ওয়াশিংটন: বৈধ কাগজপত্র না থাকায় দলে দলে অভিবাসীদের দেশ থেকে বের করে দিচ্ছে আমেরিকা। হাত-পা, কোমরে শিকল পরিয়ে ফেরত পাঠানো হচ্ছে নিজ নিজ দেশে। বেআইনি অভিবাসীদের  সঙ্গে অমানবিক আচরণ নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ নেই আমেরিকার বর্তমান ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের। বরং কীভাবে শিকল পরিয়ে বিমানে তোলা হচ্ছে বেআইনি অভিবাসীদের, এবার গোটা পৃথিবীর সামনে তুলে ধরল তারা। (Illegal Immigrants)


ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক দফায় ভারতীয় অভিবাসীদের ফেরত পাঠিয়েছে ট্রাম্প সরকার। আমেরিকার সেনার বিমান পঞ্জাবের মাটিতে নেমেছে শয়ে শয়ে অভিবাসীকে নিয়ে। সেই বিমানের ধারাকাছে সংবাদমাধ্যম পৌঁছতে না পারলেও, ভারতীয়দের হাত-পা, কোমরে বেড়ি পরানোর ছবি ও ভিডিও সামনে এসেছে। অমানবিক আচরণের কাহিনিও শোনা গিয়েছে দেশে ফিরে আসা মানুষের মুখে। (Illegal Immigrants Deported)


আমেরিকার সীমান্ত প্রহরী বাহিনীও ভারতীয়দের হাতকড়া, শিকলবাঁধা ভিডিও সামনে আনে এর আগে। তবে এবার সরাসরি হোয়াইট হাউস বেআইনি অভিবাসী বিতাড়নের দৃশ্য তুলে ধরল পৃথিবীর সামনে। ৪১ সেকেন্ডের ওই ভিডিওয় বিমাবন্দরে বন্দিদের এক এক করে হাতকড়া, শিকল পরাতে দেখা গিয়েছে আমেরিকার Enforcement and Removal Operations আধিকারিকদের। 



দেখা গিয়েছে, পায়ে যে শিকল পরানো হচ্ছে অভিবাসীদের, তাও তৈরি হাতকড়ার আদলেই। লম্বা শিকলের দুই প্রান্তে ধাতব বন্ধন রয়েছে, যার মধ্যে পা আটকে দেওয়া হচ্ছে। এর পর কোমরে বাঁধা হচ্ছে শিকল। সেই শিকলের মধ্যে দিয়ে হাতকড়া ঢুকিয়ে আটকে দেওয়া হচ্ছে দুই বাহু। সেই অবস্থায় নড়াচড়ার উপায় নেই তেমন। কোনও রকমে এক পা, দু’পা করে বিমানের সিঁড়ি বেয়ে উঠছেন অভিবাসীরা। 


ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে হোয়াইট হাউসের তরফে লেখা হয়, ‘বেআইনি এলিয়েনদের বিতাড়নের উড়ান’। ভিডিওটি দেখে উত্তেজনা বোধ হচ্ছে বলেও জানায় হোয়াইট হাউস। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া দেশে প্রবেশকারীদের বারং বার ‘এলিয়েন’ বলে উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টেও একই শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যা যথেষ্ট অবমাননাকর বলেই মত মানবাধিকার কর্মীদের। এমনকি ট্রাম্পের সহযোগী, ধনকুবের ইলন মাস্ক অমানবিক আচরণের ওই ভিডিও-য় যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, তা-ও কুরুচিকর বলে মনে করা হচ্ছে। ভিডিওটি-তে মাস্কের প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘Haha, Wow’. 




উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে প্রতি বছর বহু মানুষই আমেরিকায় ভিড় করেন। কারণ রাজনীতি, সমাজনীতির হাওয়াবদল হলেও, আমেরিকা আজও অনেকের কাছে স্বপ্নপূরণের দেশ। তাই স্বপ্ন দেখার শাস্তি স্বরূপ কাউকে শিকলে বন্দি করা যায় কি না, সেই ভিডিও গোটা পৃথিবীকে দেখানো যায় কি না, উঠছে প্রশ্ন।  এর আগে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট নাগরিকদের হাত-পায়ে বেড়ি পরানোর তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। স্বপ্ন দেখার শাস্তি হতে পারে না বলে জানিয়েছিলেন। তাই নিজে বিমান পাঠিয়ে সসম্মানে ফিরিয়ে এনেছিলেন নিজের দেশের বাসিন্দাদের। ভারতের তরফে তেমন কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। বরং বেআইনি আভিবাসন নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে একমত পোষণ করতেই দেখা গিয়েছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারকে। ভারতীয় অভিবাসীরা যদিও দেশে ফিরে যন্ত্রণার কথাই তুলে ধরেছেন। হাত-পায়ে বেড়ি পরানো থেকে, নামমাত্র খাবার, আমেরিকার অমানবিক আচরণের কথা উঠে এসেছে মুখে মুখে। আর সেই আবহেই এই ভিডিও।