নয়াদিল্লি: করোনা পর্বে বাড়ছে প্লাস্টিক সহ চিকিৎসা সরঞ্জামের বর্জ্য। তার কারণ লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রতিদিনের জীবনে ফেস শিল্ড, গ্লভস, পিপিই কিটের ব্যবহার বেড়েছে। এই ব্যবহারের পর তাঁরা ফেলে দিচ্ছেন। প্রাথমিকভাবে হাসপাতালগুলিতে ব্যবহৃত হত। কিন্তু এখন প্রতিদিনের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ।
আজ ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। উত্তরোত্তর প্লাস্টিক ব্যবহার বৃদ্ধির জেরে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, প্লাস্টিকের ব্যবহারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে প্রতিহত করছে পরিস্থিতি। প্লাস্টিকের উপর নির্ভরশীলতা এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম থেকে বর্জ্য তৈরি মহামারী পরিস্থিতিতে নতুন আশঙ্কা তৈরি করেছে। উল্লেখ্য, করোনাকালে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে পিপিই কিট। বাড়ির আবর্জনা সঙ্গে যোগ হয়েছে ফেস শিল্ড, সার্জিক্যাল মাস্ক। একইসঙ্গে স্যানিটাইজারের বোতল, গ্লভসও যোগ হয়েছে সেই তালিকায়। সব মিলিয়ে গত এক বছরের বেশি সময়ে প্লাস্টিক ব্যবহার বেড়েছে। প্লাস্টিকের বর্জ্য নিয়ে উদ্বেগ যেমন বাড়ছে তেমনই এই পরিস্থিতিকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায় তা নিয়ে চিন্তিত সংশ্লিষ্ট মহল।
টক্সিক লিঙ্ক নামে একটি স্বেচ্ছাসেবি সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা রবি অগ্রবাল সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেন, মহামারী পরিস্থিতির একদম প্রাথমিক পর্ব থেকে প্লাস্টিক ব্যবহার বেড়েছে। এখন আমাদের লক্ষ্য প্লাস্টিক নয় বরং প্লাস্টিক ব্যবহার থেকে মুক্তির উপায় খোঁজাই আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, মাস্ক, পিপিই-র মতো চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহার হওয়া সামগ্রী এখন বাড়িতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমুদ্র সহ উপকূলবর্তী অঞ্চলে মাস্ক ছড়িয়ে রয়েছে তাও দেখা গিয়েছে।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বলছে, করোনা চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহারের পর ভারতে ৪৫ হাজার ২০৮ টন বর্জ্য তৈরি হয়েছে গত বছর জুন মাস থেকে চলতি বছর ১০ মে পর্যন্ত। প্রতিদিনের হিসেবে যা ১৩২ টন। করোনা পূর্বের তুলনায় ৬১৫ টন বায়ো মেডিক্যাল তথা চিকিৎসা সরঞ্জাম থেকে বর্জ্য বেড়েছে। শতকরার হিসেবে যা ১৭ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাড়ি এবং হাসপাতাল থেকে শুধু করোনা সংক্রান্ত বর্জ্যই নয়, মহামারী পর্বে একজনও করোনা আক্রান্ত নয়, এমন বাড়িতেও বেড়েছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। মূলত জরুরি পরিষেবা থেকে খাবার প্যাকেজিংয়ে বেড়েছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। মূলত বায়ো মেডিক্যল বর্জ্যকে ৪ ভাগে ভাগ করা হয়। হলুদ (মানুষ, প্রাণী, মাটির মতো অত্যন্ত সংক্রামক বর্জ্য) লাল (পাইপ, বোতল টিউব, সিরিঞ্জের মতো ডিসপোজেবল জিনিস থেকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য বর্জ্য) সাদা ( ইনজেকশন, সিরিঞ্জ,) নীল ( কাচ সহ ওষুধের শিশির মতো বর্জ্য)। কোভিড চিকিৎসা সরঞ্জাম থেকে বর্জ্যকে হলুদ তালিকাভুক্ত করা হয়।
ভারতে প্রতিদিনের হিসেবে ৮০০ টন বর্জ্য বেড়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন শুধু চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে নজর না দিয়ে অন্যদিক গুলিও খতিয়ে দেখা উচিত। সেন্টার ফর সায়েন্স এন্জ এনভারোমেন্টের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার সিদ্ধার্থ সিংহ বলেন, কোভিড নয় এমন চিকিৎসা সরঞ্জাম থেকে বর্জ্যের পরিমাণ বেড়েছে। এই সব ক্ষেত্রে বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। কিন্তু করোনার ক্ষেত্রে হচ্ছে না। তবে এই পোড়ানোর জন্য আবার বায়ু দূষণ বাড়ছে কি না তা স্পষ্ট নয় বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
উল্লেখ্য, গত বছর মে মাসে মহারাষ্ট্রের দূষণ নিয়ন্ত্রক পর্ষদ জানায়, বায়ো মেডিক্যাল থেকে ৪৫ শতাংশ বর্জ্য বেড়েছে। করোনার আগে প্রতিদিনের হিসেবে এই সংখ্যাটা ছিল ৬২ হাজার কিলো। করোনা পর্বে প্রতিদিন শুধু চিকিৎসা সরঞ্জাম থেকে তৈরি হচ্ছে ৯০ হাজার কিলো বর্জ্য। গত বছর জুলাই মাসে করোনা চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য নিয়ে গাইডলাইন প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রক পর্ষদ। একইসঙ্গে তারা বলে, বর্জ্য জমানো, তা নিষ্পত্তির সুবিধা সহ কীভাবে এই সমস্যার মোকাবিলা করা যাবে তা জানতে পরিবেশ মন্ত্রকের কাছে আবেদন করতে পারবে রাজ্যগুলি। সেন্টার ফর সায়েন্স এন্জ এনভারোমেন্টের অন্যতম প্রোগ্রাম ডিরেক্টর অতীন বিশ্বাস বলেন, তখন কয়েকটি রাজ্য এই সুবিধা নিয়েছিল। এমনকি একাধিক রাজ্য এই সুবিধা সম্পর্কে জানত না বা জানলেও এই বিষয় সসম্পর্কে খুব কম তথ্য ছিল।
অভূতপূর্ব স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সঙ্কট সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞরা বলেছেন ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করার উপায় রয়েছে। সিদ্ধার্থ সিংহ বলেন, প্রত্যেককে মনে রাখতে হবে প্লাস্টিক ব্যবহার করব না। প্লাস্টিক অনেক ক্ষেত্রেই পুনর্ব্যবহার করা যায়। কিন্তু লক্ষ্য থাকবে ব্যবহার কমানো বা একেবারেই না করা। রবি অগ্রবাল মনে করেন, একেবারে পুনর্ব্যবহারের ব্যবস্থা বা নষ্ট করে ফেলাই এই সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় এনে দেবে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যককে উদ্যোগ নেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, এটা সরকার এবং সাধারণ মানুষের সমন্বয়ের মাধ্যমেই সম্ভব। অতীন বিশ্বাসেক কথায়, এই সময় করোনা আক্রান্তদের বাড়ি থেকে বর্জ্য আলাদাভাবে সংগ্রহ করা উচিত। কিন্তু বাস্তবে সেটা হয় না। সঠিক পদ্ধতি যোগাযোগ, কৌশলের মাধ্যমে প্লাস্টিক দূষণ হ্রাস করার লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।