নয়াদিল্লি ও কলকাতা: রেলমন্ত্রী থাকাকালীন বাজেটে ভাড়া বাড়িয়ে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন দীনেশ ত্রিবেদী। চাপের মুখে রেলমন্ত্রী পদ ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে। ন’বছর পর সাংসদ পদে ইস্তফা দিয়ে সেই সময়ের প্রসঙ্গ টানলেন তিনি। যা নিয়ে পাল্টা কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে তৃণমূল।


রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে নাটকীয়ভাবে ইস্তফা দিলেন তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী। ইস্তফা দেওয়ার পর তৃণমূল সাংসদ বলেন, 'দমবন্ধ হয়ে আসছে। দলে থেকে কাজ করা যাচ্ছে না। এর থেকে বাংলায় গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াব।'


এর প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের কটাক্ষ, দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছিল, তৃণমূল ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন ভাল হয়েছে। নইলে অসুস্থ হয়ে পড়তেন।


ভোটের মুখে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে নাটকীয় ভঙ্গীতে রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে, নেতাজি, বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিলেন দীনেশ ত্রিবেদী!


সেইসঙ্গে তুললেন রেলমন্ত্রী থাকার সময়কার প্রসঙ্গ।


২০০৯ থেকে মনমোহন সিংহর মন্ত্রিসভায় রেলমন্ত্রী ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১১ সালে তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর, রেলমন্ত্রী করেন দীনেশ ত্রিবেদী।


২০১২ সালে প্রথমবার রেল বাজেট পেশ করতে গিয়েই রেলের ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব দেন দীনেশ ত্রিবেদী। সেই সঙ্গে সবাইকে চমকে দিয়ে দাবি করেন, রেল আইসিইউ-তে চলে গেছে।


তাঁর আগে যেহেতু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেল মন্ত্রক চালাতেন, তাই স্বাভাবিকভাবেই তখন প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি রেলের বেহাল দশার জন্য তৃণমূল নেত্রীকেই দায়ী করলেন দীনেশ ত্রিবেদী?


এরপরই দীনেশ ত্রিবেদীকে সরিয়ে মুকুল রায়কে রেলমন্ত্রী করার প্রস্তাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষমেশ চাপের মুখে দীনেশ ত্রিবেদী রেলপন্ত্রী পদে ইস্তফা দেন। মুকুল রায় রেলমন্ত্রী হয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা মতো বর্ধিত রেলভাড়া প্রত্যাহার করে নেন।


সেই মুকুল রায়ও এখন বিজেপিতে!আর দীনেশ ত্রিবেদীর বিজেপিতে যাওয়া এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।


তা নিয়েই কটাক্ষ করে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, দেখবেন মুকুল রায়ের দলে গিয়ে যাতে দমবন্ধ না হয়ে যায়।


তাৎ‍পর্যপূর্ণ বিষয় হল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল তৈরি করার পর তাঁর দলের তরফে প্রথম রাজ্যসভার সাংসদ করেছিলেন দীনেশ ত্রিবেদীকেই।


তৃণমূল নেতা ও পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেছেন,মমতা দয়া করে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছিলেন দীনেশকে।দীনেশ ত্রিবেদীর জন্ম গুজরাতি পরিবারে। জনতা দলের তরফে গুজরাত থেকে রাজ্যসভার সাংসদও ছিলেন তিনি। সেই তিনিই এবার তৃণমূলের সাংসদ পদ ছাড়ার পর কটাক্ষের সুর শাসকের গলায়।


রাজীব গান্ধীর সঙ্গে পরিচয়ের সুবাদে ১৯৮০ সালে কংগ্রেসে যোগ দেন দীনেশ ত্রিবেদী। ১৯৯০ সালে চলে যান রাজীবের রাজীবের রাজনৈতিক শত্রু বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংয়ের দিকে।১৯৯৮ সালে তৃণমূল তৈরি করার তাতে যোগ দেন দীনেশ।


এবার বিজেপিতে কবে যাচ্ছেন তিনি?এটাই এখন রাজনৈতিক মহলে বড় প্রশ্ন।


প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, দীনেশ ত্রিবেদীর কোনও জনভিত্তি নেই। আগে তাঁর খুঁটি ছিল তৃণমূল, এখন বিজেপি।


রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, দীনেশ ত্রিবেদীর কোনওদিনই কোনও রাজনৈতিক ভিত্তি ছিল না। তাই তাঁর ইস্তফার তৃণমূলের কোনও ক্ষতি হবে না! যদিও, অপর অংশের বক্তব্য, ভোটের মুখে নাটকীয়ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘদিনের সঙ্গীর এভাবে তৃণমূল ছাড়াটাই, তাদের অস্বস্তি বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট।