উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: ২৮ ফেব্রুয়ারি বাম কংগ্রেসের ব্রিগেড। নতুন জোট সঙ্গী আব্বাস সিদ্দিকীকে পাওয়া যাবে কি না জানতে আরও দু দিন অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু তার হপ্তাখানেক আগে ব্রিগেডের প্রচারে নতুন চমক- ' টুম্পা সোনা ব্রিগেড চল'। 'টুম্পা, তোকে নিয়ে ব্রিগেড যাব' ভিডিওতে উত্তাল সামাজিক মাধ্যম। গানের লিরিক্সে সিপিএম এর নাম নেই। কিন্তু গানের কথা, যেমন, " বিজেমূল, ওরা সব বিজেমূল" বা ভিডিওতে সিপিএমের দলীয় লাল পতাকার সমাহার বুঝিয়ে দিচ্ছে এ গান তৈরির পিছনে যারা আছে তারা আসলে সিপিএমেরই দরদী, সমর্থক।
তবে কি সিপিএমের বৃদ্ধতন্ত্র পিছু হটছে? 'তাসের দেশ' এর 'কৃষ্টি' পরাকাষ্ঠা ছেড়ে তারা কি 'নূতন যৌবনের দূত'কে সামনে আনতে চলেছে? বঙ্গ সিপিএমের ব্রিগেড প্রচারে 'টুম্পা সোনা' শুনে জনমানসে এখন এই একটাই প্রশ্ন। যদিও সিপিএম খাতা-কলমে এই গানের দায়ভার স্বীকার করেনি। তবে সাতসকালে সূর্যকান্ত মিশ্র তার নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে গানটা প্রচার করেছেন। সুজন চক্রবর্তী গান নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। নিজের ফেসবুক পেজে শেয়ার করেছেন মহম্মদ সেলিম।
অবশ্য নিন্দা যে একেবারে হয়নি তা কিন্তু নয়। কয়েকজন নেতার খুব মুখ ভার হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ব্রিগেড ভরাতে টুম্পা!!! 'মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক' বলে আসা পাকা চুলের রক্ষণশীল নেতাদের পক্ষে "আঠাশে তুলবো আওয়াজ, টুম্পা/ মোদি দিদি সব ভোগে যাক, টুম্পা" যে সহজপাচ্য নয় তা বুঝতে মার্ক্স না পড়লেও চলে। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে 'টুম্পা সোনা ব্রিগেড চলো' যা শেয়ার হয়েছে তার সিকি ভাগ শেয়ার সিপিএমের কোনও বড় নেতার বক্তৃতা সাম্প্রতিক কালে হয়েছে বলে নেটিজেনরা মনে করতে পারছেন না। আর মজা হল আমি বর্ধমানের এক নেতার কথা জানি যিনি এই গান শুনে রেগে লাল। কিন্তু এমনই কপাল যে পার্টি অফিস থেকে বাড়ি গিয়ে শুনছেন তার ১১ বছরের নাতি 'টুম্পা, তোকে নিয়ে ব্রিগেড যাব' বলে চিৎকারে করে সারা বাড়ি মাত করছে।
ক'দিন আগেই অরব, অভিষেক, দীপাংশু, সায়নের 'টুম্পা সোনা' রিলিজ হবার পরই রীতিমত শোরগোল পড়ে যায়। অনেকেই গানটিতে A মার্কা লিরিক্স আর চটুল সুরের ট্যাগ লাইন বেঁধে দিলেও কচিকাচার দলে গানটি সুপার ডুপার হিট। তাই কি এই ভোট মরশুমে সেই তরুণ ভোটারদের কাছে পৌঁছতেই সিপিএম 'টুম্পা সোনা'র প্যারোডি করল?
এই নিয়েও সামাজিক মাধ্যমে, চায়ের দোকানে, অফিস কাছারিতে শুরু হয়েছে লড়াই। সে লড়াই এর ঝাঁঝ রাজনৈতিক নেতাদের বাকযুদ্ধের থেকে কম নয়। তৃণমূলের ব্রিগেডে দেবের পাগলু ড্যান্স আর সিপিএমের টুম্পা সোনার প্যারডিকে কেউ কেউ একই জায়গায় রাখছেন। তারা বলছেন, কালে কালে হল কি? এ তো যেন তেন প্রকারেণ ভোটারের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা! সংস্কৃতি তো লাটে উঠল!
