উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, পূর্ণেন্দু সিংহ ও মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা: তুমুল ধস্তাধস্তি। মারপিট-হাতাহাতি। জখম-অসুস্থ একাধিক বিধায়ক। সোমবার এমনই ঘটনায় সাক্ষী থেকেছে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা। গোটা ঘটনায় এখনও সাসপেন্ড হয়েছেন পাঁচ বিজেপি সাংসদ। এমন ঘটনা অনভিপ্রেত হলেও রাজ্যের বিধানসভায় যে নজিরবিহীন নয় তা বলছেন বিশেষজ্ঞরাই। সোমবার বিধানসভায় তৃণমূল ও বিজেপি বিধায়কদের যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে তা মনে করিয়ে দিয়েছে বছরকয়েক আগের একটি ঘটনা। ২০১৭ সাল। ধস্তাধস্তিতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলনেতা। একইরকম ঘটনা ঘটেছিল বছর দশেক আগেও। ২০১২ সালেও একই ঘটনা ঘটেছিল। সেবার আক্রান্ত হয়েছিলেন সিপিএম বিধায়করা।  


সোমবার বিধানসভার মধ্যে তৃণমূল এবং বিজেপি বিধায়কদের হাতাহাতিতে ঘটেছে রক্তারক্তিও! অ্যাম্বুল্যান্সে করে বিধানসভা থেকে বেরিয়েছেন বিধায়করা। রামপুরহাটকাণ্ড নিয়ে তরজার জেরে বিধানসভায় যে তুলকালাম হয়েছে সেই ছবি মনে করিয়ে দিয়েছে ২০১২ সালের ১১ ডিসেম্বরের কথা। সেই দিন বিধানসভার ভিতরে হাতাহাতিতে জড়িয়েছিলেন তৃণমূল এবং সিপিএম বিধায়করা।


কী ঘটেছিল সেবার:
স্পিকার চিটফান্ড সংক্রান্ত মুলতুবি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার দাবি খারিজ করায়, বিক্ষোভ দেখান বাম বিধায়করা৷ তখনই বিক্ষোভ দেখাতে স্পিকারের দিকে ছুটে যান কয়েকজন সিপিএম বিধায়ক। তারপরেই বাম বিধায়কদের দিকে শাসক পক্ষের বিধায়করা তেড়ে এসেছিলেন বলে অভিযোগ। অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধ্বে অভিযুক্ত বাম বিধায়কদের অধিবেশন থেকে সাসপেন্ড করা হয়। এরপর ফের শুরু হয় বামেদের বিক্ষোভ৷ সিপিএম বিধায়ক দেবলীনা হেমব্রম এবং তৃণমূল বিধায়ক মেহমুদা বেগম পরস্পরের দিকে ছুটে আসেন৷ শাসক বিরোধী দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়৷ আহত হন দুই সিপিএম বিধায়ক দেবলীনা হেমব্রম এবং গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়৷


ফের এমনই একটি ঘটনা ঘটেছিল ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি।


যা হয়েছিল:
সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর সংক্রান্ত বিল ঘিরে বিধানসভায় বিধায়কদের মধ্যে ধস্তাধস্তি বাধে। স্পিকারের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান তৎকালীন বিরোধী দলনেতা কংগ্রেস বিধায়ক আব্দুল মান্নান। তাঁকে ২ দিনের জন্য সাসপেন্ডের নির্দেশ দেন স্পিকার। বিরোধী দলনেতা পাল্টা বিক্ষোভ দেখালে, স্পিকার মার্শালদের নির্দেশ দেন, তাঁকে কক্ষ থেকে বার করে দিতেন। তারপরেই বিরোধী বিধায়কদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। ধস্তাধস্তির জেরে অসুস্থ বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানকে স্ট্রেচারে করে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। 


১৯৮৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারিও চরম বিশৃঙ্খলার সাক্ষী ছিল এই বিধানসভা। বিধায়কদের হাতেই নিগৃহীত হতে হয়েছিল তত্কালীন রাজ্যপাল সৈয়দ নুরুল হাসানকে৷ সেবার অভিযোগের তির ছিল কংগ্রেস বিধায়কদের দিকে৷  নিগৃহীত হয়ে বাজেট অধিবেশনের উদ্বোধনী ভাষণ শেষ না করেই চলে যান রাজ্যপাল৷ কংগ্রেস পাল্টা অভিযোগ করে, বিধানসভা ভবনে বাইরের লোক এনে তাঁদের বিধায়কদের মারা হয়েছে৷ 


আরও পড়ুন: উইল স্মিথের চড় কাণ্ডকে হাতিয়ার করে সাধারণ মানুষকে বিশেষ বার্তা কলকাতা পুলিশের