নয়াদিল্লি: দীর্ঘ অসুস্থতার পর মারা গিয়েছেন সাহারাকর্তা সুব্রত রায় (Subrata Roy Demise)। কিন্তু সাহারায় বিনিয়োগকারী লক্ষ লক্ষ মানুষ এখনও টাকা ফেরত পাননি। বরং ভারতের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা SEBI-র অ্যাকাউন্টে এখন ২৫ হাজার কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। সুব্রতর মৃত্যুতে ওই টাকা নিয়ে ফের চর্চা শুরু হয়েছে। (Sahara Group)


মঙ্গলবার রাতে মুম্বইয়ের হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন সুব্রত। দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি। শেষ মেশ ৭৫ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর প্রয়াণে সাহারা ইন্ডিয়া পরিবারের তরফে সুব্রতর স্বপ্ন, পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু যাঁরা টাকা ফেরত পাননি আজও, তাঁদের কী হবে, সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও অধরা।


তাই SEBI-র অ্যাকাউন্টে পড়ে থাকা ২৫ হাজার কোটি টাকার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। জীবিত থাকাকালীন একাধিক আইনি ঝামেলায় জড়িয়ে ছিলেন সুব্রত। চিটফান্ড কাণ্ডে SEBI-র নিয়ম কানুন লঙ্ঘন করার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে, যা বরাবর অস্বীকার করে এসেছে সাহারা ইন্ডিয়া।


২০১১ সালে সাহারার দুই সংস্থা, সাহারা ইন্ডিয়া রিয়েল এস্টেট কর্পোরেশন লিমিটেড এবং সাহারা হাউজিং ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডকে চিহ্নিত করে SEBI. নির্দেশ আসে, যে ৩ কোটি মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে সাহারা, বেআইনি ভাবে, আইন লঙ্ঘন করে তা সংগ্রহ করা হয়েছে। OFCD বন্ডের মাধ্যমে ওই ৩ কোটি বিনিয়োগকারীকে টাকা ফেরত দিতে হবে সাহারাকে।


আরও পড়ুন: PM Kisan: ২০০০ টাকা পাঠাল সরকার, আপনার অ্যাকাউন্টে পড়েছে কি, দেখে নিন এভাবে


সেই নিয়ে দীর্ঘ আইনি টানাপোড়েন, তর্ক-বিতর্ক চলে। শেষ মেশ, ২০১২ সালের ৩১ অগাস্ট সুপ্রিম কোর্ট SEBI-র নির্দেশ বহাল রাখে।  ১৫ শতাংশ সুদ-সহ বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দিতে বলা হয়। টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য SEBI-র সঙ্গে একটি জয়েন্ট রিফান্ড অ্যাকাউন্ট খোলার নির্দেশও দেয় শীর্ষ আদালত।


৯৫ শতাংশ বিনিয়োগকারীকে টাকা ফেরত দেওয়া হয়ে গিয়েছে বলে সেই সময় দাবি করে সাহারা।  কিন্তু  SEBI-র ওই অ্যাকাউন্টে সাহারাকে ২৪ হাজার কোটি টাকা জমা দিতে বলা হয়। SEBI-র সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ১১ বছরে ১৩৮.০৭ কোটি টাকাই ফেরত গিয়েছে বিনিয়োগকারীদের কাছে। অ্যাকাউন্টে পড়ে থাকা ওই টাকা এই মুহূর্তে সুদে-আসলে বেড়ে ২৫ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা হয়েছে।


SEBI জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত টাকা ফেরত চেয়ে তাদের কাছে ১৯ হাজার ৬৫০টি আবেদন জমা পড়েছে। ৫৩ হাজার ৬৮৭টি অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করার আবেদন এসেছে। এর মধ্যে ১৭ হাজার ৫২৬টি আবেদন খতিয়ে দেখে ৪৮ হাজার ৩২৬টি অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করেছে তারা। অর্থাৎ ১৩৮.০৭ কোটি টাকা ফেরত গিয়েছে সাহারার বিনিয়োগকারীদের কাছে, যার মধ্যে সুদবাবদই ৬৭.৯৮ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়।


এর আগে, ২০২২ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত যে হিসেব দেয় SEBI, সেই অনুযায়ী, ১৩৮ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছিল তারা। অর্থাৎ ২০২২-'২৩ অর্থবর্ষে মাত্র ৭ লক্ষ টাকা সাধারণ মানুষকে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়। এদিকে, সাহারা গোষ্ঠীর চারটি সমবায় সংস্থায় যাঁরা বিনিয়োগ করেছিলেন, তাঁদের ৫ হাজার কোটি টাকা ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তার জন্য CRS-Sahara Refund Portal-এর সূচনাও হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ওই পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করেছেন ১৮ লক্ষ মানুষ। ন'মাসের মধ্যে ১০ কোটি বিনিয়োগকারীর টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আবেদনকারীদের নথিপত্র যাচাই করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। বন্ড হোল্ডারদের কাছ থেকে যেমন সাড়া মিলছে না, তেমন অনেক ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের খোঁজই মিলছে না।