নয়াদিল্লি: এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরেই আফগানিস্তানে স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল অত্যন্ত শোচনীয়।  গত দুই দশকে অত্যন্ত জরুরি এই পরিষেবা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর ছিল বিদেশি অনুদানের ওপর। কিন্তু আফগানিস্তান তালিবানের কব্জায় চলে যাওয়ার পর সেই অনুদানের ধারা কার্যত শুকিয়ে গিয়েছে। ফলে কার্যত বেহাল হয়ে গিয়েছে আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য পরিষেবা। চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে আফগানিস্তানের নবজাতকরা। অনেক শিশুই চরম অপুষ্টিতে ভুগছে। কারণ, বিদেশি আর্থিক সাহায্য ও চিকিৎসা সংক্রান্ত  সহায়তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একাই ৯.৫ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সাহায্য ফ্রিজ করে দিয়েছে। সেইসঙ্গে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড (আইএমএফ) ও ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তাও। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে এ কথা জানানো হয়েছে।


সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য পরিষেবার দুর্দশার বিষয়টি সামনে এসেছে। কাবুলের সরকারি হাসপাতাল কাবুলের ইন্দিরা গাঁধী চিলড্রেন হাসপাতালে অসুস্থ শিশুদের ভিড় লেগেই রয়েছে। এখানকার তিনটি ওয়ার্ডে উপচে পড়েছে অসুস্থ শিশুদের ভিড়ে। নেই পর্যাপ্ত রুম, বেড। একটা বেড বা ইনকিউবেটর বেডে রাখতে হচ্ছে একাধিক শিশুকে।  অসহায় মায়েরা মেঝেতে বসেই অসুস্থ শিশুকে দুগ্ধপান করাতে বাধ্য হচ্ছেন। 
এই পরিস্থিতিতে আক্ষেপ ঝরে পড়েছে ইন্দিরা গাঁধী চিলড্রেন্স হাসপাতালের পেটিয়াট্রিক্সের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর চিকিৎসক নুরুলহক ইউসুফজাইয়ের গলায়। গত ২৮ বছর ধরে এই হাসপাতালে কাজ করছেন তিনি। চিকিৎসক নুরুল হক বলেছেন, এই হাসপাতালে ৩৬০ টি বেড রয়েছে। কিন্তু প্রত্যেকদিন প্রায় ৫০০-র বেশি রোগী আসছে। আর প্রয়োজনীয় ওষুধই যদি না থাকে, তাহলে তো অসুস্থ শিশুদের বাঁচিয়ে রাখাই ভার। বাস্তবে তেমনটাই হচ্ছে। 


এই হাসপাতালে বিশেষ করে নবজাতকদের চিকিৎসা হয়। সেই সঙ্গে ১৪ বছর পর্যন্ত বয়সীদেরও এখানে চিকিৎসা করা হয়।  সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, এই হাসপাতালে যারা ভর্তি রয়েছে, তাদের একটা বড় অংশই চরম অপুষ্টিতে ভুগছে। 


নুরুল হক বলেছেন, অপুষ্টির শিকার রোগীদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। আর এখন তো অনেকেই হাম নিয়ে ভর্তি হচ্ছে। কারণ, টিকাকরণ কর্মসূচী বেহাল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে  বড় বিপর্যয়ের ব্যাপার হল, দারিদ্র। পর্যাপ্ত খাদ্য না পেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়বে। অর্থনীতির হাল দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। আর এর ফলে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে শিশুদের। 


এর ওপর বেশিরভাগ মানবিক সাহায্যই আর ফিরছে না। অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের হিসেব অনুযায়ী, যুদ্ধবিদ্ধস্ত আফগানিস্তানের প্রায় ৮৭ লক্ষ মানুষ কার্যত দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতির মুখে পড়েছে।