কলকাতা: দাদা আমি কারও সাথে মিশি না!  লকডাউনে সোশাল মিডিয়ায় অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষের একটি কবিতা ভাইরাল হয়েছিল। কিন্তু, বিধানসভা ভোটের আগে তিনি যাঁদের সঙ্গে মিশছেন, তাতে জল্পনা ক্রমশ বাড়ছে। সেই আগুনে আরও ঘি ঢেলেছে রুদ্রনীলের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য। তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ২০২১ এ অ্যাডভান্টেজ বিজেপি। দলত্যাগী মন্ত্রী, নেতাদের সঙ্গে আমার আক্ষেপটা প্রায় এক।


বুধবার রাতে রুদ্রনীলের বাড়িতে গিয়েছিলেন বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা। বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়র সঙ্গেও কথা হয়েছে তাঁর। তাহলে কি রুদ্রনীলের  বিজেপিতে যোগদান প্রায় চূড়ান্ত?  জন্মদিনের সকালে তাঁকে ফুল পাঠিয়েছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়, রাতে গোলাপ দিয়েছে বিজেপি। কিন্তু রুদ্রনীলের মনে কোন ফুল বিরাজ করছে, এই প্রশ্নই ঝড় তুলেছে রাজনৈতিক মহলে। রুদ্রনীল বলছেন, বিজেপিতে যোগ দেব কিনা, এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে যারা বিকল্পের কথা বলছেন, এটা একটা গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার জায়গা এবং তারা যে সব ভুল বলছেন, এমনটা নয়। রাজ্য বিজেপি  মুখপাত্র  শমীক ভট্টাচার্যের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, অনেকে ছেড়ে আসতে চাইছেন। দরজা খোলা।

শুধু বিজেপিকে এগিয়ে রাখাই নয়, তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগও তুলেছেন রুদ্রনীল। বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেত্রী। বাকি কেউ অন্যের কথা শোনে না। চল্লিশ শতাংশ মানুষ নিজের মতো চলেন। তারা এটা ঘটালে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। ষাট শতাংশ ভাল মানুষ কোণঠাসা। যাবতীয় দায়িত্ব মমতার কাঁধে। মানুষের টাকা পকেটে পুরেছে। এর থেকে বড় অপরাধ হয় না। তিনি আরও বলেছেন, বাম আমলে কিছু উন্নয়ন হয়েছিল। নইলে ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকে কী করে! তৃণমূলে কারও শাস্তি হয়নি। বাকিরা সাহস পেয়েছে। মমতা যাদের নিয়ে চলছেন, কজন বিশ্বস্ত তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বলেও জানান তিনি। পাল্টা তাঁকে নাম না করে নিশানা করে তৃণমূল নেতা ও পরিষদীয় প্রতিমন্ত্রী তাপস রায় বলেন, কে গেল, কে এল, কিছু যায় আসে না। সুযোগ এলে চলে যায়, এঁরা মানুষের সঙ্গেই নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রাজ্যে পালাবদলের পর থেকে রুদ্রনীল তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত ছিলেন। একুশে জুলাইয়ের মঞ্চেও তাঁকে দেখা যেত। ২০১৪ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গ বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পর্ষদের সভাপতি  হওয়ার পর নানা মহলে প্রশ্ন ওঠে, এটা কি তৃণমূলের প্রতি আনুগত্যের পুরস্কার? এক বছর পর সেই পদ খোয়ান রুদ্রনীল। কিন্তু, এক পদ যেতে না যেতেই আরেক সরকারি পদ পেয়ে যান তিনি। ২০১৫ সালে রুদ্রনীলকে জনপরিষেবা অধিকার কমিশনারের চেয়ারে বসানো হয়।  সমস্ত দফতরের কাজ নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগ খতিয়ে দেখার দায়িত্বে ছিল এই কমিশন।  সূত্রের খবর, এই পদে রুদ্রনীল ঘোষের বেতন ছিল মাসিক ২ লক্ষ টাকা।   সঙ্গে ছিল অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও।লকডাউনে রুদ্রনীলের কবিতা যখন ঝড়ের গতিতে ভাইরাল হচ্ছে, তখনও এই পদেই ছিলেন তিনি। সেই কবিতায় তিনি লেখেন, দাদা আমি সাতে পাঁচে থাকি না... যে যা করে দেখি ভাই, সুবিধেটা নিয়ে যাই... দুম করে প্রকাশ্যে আসি না... দাদা আমি সাতে পাঁচে থাকি না!

গত ডিসেম্বরে জনপরিষেবা অধিকার কমিশনারের পদে রুদ্রনীলের মেয়াদ ফুরিয়েছে। এখন তাঁর অভিযোগ, সেই পদে থাকার সময় তাঁকে কাজই করতে দেওয়া হয়নি। তিনি বলেছেন, দুয়ারে সরকার করতেই হতো না , যদি আমাকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া হতো। আমি অনেক বলেও কিছু হয়নি। পাল্টা তাপস রায়ের কটাক্ষ, এরা আবার কবে রাজনীতি করেছে। যারা মানুষের সঙ্গে রাজনীতিই করল না, তাদের মুখে কী শুনছি!

রুদ্রনীলের সুর যে বদলেছে, তা স্পষ্ট। শিবির বদলও কি আসন্ন? সেটাই এখন দেখার।