ম্যাঞ্চেস্টার: ফের জঙ্গি হামলায় রক্তাক্ত ব্রিটেন। ম্যাঞ্চেস্টার এরিনায় পপ কনসার্ট চলাকালীন আত্মঘাতী বিস্ফোরণ। নিহত ২২, আহত অন্তত ৫০। ঘটনার দায় স্বীকার করেছে আইএস। গ্রেফতার ২৩ বছরের এক সন্দেহভাজন।
সোমবার, ব্রিটেনে রাত তখন সাড়ে দশটা। ভারতীয় সময় রাত ৩টে। ২১ হাজার দর্শকাসনের ম্যাঞ্চেস্টার এরিনা মেতে উঠেছে মার্কিন পপ গায়িকা আরিয়ানা গ্রান্দের ছন্দে।
হঠাৎই বিকট আওয়াজে কেঁপে ওঠে ম্যাঞ্চেস্টারের সবচেয়ে বড় এই কনসার্ট হল। শিশু-মহিলা থেকে শুরু করে হাজার হাজার দর্শকের আনন্দের রাত। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সবেমাত্র শেষ হয়েছে কনসার্ট। সকলে গেট দিয়ে বের হচ্ছিলেন। এমন সময় বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা।
নিমেশে তখন আতঙ্কের আর্তনাদ। প্রাণে বাঁচতে যে যাঁর মতো ছুটতে শুরু করেন। ২১,০০০ দর্শকধারণে সক্ষম ভিড়ে ঠাসা ম্যাঞ্চেস্টার অ্যারেনা আর্তনাদে ভরে যায়। কয়েকহাজার মানুষ বাঁচার জন্য শুরু করেন ছোটাছুটি। রক্তে ভেসে যাওয়া অ্যারেনা থেকে প্রাণ বাঁচাতে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছোটেন মানুষ। তুমুল বিশৃঙ্খলার মধ্যেই ঘটনাস্থলে আসতে থাকে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স ও বম্ব ডিসপোজাল টিম।
পুলিশ জানিয়েছে, একটি নয়, পরপর দুটি বিস্ফোরণ হয়েছে। বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ২১ জন নিরীহ মানুষের। মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পায়নি আট বছরের শিশুও। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় বম্ব জিসপোজাল স্কোয়াড-সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী। এই কনসার্ট হলের কাছেই ভিক্টোরিয়া স্টেশন। হামলার আশঙ্কায়, সেখানে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ইংল্যান্ডে সাধারণ নির্বাচনের সপ্তাহ দুয়েক আগে, এই বিস্ফোরণের ঘটনা ব্রিটিশ সরকারের চিন্তা বাড়াল। জঙ্গি হামলার এই ঘটনাকে ‘ভয়াবহ’ আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা করেছেন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। বিস্ফোরণকে জঙ্গি হামলা বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। বলেছেন, ম্যাঞ্চেস্টার ঘৃণ্য হামলার শিকার হল। তিনি জানিয়ে দেন, যারা এই হামলায় জড়িতস তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
ব্রিটিশ পুলিশ সূত্রে খবর, আইইডি ব্যবহার করে বিস্ফোরণ ঘটায় আত্মঘাতী হামলাকারী। ম্যাঞ্চেস্টারে বিস্ফোরণের ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে মার্কিন পপ গায়িকা আরিয়ানা গ্রান্দে টুইটার হ্যান্ডলে লিখেছেন, আমার হৃদয় ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। আমি মর্মাহত। এই ঘটনার পরে কথা বলার ভাষা নেই।
ঘটনার নিন্দা করে হামলাকারীদের উদ্দেশে কটাক্ষের সুরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, আমি ওদের দৈত্যও বলব না। কারণ এটা ওদের পছন্দের নাম।
ব্রিটিশ পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার পরই বিভিন্ন সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটে উল্লাসে ফেটে পড়ে ইসলামিক স্টেট-এর সমর্থকরা। পরে হামলার দায় স্বীকার করে তারা। হামলায় শোকপ্রকাশ করেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তিনি বলেন, এটা বর্বরোচিত হামলা। ঘটনার নিন্দা করেছে রাষ্ট্রসংঘও।
ম্যাঞ্চেস্টারে হামলার নিন্দা করেছে ভারতও। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, আমি মর্মাহত। ম্যাঞ্চেস্টার হামলার ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা। এই দুঃসময়ে ভারত ব্রিটেনের পাশে রয়েছে।
ঘটনার নিন্দা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ট্যুইটারে লিখেছেন, ম্যাঞ্চেস্টারে হামলার ঘটনা বেদনাদায়ক। এর কড়া নিন্দা করছি। শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রীও। ট্যুইটারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ম্যাঞ্চেস্টারে নিরীহ মানুষের মৃত্যুতে শোকাহত। এরকম জঙ্গি হামলা কাপুরুষদের কাজ।
গত ২২ মার্চই জঙ্গি হামলায় রক্তাক্ত হয়েছে লন্ডন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাছে, ওয়েস্টমিনস্টার সেতুর ওপর একের এক পর এক নিরীহ মানুষকে বেপরোয়া গাড়ির চাকায় পিষে মারে এক জঙ্গি।
২০১৬-র ১৯ জুলাই, লিঙ্কনশায়ারে বন্দুকবাজের হামলায় মৃত্যু হয় সন্দেহভাজন-সহ ৩ জনের। লন্ডনে সবথেকে ভয়ঙ্কর নাশকতার ঘটনা ঘটে ২০০৫ সালের ৭ জুলাই। চারটি আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত হন ৫২ জন। আহত হন ৭০০-রও বেশি।
ম্যাঞ্চেস্টার এরিনায় বিস্ফোরণের ঘটনা মনে করিয়ে দিয়েছে বছর দেড়েক আগে, ফ্রান্সের জঙ্গি হামলার ঘটনা। ২০১৫’র নভেম্বর প্যারিসের বাতাক্লঁ প্রেক্ষাগৃহে চলছিল ‘ইগলস অফ ডেথ মেটাল’ নামে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ব্যান্ডের শো। তারই মাঝে জঙ্গিদের এলোপাথাড়ি গুলিতে প্রাণ হারান শতাধিক নিরীহ মানুষ।