সত্যি বলতে কি, এখন রাজনীতির আঙ্গিনায় সংস্কৃতি শব্দটাই বড় বেমানান হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক নেতারা যেভাবে ভাষাদূষণ করছেন তাতে মনে হচ্ছে ভোট, মিটিং, মিছিল মানেই হয় এসপার নয় উসপার। 'কেউ টানছেন প্রতিপক্ষের 'বাপকে'।কেউ হুংকার দিচ্ছেন ,বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যাগ্র মেদিনী।'
অথচ একটা সময় ভোটে উপলক্ষ্যে বিরোধী দলগুলির মধ্যে দেওয়ালে, দেওয়ালে ছড়ার লড়াই, ব্যঙ্গচিত্রের প্রতিযোগিতা চলত। এখন সে সব লাটে তুলে সবাই দেওয়াল দখল করতেই ব্যস্ত। তাতে কী লেখা হবে সেটা আসল বিষয় নয়।তার থেকেও বড় কথা হল পেশি শক্তির প্রদর্শন। অসভ্য কথা বলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করা।
এইরকম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ' টুম্পা সোনা ব্রিগেড চল' একটু অন্যরকম বইকি। মূল গানটির সুর, কথা কারুর অপছন্দ হতেই পারে। কিন্তু প্যারোডি হিসাবে এই গানটিও সুপার ডুপার হিট।কেউ কেউ বলছেন এই গানটি নাকি মূল গানটির থেকেও ভালো। কোথাও ছন্দপতন নেই। অসাধারণ এরেঞ্জমেন্ট।সবচেয়ে বড় কথা অনেক সহজেই সিপিএমের রাজনৈতিক বক্তব্য পৌঁছে যাচ্ছে সেই সমস্ত মানুষের কাছে যারা রাজনৈতিক বক্তৃতা শুনলেই কানে আঙুল দেন। তাই বাহবা দিতেই হয় রাহুল, নীল্বাজদের যাদের ক্ষুরধার মস্তিষ্কের ফসল 'টুম্পা ব্রিগেড চল'।
আর একটা কথা বলেই লেখাটা শেষ করব। 'টুম্পা'তে যাদের এলার্জি তারা ব্রিগেডের সমাবেশ মঞ্চ জুড়ে কংগ্রেস নেতাদের সহ্য করতে পারবেন তো ?একবার ভেবে দেখুন তো, এই ব্রিগেডে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কত হাততালির ঝড়ের সাক্ষী আপনি । ব্রিগেডে আসার সময় প্রতিবার যে শহীদ বেদীতে মালা দিয়ে আসেন সেই বেদীর নিচে এখনো লেখা আছে ,"কংগ্রেসের গুন্ডা দ্বারা নিহত।" আর এখন অধীর চৌধুরির বক্তব্যে হাততালি দিয়েই সীতারাম ইয়েচুরির বক্তৃতায় হাততালি - ইয়েস কমরেড, এটাই বাস্তব , এটাই সংসদীয় রাজনীতি। 'ভোট যে বড় বালাই'। তাই টুম্পা শুনে ভুরু না কুঁচকে বরং গানটাকে উপভোগ করুন। মনে রাখবেন, 'টুম্পা' নিছক একটা নাম নয়। কে বলতে পারে, 'টুম্পা'ই হয়ত এখন আঠারো থেকে তিরিশ বছরের কোড নেম। ক'দিন আগেই এস এফ আই, ডি ওয়াই এফ আই- এর নবান্ন অভিযান দেখিয়ে ছিল 'যৌবনেরই ঝড় উঠেছে আকাশ পাতালে'।সেই উত্তাল তরঙ্গকে না আটকে তাদের স্বাভাবিক ছন্দে বইতে দিন। তাহলেই হয়ত ফিরবে হাল।থাকবে লাল।