নয়াদিল্লি: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধী শাহিনবাগের অবস্থান বিক্ষোভের পিছনে কংগ্রেস, বামেদের উস্কানির অভিযোগ তুলে লোকসভায় এই আইন মুসলিম সহ কোনও ভারতীয় নাগরিকেরই ক্ষতি করবে না বলে জানালেন নরেন্দ্র মোদি। লোকসভায় রাষ্র্জপতির ভাষণের ওপর ধন্য়বাদজ্ঞাপন প্রস্তাবের ওপর বিতর্কে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে ফের দাবি করেন, নতুন নাগরিকত্ব আইন দেশের সংখ্যালঘুদের স্বার্থবিরোধী নয়। কংগ্রেস ও বিরোধীদের নিশানা করে বলেন, ওদের কাছে মুসলিমরা শুধুই মুসলমান, আমাদের কাছে সবাই ভারতীয়। আইনে কোনও ভারতীয়ের ক্ষতি হবে না। আমি পরিষ্কার বলতে চাই, সিএএ চালু হওয়ার পর তিনি যে ধর্মই অনুসরণই করুন, ভারতের কোনও নাগরিকের ওপর কোনও প্রভাবই পড়বে না। সিএএ সংখ্যালঘুর স্বার্থহানি করবে না।


দেড় ঘন্টার ওপর দেওয়া ভাষণে জওহরলাল নেহরুর প্রসঙ্গ টানেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষার পক্ষপাতী ছিলেন বলে জানিয়ে মোদি বলেন, পন্ডিত নেহরু স্বয়ং যেখানে পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের সুরক্ষিত করার পক্ষে ছিলেন, তবে কি তিনি সাম্প্রদায়িক ছিলেন, হিন্দু রাষ্ট্র চেয়েছিলেন, আমি প্রশ্ন করতে চাই। মোদি আরও বলেন, কোনও একজনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সাধ পূরণ করতে ভারতের মানচিত্রের ওপর দাগ টেনে তাকে দুটুকরো করা হল। দেশভাগের পর যেভাবে হিন্দু, শিখ ও অন্য সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হয়েছে, তা অকল্পনীয়। ১৯৫০ সালে স্বাক্ষরিত নেহরু-লিয়াকত আলি চুক্তিতে বলা হয়েছিল, পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য হবে না। নেহরুর মতো একজন বড় ধর্মনিরপেক্ষ, উদার মানসিকতার মানুষ, যিনি আপনাদের সব, কেন সব নাগরিক নয়, সংখ্যালঘুদের কথা বলেছিলেন? এর জবাবও দিয়েছিলেন। আমি জানি, দরকার হলে ওনাকেও আপনারা বাতিল করবেন। অসমের মুখ্যমন্ত্রীকে নেহরু যে চিঠি লিখেছিলেন, তা থেকে উদ্ধৃত করছি--- ‘হিন্দু উদ্বাস্তু ও মুসলিম অভিবাসনকারীদের আলাদা করে দেখতে হবে’। ১৯৫০ সালে এই সংসদেই নেহরু বলেছিলেন, কোনও সন্দেহই নেই এ ব্যাপারে যে, যে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন ভারতে থাকতে চলে এসেছেন, তাঁরা নাগরিকত্ব প্রত্যাশা করেন এবং এক্ষেত্রে আইন ঠিকঠাক না থাকলে সংশোধন করা উচিত। ১৯৫৩-য় লোকসভায় নেহরু বলেছিলেন, পূর্ব পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ হিন্দুদের বিপদে ফেলছে। এর নথিপত্র, রিপোর্ট আছে। এইসব দৃষ্টান্তের প্রেক্ষাপটে নেহরু কি সাম্প্রদায়িক ছিলেন, হিন্দু-মুসলমান বিভেদ করেছিলেন, হিন্দুরাষ্ট্র চেয়েছিলেন?

তিনি বলেন, পরিহাসের কথা হল, ভারতকে টুকরো টুকরো করতে চাওয়া বাহিনীর সঙ্গে যারা ছবি তুলতে ভালবাসে, তারাই সিএএ নিয়ে এত কথা বলছে!
‘সংবিধান রক্ষা’র আহ্বান প্রসঙ্গে মোদি কংগ্রেসকে জরুরি অবস্থার কথা স্মরণ করিয়ে বলেন, সংবিধান বাঁচাওয়ের কথা হচ্ছে। আমি মানছি, কংগ্রেসের দিনে ১০০ বার কথাটা বলা উচিত। হতে পারে অতীতের ভুল একদিন উপলব্ধি করবে ওরা। আপনারা কি জরুরি অবস্থার সময়ের স্লোগান ভুলে গেলেন? যখন পরপর রাজ্য সরকার বরখাস্ত করা হত, মন্ত্রিসভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলা হত, সেদিনের কথা?
কংগ্রেসকে নিশানা করে ১৯৮৪-র শিখ-বিরোধী দাঙ্গায় জড়িত একজনকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানোর উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে দলটি ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে চলেছে, তাদের কি মনে পড়ে না ১৯৮৪র শিখ-বিরোধী হিংসার কথা? ওটা লজ্জাজনক ছিল। তার ওপর সেদিনের দোষীদের সাজা দেওয়ার চেষ্টাও ওরা করেনি।
'