেদন জানানোর অধিকারী। তাতে মেহুলকে ভারতে প্রত্যর্পণের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। কারণ মেহুলের আইনজীবী সরাসরি ডমিনিকা কোর্টে হিবিয়াস কর্পাস আবেদন জমা দেন। তার আওতায় মেহুলের অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা থেকে গায়েব হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে মামলা শুরু হয়। শুরু হয় আলাদা করে তদন্তও।


এর ফলে মেহুলকে আর ভারতে প্রত্যর্পণ করা সম্ভব হয়নি। বরং ৫১ দিন জেলে থাকার পর ২০২১ সালের জুলাই মাসে ডমিনিকার আদালতে জামিন পান মেহুল। চিকিৎসার সুযোগ পান। ফিটনেস সার্টিফিকেট পেলে অ্যান্টিগুয়া ফিরে যাওয়াতেও মেলে ছাড়পত্র। ডমিনিকায় বেআইনি ভাবে প্রবেশের মামলাও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তার পর এ বছর মার্চ মাসে ইন্টারপোলের তথ্যভাণ্ডার থেকেই গায়েব হয়ে যায় মেহুলের নাম। তাঁর বিরুদ্ধে জারি হওয়া রেড কর্নার নোটিস তো দূর, মেহুলের নামই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।